দুর্ভোগ চরমে: চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট আরো কয়েকদিন

ছবি- সংগৃহীত।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র কারণে কক্সবাজারের মহেশখালিতে অবস্থিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল) আপাতত বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল পরিবহন খাতসহ বাসা-বাড়ি ও হোটেলগুলোতেও রান্নার সংকট দেখা দিয়েছে চরমভাবে। চট্টগ্রাম নগরীর অনেক এলাকায় শনিবার সারাদিনই গ্যাস সংকট ছিল। তবে রবিবার সকাল থেকে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের এই সংকট কাটতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এর কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান, হেমসেন লেন, মোমিন রোড, লালখান বাজার, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, চান্দগাঁও, হালিশহর, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা তাদের সংকটের বিষয়টি জানিয়েছেন। অনেকে সকাল ও দুপুরের খাবার কিনতে হোটেলগুলোতে লাইন ধরেন। আবার কেউ কেউ ইলেকট্রিক চুলা, কেরোসিনের স্টোভ ব্যবহার করছেন। অনেকে বাসার বারান্দা বা অন্য কোথাও ইট বসিয়ে অস্থায়ী চুলা বানিয়ে শুকনো বাঁশ-কাট দিয়ে রান্না করছেন।

নগরীর লালখানবাজার এলাকার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসাইন কবির বললেন, বাসাবাড়িতে লাইনের গ্যাসের সাপ্লাই অনেকটাই বন্ধ। অনেকের বাসাবাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ। দোকানিরা বলছে- পাউরুটি জাতীয় খাবার ভোরবেলা দোকান খোলার পরপরই ফুরিয়ে গেছে। গলির নানা জায়গায় মৌসুমী কারিগররা সিলিন্ডার গ্যাসের চুলায়, কিংবা লাকড়ির চুলায় তেলে পরোটা ভেজে আপাতত নাস্তার যোগান দিচ্ছে। আর তা সংগ্রহেও দীর্ঘ লাইন পড়েছে।

জামালখান এলাকার জে এম সেন লেইনের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা লিপি ধর বলেন, দুপুরে কোনোভাবে ইলেকট্রিক চুলায় রান্নার কাজ সেরেছি, কিন্তু বিদ্যুৎও যদি না থাকে তাহলে যে কি অবস্থা হবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বুঝতে পারছি না। বিশেষ করে শিশুদের পেটে তো খাবার দিতে হবে।

বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন কেরোসিনের চুলা আর কেরোসিন কিনে দুপুরে কোতোয়ালি এলাকা থেকে টেম্পোতে ফিরছিলেন বাসায়। বললেন, ‘গতকাল থেকে হঠাৎ দেখি গ্যাস নাই লাইনে, মনে করলাম আজ পাব, কিন্তু পরে শুনলাম আরো কয়েকদিন নাকি এমন অবস্থা যাবে। তাই বাধ্য হয়ে স্টোভ আর কেরোসিন কিনে বাসায় যাচ্ছি। আমি বাসায় গেলে তারপর রান্না হবে।’ কাজীর দেউড়ির রাজশ্রী সিনহাও জানালেন, সকালে দোকানে গিয়ে পাউরুটিও পাননি। বললেন, ‘ভাগ্যিস আমার আগে কিছু রান্না ছিল তাই কোনভাবে ইলেকট্রিক চুলায় গরম করে নিতে পেরেছি।’ এমন সংকট চট্টগ্রাম নগরীর সবখানেই।

এদিকে গ্যাস সরবরাহ না থাকলেও নগরের বেশকিছু এলাকায় রান্নাঘরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কেজিডিসিএল এর মহাব্যবস্থাপক (অপারেশনস) আমিনুর রহমান। তিনি জানান, গ্যাস লিকেজ পরীক্ষা করার জন্য ‘অডোর‌্যান্ট’ ব্যবহার করা হয়। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় এই রাসায়নিকের গন্ধ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চট্টগ্রামে কেজিডিসিএলের মোট গ্রাহক ও সংযোগ আছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি। দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৭০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস সংকটের কারণে চট্টগ্রামের সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেককে গাড়িতে গ্যাস নিতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।

কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগামী কয়েকদিন চট্টগ্রামজুড়ে গ্যাস সংকট থাকবে। বর্তমানে রিজার্ভ থেকে নিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। রিজার্ভে সাধারণত গ্যাস থাকে ৮০ থেকে ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। রবিবার সেই রিজার্ভও শেষ হয়ে যায়। তবে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকল্প ব্যবস্থায় সংকট নিরসনের চেষ্টা করছি।