ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগে বাবা-ভাইকে নির্যাতন, রুমা গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের মধুখালিতে ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবা ও সৎ ভাইকে স্কুলকক্ষে আটকে নির্যাতনের ঘটনায় মূলহোতা রুমা বেগমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে মধুখালি থানার পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৬ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মধুখালি উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের মাঝকান্দি মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রুমা বেগম উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের মাঝকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।

এ ব্যাপারে বুধবার (১৭ মে) দুপুর ১টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবদুল্লাহ বিন কালাম।

লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, স্কুল কক্ষে আটকে বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় ২৫ মার্চ। ওই ভিডিও ফুটেজে রুমাকে খুব উত্তেজিত হয়ে বাবা ও ছেলেকে মারধরের হুকুম দিতে দেখা যায়। রুমার নির্দেশেই তার আপন ভাই কুতুবউদ্দিনসহ (৩৬) আট দশ জন মিলে এই নির্যাতন চালায়। ভিডিওর ফাঁকে ফাঁকে রুমা ভুক্তভোগী ইয়ামিন মৃধা ও তার ছেলে রাজন মৃধাকে উদ্দেশ্য করে ‘আজ রেজিস্ট্রি করে দিয়ে যাবি, তোর মেয়েকে ম্যাডামের কাছে রাখবি।’ কথাগুলো বলেন।

তিনি বলেন, গত ২৫ মার্চ ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ভিডিওতে দেখা প্রায় সবাইকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হলেও রুমা বেগম বোনের বাড়িসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। কখনও সাতক্ষীরা, কখনও ঝিনাইদহ থেকেছেন। সর্বশেষ গতকাল মাগুরা থেকে মধুখালি আসার পথে মাঝকান্দি মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মূলত আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ছাত্রীকে খুব স্নেহ করতেন ওই বিদ্যালয়ের নিঃসন্তান স্কুল শিক্ষিকা ইসরাত জাহান। ওই ছাত্রী জন্মের সময় তার মাকে হারায়। এজন্য শিক্ষিকার ওই ছাত্রীর প্রতি আলাদা ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে শিক্ষিকা ইসরাত স্কুলছাত্রীর বাবা ও সৎ ভাইকে না জানিয়ে ওই ছাত্রীকে ফরিদপুরে তার বাসায় এনে রাখতেন। এ বিষয়টি ওই ছাত্রীর বাবা ও সৎ ভাই মেনে নিতে পারেনি।

গত ১৭ মার্চ শিশুটিকে শিক্ষিকার ফরিদপুরের বাসা থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার নাম করে ওই শিক্ষিকা শিশুটির বাবা ও সৎ ভাইকে আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেকে আনেন। এরপর এক নারীসহ স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সহায়তায় তাদের স্কুলের একটি কক্ষে আটকে মধ্যযুগীয় পন্থায় নির্যাতন করে। এই ভিডিওটি পরে ভাইরাল হয়।

ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায় নির্যাতনের শিকার দুজন হলেন, কামারখালী ইউনিয়নের রউফনগর গ্রামের ইয়ামিন মৃধা রাজু (৪০) ও তার ছেলে রাজন মৃধা (১৫)। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে তাদের মারধরের মূল নির্দেশ ও দ্বায়িত্ব পালন করেন রুমা বেগম।

ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই স্কুলছাত্রীর সৎ ভাই রাজন মৃধা (১৫) স্কুলের একটি কক্ষের চেয়ারে বসে আছেন। সেখানে প্রথমে এক নারী তাকে নামতা বলতে বলেন। ভিডিওতে ওই নারীকে বলতে শোনা যায় আমাদের সময় আমরা নামতা পড়তাম, ‘এক অক্কে এক আমায় চেয়ে দেখ।’ এরপরই রাজনকে চেয়ার থেকে নামিয়ে কয়েকজন মিলে মোটা কাঠের লাঠি দিয়ে তাকে বেদম পেটায়। সেখানে নেতৃত্ব দেন আরেক নারী। ওই নারীকে ভিডিওতে বেশ খোশ মেজাজে দেখা যায়। এরপর ৮ থেকে দশজন ব্যক্তি মিলে রাজন ও তার বাবাকে বেদম পেটায়।

এ ঘটনায় ২০ মার্চ ওই ছাত্রীর বাবাকে দিয়ে দুটি মামলা করানো হয়। একটি মামলা বাবা ও ছেলেকে মারপিটের অভিযোগে। আরেকটি মামলা করা হয় ছেলের বিরুদ্ধে সৎ বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে। পরে সৎ বোনকে ধর্ষণের অভিযোগটি সাজানো বলে জানায় ওই শিশু (৯)। এতে কলকাঠি নেড়ে নাটক সাজান স্কুল শিক্ষিকা ইসরাত জাহান।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালি সার্কেল) সুমন কর, মধুখালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম, নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক মো. হাবিল হোসেন প্রমুখ।

মধুখালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় এর আগে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সবাই জামিন নিয়ে বাইরে আছেন।

মে  ১৭, ২০২৩ at ২১:৩২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর