বিলুপ্তির পথে গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ

আধুনিক সভ্যতার প্রচলনে  বিলুপ্তির পথে এক সময়ের গ্রামবাংলার ঐহিত্য গরু দিয়ে ধান মাড়াই। কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকতার প্রচলনে এখন ধান বপন, রোপণ, কাটা, মাড়াই করা এমনকি ধান থেকে চাল করাসহ প্রত্যেকটা কাজই সম্পন্ন হচ্ছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের মাধ্যমে। গরু আর লাঙ্গল টানা সেই জরাজীর্ণ কৃষক এখন আর দেখা যায় না।

রূপ, রং আর ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। এদেশে সন্ধ্যা-সকালে ডাহুক, দোয়েল, কোয়েলের ডাকে ঘুম ভাঙ্গত। প্রকৃতির পালাবদলে প্রতিবছর ফিরে আসে ছয়টি ঋতু। ঋতু চক্রের ঘূর্ণিয়মান রূপকালে যখন হেমন্তের আগমন ঘটত তখন গ্রাম বাংলার কৃষকরা ধান কাটার উৎসবে মতে উঠত। কৃষকরা দিনে ধান কেটে বাড়িতে আনার পর সন্ধ্যায় মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠত। ধান মাড়াইয়ের পর কৃষক পরিবার মেতে উঠত নবান্ন উৎসবে।

ভূঞাপুরের বাগবাড়ী গ্রামের কৃষক নুটু মিয়া বলেন, একসময় ধান কাটার পর প্রতিটি গ্রামে রাতভর চলতো হালের গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রচলনে কৃষিতে পুরনো এসব পদ্ধতি নেই বললেই চলে। এখন উন্নত মানের পাওয়ার টিলারের সাহায্য পাঁচ মিনিটেই জমি প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে। আগের মত চাষাবাদে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা না করে পাম্পের সাহায্যে সেচ কাজ করে পানির চাহিদা মিটানো হচ্ছে। নিত্যনতুন কীটনাশক বাজারে আসছে। জমিতে বীজ ছিটানোর জন্যে এখন আছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। ধানের পাতা পরীক্ষা করে জমির উপযোগী কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। ধান কাটার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে ধান কাটার যন্ত্র। তবে আধুনিক সভ্যতার ভীড়ে পুরানো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে অনেকটাই শখের বসে মাঝে মাঝে তারা হালের গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ করেন বলে জানান।

এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিজ্ঞানের নিত্যনতুন অবিষ্কার ও আধুনিক সভ্যতার প্রচলন এই দুইয়ের সমন্বয়ে কৃষিতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তবে এটাও ঠিক বিজ্ঞানের এই নতুন আবিষ্কারের ভীড়ে আমরা হারাতে বসেছি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে, স্বকিয়তা ও সত্তাকে। আগামী প্রজন্মের কাছে এক সময়কার এসব ঐতিহ্যকে পরিচিত করতে চাষাবাদে আধুনিক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি এসব পুরনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার দরকার বলে মনে করেন তিনি।

মে  ১৬, ২০২৩ at ১৬:১৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মাহামা/ইর