পাকিস্তান সেনাবাহিনী একাত্তরেও নৃশংসতা চালিয়েছিলো: ইমরান খান

ছবি- সংগৃহীত।

জামিনে মুক্ত হওয়ার পরদিনই জাতির উদ্দেশে ভাষণে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশটির সেনাবাহিনীর তীব্র সমালোচনা করেছেন। দেশটির সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭১ সালে নৃশংসতা চালিয়েছিলো বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। খবর দ্য ডন ও জিও নিউজের।

শনিবার লাহোরের বাসভবন থেকে দলের নেতাকর্মী ও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান। তিনি বলেন, পাকিস্তানের এই সংকটময় সময়ে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত। পূর্ব পাকিস্তানেও একই ঘটনা ঘটেছিলো, মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত ছিলো। শুধু পার্থক্য হলো, আজ আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া আছে। কিন্তু এমনকি তাও ব্লক করা হয়েছে। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যে নৃশংসতার শিকার হয়েছিলো, তা আজ আমাদের বুঝতে হবে।

ইমরানের এ ভাষণ দেশটির টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়নি। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভের সময় ভাঙচুর, সহিংসতার স্বাধীন তদন্তের আহবান জানিয়েছেন। তিনি এতে তার দলের নেতাকর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি রাষ্ট্রীয় ভবন পোড়ানো এবং নিরস্ত্র যুবক বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোরও স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি, তার অধীনে একটি প্যানেল তৈরির আহবান জানান।

ইমরান বলেন, পাকিস্তানে গণতন্ত্র সুতোয় ঝুলে থাকে এবং একমাত্র বিচার বিভাগই তা বাঁচাতে পারে। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই মাফিয়ারা বিচার বিভাগের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাই আমি প্রথমে জাতিকে আমাদের বিচার বিভাগ ও সংবিধানের পাশে দাঁড়াতে বলছি।

সেনাবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে বলপ্রয়োগ করে কারাগারে ঢোকানো যায় না। আইএসপিআরের মহাপরিচালকের উদ্দেশে ইমরান বলেন, আইএসপিআর সাহেব, আমি জেলে থাকাকালে আপনি কিছু বক্তব্য দিয়েছিলেন। আমি তার জবাব দিতে চাই। আপনি বলেছেন, আমি একজন ভণ্ড, আমি যতটা করেছি সেনাবাহিনীর আর কেউ ক্ষতি করেনি।

জবাবে ইমরান বলেন, আইএসপিআরের মহাপরিচালক সাহেব, আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আমি যখন সারাবিশ্বে আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, তখন আপনার জন্মও হয়নি … আমি সব ফোরামে আমার সেনাবাহিনীকে রক্ষা করেছি।

এদিকে পিটিআইর বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, তিনি সহিংস বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নাশকতা এবং সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি সাধনের কলঙ্কজনক ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এজন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা, গোয়েন্দা তথ্যসহ সর্বশক্তি মোতায়েন করা হচ্ছে। এই লোকদের বিচারের আওতায় আনা সরকারের জন্য একটি পরীক্ষা। তাদের সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে বিচার করা হবে।

এদিকে সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ অসীম মুনিরও কঠোর বার্তা দিয়েছেন। ৯ মে ইমরানকে গ্রেফতারের পর সহিংসতার কারণে দিনটিকে তিনি ‘কালো দিবস’ বলে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, এ দিবসের সব পরিকল্পনাকারী, উস্কানিদাতা এবং ভাঙচুরকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

পিটিআই কর্মীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পেশোয়ারের কর্পস হেডকোয়ার্টার পরিদর্শনকালে তিনি আরো বলেন, সশস্ত্র বাহিনী তার স্থাপনার পবিত্রতা ও নিরাপত্তা লঙ্ঘন বা ভাঙচুরের আর কোনো প্রচেষ্টা বরদাশত করবে না।

মে  ১৪, ২০২৩ at ১২:২৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর