নির্বাচনী বছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর

ছবি- সংগৃহীত।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের সুদ ব্যয়ে বরাদ্দ থাকতে পারে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকিতে বরাদ্দ বেড়ে হতে পারে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা; এটি পরিবর্তনও হতে পারে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ১২% বেশি। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেট ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করে কিছুটা কমানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব আদায় বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। এগুলো মোকাবিলা ও সমন্বয় করে নির্বাচনের বছরে কীভাবে ব্যয় সমন্বয় করা যাবে, তা নিয়ে বাজেটের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগামী বছরের জন্য চূড়ান্ত করা বাজেটে অনুমোদন দিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার ব্যয় সংবলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন এডিপি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় প্রায় ১৬% বেশি এবং মূল এডিপির তুলনায় ৭% বেশি। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরেও দেশের সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে।

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১ জুন অনুষ্ঠিত হবে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক। জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এই বিশেষ বৈঠক। মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য সম্মতিসূচক সই করবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানিয়েছে, আগামী ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন। দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ১ জুন বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে জাতীয় সংসদে। এর আগে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন ১ জুন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ দেশের প্রথম বাজেট (৭৮৬ কোটি টাকা) জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন ৩০ জুন।

এ বছর জুনের শেষ দিকে ঈদ-উল-আজহার ছুটি থাকবে। তাই আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস হতে পারে জুন মাসের শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে। জানা গেছে, আগামী ২৫ জুন রবিবার সংসদে বাজেট পাস হতে পারে। যদিও জুনের ১ তারিখে বাজেট উপস্থাপিত হলে আলোচনার সময় বেশি পাওয়া যায়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় বৈঠক ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৫% ধরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে বাজেট চূড়ান্ত করার আগে বাজেট ঘাটতি একটু বাড়িয়ে ৫.৩% এবং প্রবৃদ্ধির হার একটু কমিয়ে ৭.৩% করা হতে পারে।

জানা গেছে, সার্বিকভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের সুদ ব্যয়ে বরাদ্দ থাকতে পারে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর এটি বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে। বিপুল ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছর কৃষি খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারের শেষ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নতুন করে ৭ লাখ ৩৫ হাজার জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এটাকে নির্বাচনী বাজেটও বলা যায়। ৮ বছর পর এবারের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে সব মহলে আলোচনা হচ্ছে। অনেকের ধারণা, নির্বাচনী বছরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য হয়তো কোনো সুখবর থাকতে পারে। সরকারপ্রধান হয়তো আলাদাভাবে সেটি ঘোষণা করবেন।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য তা বাড়িয়ে ৫ লাখ কোটি টাকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেই (এনবিআর) সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

মে  ১৮, ২০২৩ at ১২:১৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর