জুনে বিদ্যুতের ঘাটতি ১ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসবে

ছবি- সংগৃহীত।

কেন্দ্রীয়ভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় সারাদেশে লোডশেডিং চলছে। সবগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ পিডিবির কাছ থেকে না পাওয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহে ঘাটতি হচ্ছে। ফলে জনভোগান্তি বেড়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী জুন মাসে বিদ্যুতের ঘাটতি ১ হাজার মেগাওয়াট কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট পূর্ণ উৎপাদনে আসার পর সার্বিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় উন্নতির আশা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ ঘাটতিতে সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় রয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। পল্লী বিদ্যুতের ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। কখনো কখনো এই ঘাটতির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। ৮২টি সমিতির মধ্যে বেশির ভাগেরই অবস্থা নাজুক। বিভিন্ন জেলা শহরের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রাজধানী ঢাকাকে আলোকিত রাখতে পল্লী বিদ্যুৎ ও অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিতে পিডিবি কম পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বাস্তবে ঢাকাতে বিদ্যুৎ বিতরণকারী দুটি কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। ডেসকোর প্রতিদিন ১ হাজার ১৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে।

আরো পড়ুন :
> ২২ মে কাতার যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
> বড় পরিবর্তনের আভাস আ.লীগে

পিডিবি থেকে পাচ্ছে ৮৩৫ মেগাওয়াট। দিনের বেলায় ৩২২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে, তবে রাতে লোডশেডিং কমে। অপরদিকে ডিপিডিসির প্রতিদিন ১ হাজার ৬৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। পিডিবি থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে। এখানে প্রায় ৪৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘটতি রয়েছে। দিনের ও রাতের বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। অন্যসব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর অবস্থাও একই রকম। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ বিভাগ চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। তখন আশা করা হয়েছিল, গ্যাস থেকে ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েল থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য উৎস থেকে ১ হাজার মেগাওয়াটসহ মোট ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতেই চাহিদা মিটবে। কিন্তু গ্যাস, এলএনজি ও কয়লা সংকটসহ বিভিন্ন কারণে এই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা মুখ থুবড়ে পড়ে। পিডিবি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে।

তবে এখন ঘাটতি কমানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানান, আগামী মাসে বিদ্যুতের ঘাটতি ১ হাজার মেগাওয়াটে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শিগগিরই শুরু হবে। তাছাড়া দ্বিতীয় ইউনিট জুনেই উৎপাদনে আসছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করলে জাতীয় গ্রিডে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। এতে ঘাটতি কমবে এবং লোডশেডিংও কমবে। দেশীয় কয়লা ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে কয়লা সংকটও কমে আসবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানিতে সমস্যা হয়। তবে এখন সরকার কয়লা আমদানিতে প্রয়োজনীয় ডলার ছাড় দিতে উদ্যোগ দিয়েছে। এর ফলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে আর কয়লা আমদানিতে সমস্যা হবে না। জুনে রামপালের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে দুটি ইউনিট চালাতে প্রতিদিন ১০ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এজন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে ৬ লাখ টন কয়লা কেনার ক্রয়াদেশ দেয়া হয়েছে। পাইপলাইনে আরো ৬০ লাখ টন কয়লা কেনার প্রক্রিয়া চলছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র গত ৪ মাসে তিনবার বন্ধ হলেও ভবিষ্যতে যেন আর কোনো সংকট সৃষ্টি না হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। একইভাবে সংকট এড়াতে কয়লাচালিত পায়রা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম বলেন, দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখতে হলে বিদ্যুৎ সেক্টরকে সচল রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় জ্বালানি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানির জন্য পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে। আমার মনে হয় আমাদের পরিকল্পনায় ঘাটতি আছে। এ কারণেই কয়লার অভাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বারবার হোঁচট খাচ্ছে। পরিকল্পনা না নিলে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রেও সমস্যার সৃষ্টি হবে। বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট শুরু হওয়ার সঙ্গে জার্মানিসহ উন্নত দেশগুলো পরিকল্পনা নিয়েছে। আমাদেরও এখনই বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে।

মে  ১৯, ২০২৩ at ১০:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর