প্রচারযুদ্ধ শেষ, ভোটের অপেক্ষা: উৎসবমুখর গাজীপুর

ছবি- সংগৃহীত।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা যুদ্ধ শেষ। এবার ব্যালটের লড়াই দেখার অপেক্ষা। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোট। ভোটার ও আয়তন বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় এ সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী ৮ জন।

এর মধ্যে রয়েছেন- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা, জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির রাজু আহমেদ ও গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম। এছাড়া ৩ স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হলেন- সরকার শাহানুর ইসলাম, জায়েদা খাতুন ও হারুন অর রশিদ। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে খানিকটা আলোচনার খোরাক জুগিয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। যে কারণে সবারই নজর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিকে।

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা গতকাল সারাদিন শোডাউনে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। বিশেষ করে মেয়র পদে প্রধান চার প্রতিদ্ব›দ্বী নৌকার আজমত উল্লা খান ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা টেবিল ঘড়ি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন, লাঙ্গলের নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখার আতাউর রহমান ও হাতি মার্কা নিয়ে বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনিসহ সব প্রার্থীই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। অন্যদিকে দলীয় নেতাকর্মীরাও গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও যেসব জায়গায় তুলনামূলকভাবে কম প্রচারণা হয়েছে সেসব জায়গায় ছুটে গেছেন। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে গাজীপুরে ছুটে এসেছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। নিজ নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়ে গাজীপুরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন তারা। শেষ মুহূর্তের প্রচারণার ব্যস্ততায় যেন নাওয়া-খাওয়াও ভুলে গেছেন প্রার্থী-নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকরা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমানতালে চলছে প্রচার-প্রচারণা।

আরো পড়ুন :
> সনদ জালিয়াতি: ৬৭৮ শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির নির্দেশ, ফেরত দিতে হবে বেতন-ভাতা
> বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সমাবেশ না করতে দেওয়ার হুঁশিয়ারি যশোর আ. লীগ সভাপতির

টঙ্গী ও জয়দেবপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সর্বত্রই নির্বাচনী আমেজ। মাইকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে বিরতিহীন প্রচারণার শব্দে রাস্তায় কান পাতা দায়। পোস্টারে পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে শহরের রাজপথ ও অলিগলি। পোস্টার দেখেই ৪২৫টি ভোটকেন্দ্র সহজেই চিহ্নিত করা যায়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সামনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারের ছড়াছড়ি। প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের বিলি করা লিফলেটও পৌঁছে যাচ্ছে ভোটারদের হাতে হাতে। সবমিলিয়ে গাজীপুরের সবত্রই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রচারণা শেষে ফলাফল বিশ্লেষণে ব্যস্ত প্রার্থী, ভোটার ও প্রার্থীর সমর্থকরা।

এদিকে গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান নিজ বাড়ি মধুমিত রোডে ও আশপাশের এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালান। তিনি নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

এ সময় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ ওই পথসভায় যোগ দেয়। এ সময় নৌকার পক্ষে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। অন্যদিকে জায়েদা খাতুনও নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন গতকাল। তিনি তার নিজ বাড়ি হারিকেন এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড়, গণগ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে জানান। তিনি ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার দাবি জানান।

নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে মোতায়েন করা হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। গতকাল গভীর রাত থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে টহল দিতে শুরু করেছে বিজিবি। ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন নির্বাচন কমিশনার আলমগীর হোসেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসন কঠোর নজরদারি করছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের আগের দিন আজ বুধবার থেকে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসারসহ প্রায় ১০ হাজার নিরাপত্তা কর্মী মাঠে থাকবে। এর মধ্যে ৫৭ ওয়ার্ডে ৭৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। র‌্যাবের ৩০ টিম, বিজিবিরি ১৩ প্লাটুন, পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স ১৯টি ও মোবাইল টিম ৫৭টি থাকবে নির্বাচনী নিরাপত্তার দায়িত্বে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবে। এই নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, ভোটকক্ষ ৩৪৯৭টি। প্রিসাইডিং ৪৮০ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৩৪৯৭ জন। পোলিংসহ ১০ হাজার ৭১ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা থাকবেন। আজ বুধবার দুপুর থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম ও ভোটবাক্সসহ যাবতীয় নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হবে। এই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মোট ৮ জন, এছাড়া ২৪৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৭৯ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

যান চলাচলে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৩ মে রাত ১২টা থেকে ২৫ মে রাত ১২টা পর্যন্ত গাজীপুর সিটির নির্বাচনী এলাকায় (মহাসড়ক ব্যতীত) বেবিট্যাক্সি, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ ভ্যান, বাস, ট্রাক, টেম্পো, ইজিবাইক এবং নৌপথে লঞ্চ, ইঞ্জিনবোট, স্পিডবোটসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া আজ ২৪ মে রাত ১২টা থেকে ভোটগ্রহণের পরের দিন অর্থাৎ ২৬ মে সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে রিটার্নিং অফিসারের অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক, সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট এবং কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক টেলিযোগাযোগ ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে এবং জাতীয় হাইওয়ে সমূহের উপর দিয়ে চলাচলরত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।

মে ২৪, ২০২৩ at ১০:২৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর