সামরিক স্থাপনায় হামলার নিন্দা ইমরানের, তদন্তের দাবি

ছবি- সংগৃহীত।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান দেশটির সামরিক বাহিনীর স্থাপনায় হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। হামলার তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার লাহোরের জামান পার্ক এলাকার নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খান বলেন, সম্প্রতি পাকিস্তানজুড়ে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় যে হামলা হয়েছে— সবাই তার নিন্দা করছে; আমিও নিন্দা জানাচ্ছি; কিন্তু দুঃখজনক হলো এই হামলার জন্য উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে পিটিআইকে দায়ী করা হচ্ছে।

গত ২৭ বছর ধরে রাজনীতি করছি। এই গোটা ক্যারিয়ারে আমি কি কখনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের পক্ষে কোনো কথা বলেছি? আমি বরাবরই আইন ও সাংবিধানিক কাঠামোর মেনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-আন্দোলনের পথে পিটিআইকে চালিত করেছি।

গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে দু’টি মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে এসে গ্রেপ্তার হন ইমরান খান। পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী ও আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো’র (ন্যাব) একটি যৌথ দল আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্ট ভবন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

আরো পড়ুন :
> অপহরণের পর অনলাইনে চক্রটি শিশু বি‌ক্রি করত
> পর্যটনের নতুন আকর্ষণ বদলে যাওয়া আসাম বস্তি-কাপ্তাই সড়ক

এদিকে ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই নজিরবিহীন বিক্ষোভ শুরু হয় পাকিস্তানে। দেশটির চার প্রদেশের শহরে শহরে বিক্ষোভ শুরু করেন পিটিআই কর্মীরা। পাশাপাশি এ সময় লাহোর, পেশোয়ার, করাচিসহ বিভিন্ন শহরে সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। লাহোর সেনানিবাসের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অনেক সেনা কর্মকর্তার বাসভবনেও হামলা হয় এ সময়।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার ১১ বছর পর ১৯৫৮ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান আইয়ুব খানের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। তারপর গত ৬৫ বছর ধরে কখনও সরাসরি, কখনও বা আড়ালে থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করছে সামরিক বাহিনী। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এই প্রথম সামরিক বাহিনীর স্থাপনায় হামলার ঘটান ঘটল।

সামরিক বাহিনীর অবশ্য এ ব্যাপারটিকে খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। প্রাথমিক উত্তেজনা কেটে যাওয়ার পর সেনাপ্রধান আসিম মুনির জানিয়েছেন, যারা হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে— তাদেরকে সামরিক আইনের আওতায় বিচার করা হবে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে দেশজুড়ে অভিযানও শুরু হয়েছে পাকিস্তানে।

তবে লাহোরের সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খান দাবি করেছেন— সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার কোনো ‘বিরোধ’ নেই; প্রকৃতপক্ষে তিনি ‘ভুল বোঝাবুঝির’ শিকার।

‘অন্যপক্ষের (সামরিক বাহিনী) সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু আমি জানি না, কেন তারা আমার প্রতি বৈরী মনোভাব পোষন করছে,’ সংবাদ সম্মেলনে বলেন ইমরান খান।

স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির দাবি

সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই চেয়ারম্যান দাবি করেন, সামরিক বাহিনীর স্থাপনায় হামলার জন্য ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)নেতৃত্বাধীন জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)। একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা হলে ‘প্রকৃত সত্য’ বেরিয়ে আসবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

‘পিডিএম পাকিস্তানের রাজনীতিতে পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সামরিক স্থাপনায় হামলাও সেই ষড়যন্ত্রের অংশ। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই— একটি নিরপেক্ষ স্বাধীন কমিটির মাধ্যমে এসব ঘটনার তদন্ত করা হোক। তাহলেই প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।’

বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে নির্বাচন ব্যতীত অন্য কোনো ইস্যুতে পিএমএলএনের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতে চান না বলেও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পিটিআই চেয়ারম্যান। যদি সংলাপ হয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচন সংক্রান্ত ইস্যুতেই তা হবে। অন্য কোনো বিষয় বা ইস্যুতে নয়।

মে  ১৯, ২০২৩ at ১৭:৩৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর