সুষ্ঠু ভোটে সন্তোষ প্রকাশ স্থানীয়দের

কোনো ধরনের অনিয়ম, কারচুপি ও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই গাজীপুর সিটি করপোরেশনে (গাসিক) অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সব ধরনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও উত্তাপ উড়িয়ে দিয়ে বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া সুন্দর, সুশৃঙ্খলভাবে ভোট শেষ হওয়ায় স্থানীয়রাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনও সামর্থের প্রমাণ দিয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য দুইদিন আগে থেকেই গাজীপুরে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থান সুষ্ঠু ভোটের আভাস মিলছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকেই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এই নির্বাচনে ৪৮০টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া হয়। সকাল পৌনে ৯টার দিকে ৫৭নং ওয়ার্ডে টঙ্গীর আরিচপুর মসজিদ রোডের দারুস সালাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খান।

আরো পড়ুন :
> সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের প্রক্সি মা জায়েদার চমক
> গাজীপুর সিটি নির্বাচন: আজমতকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা বিজয়ী

ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জনগণের ভালোবাসা থেকে আমি বলতে পারি, জয়-পরাজয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আমি বিশ্বাস করি, ফয়সালা আসমান থেকে হয়। আল্লাহ যা চান তা জনগণের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে সকাল থেকে মানুষ ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং একটি সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচন গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটের যে কোনো ফলাফল অবশ্যই মেনে নেব।

এছাড়া সকাল ১০টার দিকে কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের

মা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। এ সময় তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমও ভোট দেন। ভোট দেয়ার পর জায়েদা খাতুন বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। সুষ্ঠু ভোট হলে নির্বাচনী ফলাফল যাই হোক তা মেনে নেব। যদিও তিনি বিভিন্ন কেন্দ্রে তার এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছিল বলে এ সময় অভিযোগ করেন। বিএনপি ঘরানার প্রার্থী সরকার শাহানুর ইসলাম রনিও ভোট নিয়ে কোনোরকম শঙ্কা প্রকাশ করেননি। বলতে গেলে মোটামুটি সব প্রার্থীই সারাদিন ভোট কেন্দ্র ঘুরে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রায় অভিন্ন কথা বলেছেন।

এদিকে, গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন থেকে গাজীপুর সিটির ভোট সিসিটিভিতে মনিটরিং করে দুইজনকে আটকের নির্দেশনা দেয় ইসি। এটিও ছিল মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের আরো একটি বার্তা। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন যে সুষ্ঠু নির্বাচনে কোনোরকম অনিয়ম বরদাস্ত করেননি, এটি আরো একটি বার্তা বহন করে।

সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণার পর প্রচার প্রচারণা চলাকালে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হয়।

নির্বাচনের দুই দিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তদারকির দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার আলমগীর হোসেন বলেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা তৈরি করলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারই একটি নমুনা দেখা গেল নির্বাচনের একদিন আগে বিতর্কিত একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। একজন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলের এই বার্তা গতকাল অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু ভোটের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

গাজীপুর জেলা নাগরিক অধিকারের সভাপতি এডভোকেট জালাল উদ্দিন বলেন, ছোটখাটো দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া খুব সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটারদের সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ইসি একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন গাজীপুরবাসীকে উপহার দিয়েছেন। এজন্য নির্বাচন কমিশন ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমরা স্থানীয়রাও যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ছিলাম, সুষ্ঠ ভোটের মধ্য দিয়ে এর অবসান ঘটলো।

গাজীপুর জেলা টিআইবির সদস্য অধ্যাপক মুকুল কুমার মল্লিক বলেন, খুব সুন্দর একটি নির্বাচন হয়ে গেল। ভোটাররাও সুশৃঙ্খলভাবে সারাদিন ধৈর্যসহকারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। আমরা চাই, ভোটারদের রায়ের মধ্যদিয়ে বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন ঘটুক। আমরা সবাই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ শহর গড়তে চাই। মিলেমিশে বসবাস করতে চাই।

প্রসঙ্গত, গতকাল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৮০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। এ নির্বাচনে ৩৩৩ জন প্রার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৭ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে এই নগরের এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৭ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৮ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ছিল ১৮ জন।

মে ২৬, ২০২৩ at ১০:২৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর