চৌগাছার বেড়গোবিন্দপুর বাওড়ের ব্রিজ এবং সংযোগ সড়ক সরু হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

যশোরের চৌগাছার বেড়গোবিন্দপুর বাওড়ের উপর নির্মিত ব্রিজ সরু হওয়ায় গ্রামবাসিকে ঝুকি নিয়ে চলাচর করতে হচ্ছে। এখানে বসবাসরত হাজারও নারী পুরুষ শিশুদের উপজেলা সদর এমনকি জেলা শহরে যেতে বাওড় পার হতে হয়। গ্রামের মানুষের কথা বিবেচনা করে নতুন একটি ব্রিজ নির্মানের পাশাপাশি ব্রিজের দুই পাশের সংযোগ সড়ক দ্রæত পাকা করনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসি।

চৌগাছা উপজেলার ১৬১টি গ্রামের মধ্যে অন্যতম একটি গ্রাম হচ্ছে বেড়গোবিন্দপুর। নানা করনে এই গ্রামের যথেষ্ঠ সুনাম রয়েছে। বিশেষ করে দ্বীপ গ্রাম বলে পরিচিত বেড়গোবিন্দপুর। কেননা একটি বাওড় গ্রামের চারপাশ ঘিরে রেখেছে। চারপাশে বাওড় আর মাঝ খানে গ্রাম, এই গ্রামের নামানুসারে বাওড়ের নামকরণ হয় বেড়গোবিন্দপুর বাওড় জানান স্থানীয়রা। উপজেলা সদরের দক্ষিনে অবস্থিত বেড়গাবিন্দপুর গ্রাম। চৌগাছার ছুটিপুর বাসস্টান্ড হতে যাত্রা শুরু করে ঐতিহ্যবাহি কুঠিপাড়া মোড় ঘুরে সোজা দক্ষিনে যেতে হয়।

এই গ্রামে প্রায় আট হাজার মানুষের বসবাস। যার অধিকাংশই সরাসরি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। এখানকার মানুষের উপজেলা সদরে আসতে হলে পার হতে হয় বাওড়। এক সময় সাঁকো দিয়ে তারা পার হয়েছে, সেই কষ্ট এখন নিবারণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাওড়ের উপর নির্মিত ব্রিজটি অত্যান্ত সরু হওয়ায় মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। সেই সাথে ব্রিজের দুই পাশের সংযোগ সড়কও চলাচলের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে মানুষসহ ছোটবড় যানবাহন চলাচল করছে।

শনিবার (২০ মে) দুপুরে সরেজমিন যেয়ে দেখা যায়, সড়কে চলাচলরত মানুষের সীমাহিন কষ্ট। এ সময় কথা হয় ভ্যান চালক আনছার আলীর সাথে। তিনি বলেন, বাওড় ঘেরা গ্রামের মানুষের কষ্টের কোন শেষ নেই। ব্রিজটি সরু আর সড়কও সরু। ভিষন কষ্টে আমাদের প্রতিদিন চলাচল করতে হচ্ছে। অপর ভ্যানচালক আবুল কালাম বলেন, ব্রিজে কোন বড় যানবাহন উঠলে পাশে দাঁড়াতে হয়। সংযোগ সড়কের যে বেহালদশা সেখানেও দাঁড়াতে পারিনা, তাই একটি বাহন আর একটি বাহনকে সাইড দিতে যেয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্র জনি আহমেদ বলেন, কষ্টে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার সুখ কোথায় ? বাবা দাদারা কষ্ট করে সাঁকো পার হয়েছেন আর আমরা ভাঙ্গা রাস্তা আর সরু ব্রিজ পার হচ্ছি।

আরো পড়ুন :
>> অভয়নগরে মাদ্রাসা শিক্ষক তোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের শোক
>> ভূঞাপুরে কিশোরীকে দিয়ে দেহব্যবসা, স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার

এই কষ্ট কবে নিবারণ হবে জানিনা। অর্নাস পড়–য়া ছাত্রী আজরা খাতুন বলেন, সরু ব্রিজ আর ভাঙ্গা সড়ক পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন কলেজে যেতে হয়। বাওড় পাড়ে এলে ভিষণ ভই লাগে তারপরও ঝুঁকি নিয়ে আমরা চলাচল করিছ। গ্রামের গৃহীনি রওশনয়ারা বলেন, সরু ব্রিজ আর ভাঙ্গা সড়ক দিন দিন গলার কাটায় পরিনত হয়েছে। একজন মানুষ অসুস্থ্য হলে ব্রিজে উঠা আর নামার পর তার যে কষ্ট হয় শুধু মাত্র ওই অসুস্থ্য ব্যাক্তিই এই কষ্টের কথা বলতে পারবেন।

তাই দ্রæত সড়ক পাকা করনের পাশাপাশি সরু ব্রিজ ভেঙ্গে একটি বড় ব্রিজ নির্মান করা জরুরী। কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, এই গ্রামে অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের সাথে জড়িত। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করেন। কৃষকের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে অসহনিয় কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে কৃষক।

বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ৮৫ বছর বয়সের সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এখনও মুদি ব্যবসা করেন সংসার চালান। তিনি জানান, দেশ স্বাধীনের আগেও বাওড় পারাপারে সাঁকোই ছিলো আমাদের একমাত্র ভরসা। গ্রামের মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে প্রায় দুই দশক আগে বাওড়ের উপর একটি ব্রিজ নির্মান করা হয়। কিন্তু ব্রিজটি অত্যান্তু সরু ভাবে নির্মানের ফলে মানুষ এর সুফল পাচ্ছেনা, বরং দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ব্রিজটি ভেঙ্গে ওই স্থানে একটি নতুন ব্রিজ নির্মান করার পাশাপাশি সংযোগ সড়ক দুইটি প্রসস্থ্য করে পাকা করণের দাবি গোটা গ্রামবাসির।

মে ২০, ২০২৩ at ১৪:৪৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোমই/শাস