১৬ টাকা বাড়ানোর পরেও বাজারে মিলছে না চিনি!

ছবি- সংগৃহীত।

আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে দেশে চিনির দাম কেজিতে ১৬ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। তবুও বাজারে এখন এর চেয়ে বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম নিয়ন্ত্রক মোছা. শামীমা আকতার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কেজিপ্রতি ১৬ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি চিনি খোলাবাজারে ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, হিসাব-নিকাশ করে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। এখন যদি বাজারে অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রি হয়, তাহলে আগামী সপ্তাহ থেকে অ্যাকশনে যাবে সরকার।

মন্ত্রী বলেন, তবে সমস্যা হচ্ছে, আমরা খুব বেশি চাপ দিলে বাজার থেকে পণ্য সরে যায়। তখন একটা উভয় সংকটের মধ্যে পড়ে যাই। বৈশ্বিক বাজার বিবেচনায় নিয়ে আমরা তো একটি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। গেল ১৫-২০ দিনে বৈশ্বিক বাজারে চিনির দাম টনপ্রতি ৪৫-৫০ ডলার করে বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

টিপু মুনশি বলেন, আমাদের ৯৯ শতাংশ চিনি আমদানি করতে হয়। এসব কারণে বিদেশের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বেশি। বৈশ্বিক দাম বাড়লে আমাদের ওপর প্রভাব পড়বেই। আবার কিছু অসৎ ব্যবসায়ী সুবিধাও নেয়। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা চিনির একটি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি।

বাজার থেকে প্যাকেটজাত চিনি হাওয়া হয়ে গেছে, প্যাকেটজাত চিনি অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই এমনটি দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাজারে কী চলছে, সেটা বড় কথা না। ট্যারিফ কমিশন দেখে, কত দামে আমদানি করা হয়েছে, তার একটি গড় মূল্য নিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়। তবে এতে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে থাকে। যেমন আজকে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু নতুন দামের চিনি আসার আগেই তারা সুযোগ নিয়ে ফেলে।

টিপু মুনশি বলেন, আমাদের হিসাব হচ্ছে একটি অঙ্কের মেথডে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসি। তারাও আমাদের সঙ্গে একমত হয়। কিন্তু একমত হলেও বাজারে তার প্রভাব পড়তে দেরি হয়। দেখা যাক, পরবর্তী সপ্তাহ থেকেই আমরা বাজারে অ্যাকশনে যাব। কারণ ব্যবসায়ীরা তো আমাদের সঙ্গে এই দাম নির্ধারণে একমত হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে চিনি উৎপাদন প্রতিযোগিতামূলক হবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, সবচেয়ে ভালো হলো আমদানি করে নিয়ে আসা। কিন্তু পেঁয়াজ ও আলু উৎপাদন সম্ভব। দেশে চিনি উৎপাদন লাভজনক হবে না।

মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাজারে চিনির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখা, সাধারণ ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনায় বিটিটিসি কর্তৃক প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (খোলা) মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১২০ টাকা এবং প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (প্যাকেট) মিলগেট ১১৯ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২১ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা নির্ধারণ করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। তবে বাজারে এখনো এ দরে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি পাওয়াই যাচ্ছে না। ঈদের পর দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে বাজারে নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে।

এর আগে রমজান মাসে এপ্রিলের প্রথম দিকে সরকার খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় কেজিপ্রতি ১০৪ টাকায়। কিন্তু সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সে সময় বাজারে চিনি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছিল বলে জানা যায়। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না চিনি। দু-এক বস্তা পেলেও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তাদের অভিযোগ, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে অস্থির বাজার।

খিলগাঁও কাঁচাবাজারের মুদি দোকানদার সাইফুল দাবি করেন, ঈদের আগে থেকেই প্যাকেটজোত চিনির সরবরাহ নেই। আর খোলা চিনি ঈদের আগেও ৫০ কেজির বস্তা ৬ হাজার টাকায় কিনেছেন তারা। তবে এখন সেই বস্তা কিনতে হচ্ছে ৬ হাজার ৩০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। অন্য এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, বড় বড় ডিলার যারা আছে, এরা সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। আরেকজন বলেন, এক বস্তা চিনি কিনতে গেলে কমপক্ষে ২০ দোকান ঘুরতে হচ্ছে। আবার চিনি কিনলে ফর্দ (রসিদ) দিচ্ছে না।

এর আগে গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি বলেন, কয়েকদিন আগে সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে দাম সমন্বয় করার অনুরোধ জানালে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়। ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী খোলা চিনি প্রতি কেজি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দামে চিনি বিক্রির জন্য বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনকে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে গত মার্চে এক দফায় শুল্ক কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয় সরকার, যা আগামী ৩১ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় শুল্কছাড়ের এই সুবিধা আরো কিছু সময়ের জন্য বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, চিনির জন্য শুল্কহার এখনো বলবৎ রয়েছে। এটা ৩১ মে শেষ হবে। চিনির জন্য শুল্কহার অব্যাহত রাখার জন্য আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে চিঠি পাঠাব। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্য এবং ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চিনি আমদানিতে শুল্কছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে চিঠি দেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে চিনির দাম একটু বেড়ে গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মূল্য সমন্বয়ের নতুন সিদ্ধান্ত হাতে পেলেই তা কার্যকরে আবার অভিযান শুরু করা হবে।

মে  ১২, ২০২৩ at ১০:৪৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর