সিলেটে ১৪ শ্রমিকের মৃত্যু : সড়কপথ সুরক্ষা কত দূর?

ছবি- সংগৃহীত।

প্রতিদিন সড়কে প্রাণহানির খবর আমরা গণমাধ্যমে পাচ্ছি। সড়কে এই লাশের মিছিল কে থামাবে? প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দফায় দফায় নির্দেশ জারি, নতুন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ সত্ত্বেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

সর্বশেষ গত বুধবার সকালে সিলেটের নাজিরবাজারে বালুবাহী ট্রাক এবং নির্মাণ শ্রমিকবাহী পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ইতোমধ্যে ১৪ জন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন।

আরো পড়ুন :

> জন্মদিনের ছবিতে আপত্তিকর মন্তব্যের মুখে তানজিন তিশা
> মেসি যে কারণে মায়ামির

এটি একটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। হতাহতরা সবাই শ্রমজীবী দরিদ্র মেহনতি মানুষ। সিলেট মহানগর থেকে পিকআপে করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ নির্মাণশ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন।

বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছালে মুনশীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ হারিয়েছেন সন্তান আবার কেউবা ভাই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। আশার কথা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে নিহত শ্রমিকদের প্রতিটি পরিবারকে ২ লাখ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসায় প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে সরকার।

সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস।

এছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর অনুমোদন দিয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা, ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই কোথাও। ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেই।

দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা, জরুরি ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনাহীনতাও দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে দায়ী। বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর দৃষ্টিতে সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ।

সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, উন্নয়নশীল বা মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে শামিল হওয়া বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা এখনো বিশৃঙ্খলই রয়ে গেছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এজন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।

জুন ০৯, ২০২৩ at ১০:৫০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর