বৃষ্টির আশায় ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাঙের বিয়ে, এমন বিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে মানুষের ঢল

গত কয়েক দিন ধরে তাপদাহে পুড়ছে দেশের বিভিন্ন জনপদ। নেই কোন বৃষ্টিপাত, সঙ্গে প্রচন্ড সূর্যের প্রখর রোদ। এরকম অসহ্য দাবদাহ থেকে বাদ পড়েনি পীরগঞ্জ উপজেলাসহ আশ পাশের জেলা ও উপজেলাগুলো।

এতে করে জন জীবনে দেখা দিয়েছে নাভিশ্বাস এমন খড়ায় ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হবে-সেই আদি বিশ্বাস থেকেই ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে উপজেলায় আয়োজন করা হয় ব্যাঙের বিয়ে। গত বুধবার (১০ মে) উপজেলার নারায়নপুর প্রধান পাড়ায় এরকম পুরুষ ব্যাঙ মেঘ এবং মেয়ে ব্যাঙ নাম বৃষ্টির বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (১১ মে) বরের বাড়িতে চলে বৌ ভাতের অনুষ্ঠান।

বর হিসেবে মেঘ নামে একটি ব্যাঙের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ভাকুড়া খালপাড়ার আনিসুরের বাড়িতে আর কনে হিসেবে বৃষ্টি নামে অপর একটি ব্যাঙের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হয় নারায়নপুর গ্রামের আমজাদ আলীর বাড়িতে।

আরো পড়ুন :
> অনিয়মের জন্য বাফুফের অর্থ আটকালো ফিফা
> চৌগাছায় মাশরুম চাষে সফল এক শিক্ষার্থী

বিয়ের পূর্ববর্তী আয়োজন শেষে ৯ লাখ ৯ হাজার ৯৯৯ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করে ইসলাম ধর্মের আদলে বুধবার রাতে মেঘ ও বৃষ্টি নামে দুই ব্যাঙের আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়েছে অনেককেই। হলুদ বাটা, গায়ে হলুদ, দল বেধে বিয়ের গীত গাওয়া, ইজাব-কবুল করার মত সব ধরনের পর্ব ছিলো এ বিয়ে বাড়িতে। শুধুমাত্রবৃষ্টির আশায় ঘটা করে দেয়া হয়েছে দুটি ব্যাঙের বিয়ে।শাড়ি, কাপড় দিয়ে সাজানো হয় বর-কনেকে। টিপ ও অলতাও পড়ানো হয় কনে ব্যাঙ বৃষ্টিকে। বিকালে গায়ে হলুদের পর্ব শেষ করে সন্ধায় ভাকুড়া খালপাড়া থেকে অনুষ্ঠানিক ভাবে বরযাত্রী নিয়ে নারায়পুরে কনে বৃষ্টির বাড়িতে আসেন বর পক্ষ। খাওয়া-দাওয়া শেষে কাজী ডেকে দেন মোহর ধার্য্য করে ইজাব কবুল করানো হয় বর ও কনেকে। সম্পন্ন হয় বিয়ে। ইসলামী ঢঙে আয়োজন করা ব্যাঙের এ বিয়ে দেখতে নারী পুরুষের ঢল নামে বিয়ে বাড়িতে। শতশত মানুষ জড়ো হয় বিয়ে দেখতে।

ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাঙের বিয়ে

কনের পিতা আমজাদ আলী জানান, “এ বিয়ের দেন মোহর ধার্য করা হয় ৯ লাখ ৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। এর মধ্যে নগদ ৩ লাখ ৩ হাজার ৩৯৯ টাকা এবং অবশিষ্ট টাকা বাকি রেখে বিয়ে সম্পান্ন করা হয়। বিয়ে শেষে উপস্থিত লোকজনের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।” বিয়ে দেখতে আসা মিনারা বেগম নামে এক গৃহবধু জানান, “ব্যাঙের বিয়ে হচ্ছে শুনেই দেখতে এসেছি। ইসলামী ভাব ধারায় মানুষের মত ব্যাঙের বিয়ে দেয়া এটাই প্রথম দেখলাম”। তবে সোহেল হাসান শুভ নামে এক যুবক জানান,” ইসলামী বিধান অনুসরণ করে ব্যাঙের বিয়ে দেয়া ঠিক নয়, ইসলাম এটিকে সার্পোট করেনা। এটি কুসংস্কার। তবে এমন ব্যতিক্রম বিয়ে জীবনে কোনদিন দেখিনি।”

বিয়ের পরের দিন বৃহস্পতিবার বর মেঘের বাড়িতে আয়োজন করা বৌভাতের। নিমন্ত্রণ পেয়ে বৌভাত অনুষ্ঠানে অতি আগ্রহে অংশ নেন অনেকেই।

এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির বলেন, লোকজন আদি বিশ্বাস থেকে প্রবাহমান বাংলার এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এটি করেছে। তবে যে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো সহায়তা ও নজরদারি ছিলো।

মে  ১২, ২০২৩ at ২০:৩১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/হুক/ইর