নিগারের নেতৃত্বে অগ্রগামী বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট

ছবি- সংগৃহীত।

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সঙ্গে তিনি ব্যাট হাতেও দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন অসংখ্যবার। জাতীয় দলের পাশাপাশি নিগার খেলছেন এবারের আসরে ঢাকা প্রিমিয়ার নারী ক্রিকেট লিগের দল রূপালী ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদের হয়ে।

টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেই তিনি দলকে সেঞ্চুরি উপহার দেন। ২০২২ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত নিজের ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে নিগার গত রবিবার বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটার হিসেবে পুরস্কৃত হন।

আরো পড়ুন :

> রেমিট্যান্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত করছে বিএনপি
> বলিউডে নতুনদের কোনো সুরক্ষা দেওয়া হয় না

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে নিগার সুলতানা জ্যোতির যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে তাকে ওয়ানডে দলে মাঠে আনা হয় একই বছরের অক্টোবরে। এরপর থেকে নারী ক্রিকেটে একের পর এক মাইলফলক স্পর্শ করে চলেছেন এই ক্রিকেটার। বিশ ওভারের ম্যাচে তার সর্বোচ্চ অর্জন তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে এসে সর্বোচ্চ ২৩৬ রানের জুটি গড়া।

নারী টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিন নম্বরে নেমে এতবড় জুটি কেউ গড়তে পারেননি। নিগারের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে রয়েছে একটি সেঞ্চুরি, যা ১১৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। ক্যারিয়ারের ৭৬টি ম্যাচে তার মোট রান ১৪৬১। ওয়ানডে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ৭৩ রানের। ক্যারিয়ারের ৩৫ ম্যাচে তার মোট রান ৬৪৮।

জাতীয় দলের হয়ে জ্যোতি সেঞ্চুরি করতে না পারলেও ঢাকা প্রিমিয়ার নারী ক্রিকেট লিগের উদ্বোধনী ম্যাচেই কাক্সিক্ষত তিন অঙ্কের দেখা পান। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে তিনি গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের বিপক্ষে ব্যাটিং করতে নেমে ৭৬ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে নিগারের দল রূপালী ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদ। শুরু থেকেই জ্যোতি নির্ভয়ে ব্যাট চালিয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন। দ্রুতগতিতে রান তুলতে গিয়ে তিনি মাঝে মাঝে ডিফেন্স করে অবস্থান শক্ত করে নেন। ৪৪ বলে তিনি অর্ধশত রানে পৌঁছে আরো আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন। এরপর শতরান পর্যন্ত পৌঁছাতে এই অভিজ্ঞ ব্যাটার খরচ করেন মাত্র ৩২ বল। সেঞ্চুরি করার পথে টাইগ্রেস অধিনায়ক ১২টি বাউন্ডারি হাঁকান। তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে রূপালী ব্যাংক ২৮৬ রানের সংগ্রহ গড়ে। পরবর্তী সময়ে নিগারের দল ১৪৮ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।

এর আগে নিগারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে ৯ বছর পর লঙ্কান নারীদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে জয় পায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতেই জিতেছিল তারা ২০১২ ও ২০১৪ সালে। এরপর টানা সাতটি ম্যাচে ধুঁকতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

লঙ্কানদের জয়ের ধারায় নিগারের নেতৃত্বেই ছেদ আনতে পারে বাংলাদেশ। টাইগ্রেস ওপেনাররা রান তাড়ায় শুরুটা ভালো করতে না পারলেও তৃতীয় উইকেট জুটিতে সোবহানা মোস্তারিকে নিয়ে দলের হাল ধরেন নিগার। পাওয়ার প্লের মাঝামাঝিতে নেমে তিনি শেষ পর্যন্ত ৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। সেই ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন নিগার। অর্ধশত রানে পৌঁছাতে তার খরচ হয়েছিল ৩৬ বল, যেখানে ছিল ৬টি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি ছক্কা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে ব্যাট হাতে নিগার সুলতানার দারুণ পারফরম্যান্সের প্রতিফলন পড়েছে র‍্যাঙ্কিংয়ে। এই সংস্করণে ব্যাটারদের র‍্যাঙ্কিংয়ে চার ধাপ এগিয়ে বর্তমানে তার অবস্থান আইসিসি নারী ব্যাটারদের তালিকায় ১৮তম স্থানে। প্রথম ম্যাচে ৭৫ রানের ইনিংসসহ তিন ম্যাচ মিলিয়ে তার মোট রান ছিল ১১৩, যা ছিল সিরিজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর।

ওয়ানডে সংস্করণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ব্যাটার র‍্যাঙ্কিংয়ে টাইগ্রেস অধিনায়কের অবস্থান ৩৫তম স্থানে। তার মোট রেটিং পয়েন্ট ১৪৩। জাতীয় দলে জার্সি গায়ে তিনি সাধারণত উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্যাট হাতে দলকে যেমন তিনি জয়ের পথে নিয়ে যান, বোলিং ইনিংসেও তিনি উইকেটের পেছনে নীরবে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের সাজঘরে ফেরানোর লক্ষ্যে থাকেন।

নারী ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে নিগার এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩টি স্টাম্পিং করে আইসিসির রেকর্ড বুকে সেরা তিনে জায়গা করে নিয়েছেন। নারীদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনে নামা ব্যাটার হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ ১১৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে আইসিসির রেকর্ড বুকে চার নম্বরে অবস্থান করছেন। তিনে নামা ব্যাটারদের তালিকায় শীর্ষে আছেন বাাহরাইনের রাসঙ্গিকা, তিনি খেলেছেন সর্বোচ্চ ১৬১ রানের অপরাজিত ইনিংস। ১৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তালিকার দুইয়ে আছেন ইংলিশ ব্যাটার ল্যানিং। ১২৬ রানের ইনিংস খেলা অজি নারী ব্যাটার ল্যানিং আছেন তালিকার তিনে। নারীদের ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনালে এই পর্যন্ত অধিনায়ক হিসেবে নামের পাশে ১০ উইকেট যোগ করে তিনি আইসিসির তালিকায় ছয় নম্বরে আছেন।

মে ৩০, ২০২৩ at ১৩:৩৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর