গাজীপুরে বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত চিত্রনায়ক ফারুক

ছবি- সংগৃহীত।

শেষ জানাজার আগে জনপ্রিয় অভিনেতা সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের “মিয়া ভাই” খ্যাত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। মঙ্গলবার (১৬ মে) রাত ৯টায় চতুর্থ জানাজা শেষে তাকে গাজীপুরের কালীগঞ্জের তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোমটিওরি এলাকায় বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। এ সময় শেষবারের মতো শ্রদ্ধা ও বিদায় জানাতে তার ভক্ত এবং স্থানীয় লোকজন উপস্থিত হন।

ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নেন। জানাজার আগে ফারুককে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আসসাদিকজামান।

এর আগে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ গ্রামে আনা হয়। সেখানে গ্রামবাসীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাত ৯টায় জানাজা সম্পন্ন হয়।

জানাজায় অংশ নেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এ কে এম ফজলুল হক মিলন, কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এস এম রবিন হোসেন, জেলা পরিষদের সদস্য দেলোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নায়কের ইচ্ছা অনুযায়ী পারিবারিক কবরস্থানে বাবা আজগার হোসেন পাঠানের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্য হয়। মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায়।

মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ফারুকের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। সেখানে এই নায়ককে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বাদ জোহর এফডিসিতে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাদ আসর গুলশান আজাদ মসজিদে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

দীর্ঘদিন ধরে  সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০২১ সালে মার্চ মাসের প্রথম দিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যান এই অভিনয়শিল্পী ও রাজনীতিবিদ। পরীক্ষায় তার রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থতা অনুভব করছিলেন তিনি। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতালে ভর্তির কয়েক দিন পর তার মস্তিষ্কেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল।

১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। এইচ আকবর পরিচালিত “জলছবি” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে ঢাকাই সিনেমার তার অভিষেক হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় “আবার তোরা মানুষ হ” ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার “আলোর মিছিল” সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

তার অভিনীত শতাধিক চলচ্চিত্রের মধ্যে “লাঠিয়াল”, “সুজন সখী”, “নয়নমনি”, “সারেং বৌ”, “গোলাপী এখন ট্রেনে”, “সাহেব”,“মিয়া ভাই” উল্লেখযোগ্য।

“লাঠিয়াল” সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ফারুক। ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে তাকে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে সফল ও সেরা নায়কদের একজন হিসেবে স্বীকৃত।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফারুক। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি দলটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৬ সালে ছাত্রনেতা হিসেবে যোগ দেন ছয় দফা আন্দোলনে। সে সময় তার নামে ৩৭টি মামলা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন ফারুক।

মে  ১৭, ২০২৩ at ১১:২৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর