ঢাকার ট্রাফিক সামলাতে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জানালেন তাপস

মেয়র তাপস বলেন, ‘হাত তোলা’ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হলেও ঢাকা মেগাসিটি কখনই সঠিক দিশা খুঁজে পায়নি। সেই করালগ্রাস আমরা ভেঙে দিতে চাই।

ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অসহনীয় যানজটের প্রধানতম কারণগুলোর একটি মনে করা হয় ট্রাফিক শৃঙ্খলা না থাকা। সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানালেন, ঢাকায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করা হবে। আর এ জন্য দক্ষিণ সিটির ৫৩টি সিগন্যালে অবকাঠামো নির্মাণ হবে।

মঙ্গলবার (১৬ মে) ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে “উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ৩ বছর” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। একইসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে সবচেয়ে দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করেন তিনি।

মেয়র তাপস বলেন, “হাত তোলা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হলেও ঢাকা মেগাসিটি কখনই সঠিক দিশা খুঁজে পায়নি। কিন্তু সে করালগ্রাস আমরা ভেঙে দিতে চাই। ৫৩টি চৌরাস্তায় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত স্থাপনের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে।”

তিনি বলেন, “নগরীর ওপর হতে আন্তঃজেলা বাসের চাপ কমাতে আমরা ঢাকা থেকে বাস প্রান্ত সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তারই অংশ হিসেবে কাঁচপুরে আন্তঃজেলা বাসপ্রান্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভূমি উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি কেরানীগঞ্জের বাঘাইরে নতুন আরেকটি আন্তঃজেলা বাসপ্রান্ত প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

মেয়র তাপস বলেন, “ফুটপাতে হকার নিয়ন্ত্রণে আনতে ডিএসসিসির সড়ক, পথচারীদের চলাচলের পথকে লাল, সবুজ ও হলুদ চিহ্নিত করা হয়েছে। লাল চিহ্নিত এলাকায় কোনো হকারকে বসতে দেওয়া হবে না। সবুজ চিহ্নিত এলাকায় নির্দ্বিধায় ২৪ ঘণ্টা এবং হলুদ চিহ্নিত এলাকায় হকাররা সুনির্দিষ্ট সময়ে ব্যবসা করার সুযোগ পাবে।”

তিনি বলেন, “সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যেত আমাদের প্রিয় এই শহর। জলনিমগ্ন হয়ে পড়তো নগরীর প্রায় ৭০% এলাকা। কিন্তু দায়িত্বভার গ্রহণের পর জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করি। জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিগত ৩ বছরে আমরা ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকা শহর এখন আর ডুবে যায় না।”

মেয়র বলেন, “বিগত ৩ বছরে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের সামগ্রিক কার্যক্রমের ফলে বিগত ৩ বছর সময়ে সড়ক ও হাঁটার পথে পড়ে থাকা ১০০% উন্মুক্ত বর্জ্য ২০% এ নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ৮০% বর্জ্য সরাসরি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিগত ৩ বছরে ৩৬টি ওয়ার্ডে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণের ফলে বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৮-তে উন্নীত হয়েছে। অথচ আমার দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল মাত্র ২২। এছাড়া বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণের সুবিশাল কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে।”

নগরপ্রধান বলেন, “গত তিন বছরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। আগে মশক নিধন কার্যক্রম ৫৭টি ওয়ার্ডে সীমাবদ্ধ ছিল, প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে চারজন কর্মী নিয়োগ করা হতো আর মাত্র একজন সুপারভাইজার ৪-৫টি ওয়ার্ডের তদারকি করতেন। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৩ জন করে কর্মী এবং একজন সুপারভাইজার নিয়োগ দিয়ে এ কর্মসূচি জোরদার করেছি।”

মে  ১৭, ২০২৩ at ২০:১৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর