যশোরে প্রথম ছাদে গরুর খামার!

ছবি- সংগৃহীত।

যশোরের কেশবপুরে বসতবাড়ির ছাদে প্রথম গরুর খামার করে সফলতা পাওয়ার পাশাপাশি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। অভিনব পদ্ধতিতে তৃতীয় তলা ভবনের ওই ছাদে তৈরি করা গরুর খামার দেখতে আসছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। ছাদে গরু ওঠানামা করানোর জন্য নিজস্ব পদ্ধতিতে করা হয়েছে লিফটের ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ে ওই খামারের ১২টি গরু বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা লাভবান হয়েছেন তিনি। ছাদে গরু পালনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি ব্যতিক্রম ওই খামার যশোর জেলায় প্রথম এমনটিই জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর।

নজরুল ইসলাম কেশবপুর পৌরসভার ভোগতী মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ছয় শতক জমির উপর তার বসতবাড়ি। শখ ছিল গরু পালনের। শহর এলাকায় জমির দাম বেশি ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ২০২২ সালে বসতবাড়ির ছাদে গরুর খামার করার পরিকল্পনা নেন। ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট ছাদের চারপাশে দেন লোহার রেলিং। অর্ধেক দেওয়াল করে নেটের মাধ্যমে ঘিরেছেন চারপাশ। উপরে রয়েছে টিনের ছাউনি। ১২টি গরু পালনের জন্য রয়েছে পৃথক খাবারের পাত্র। এছাড়া গরুর জন্য ফ্যানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ভবনের সামনের অংশে নিজস্ব পদ্ধতিতে লিফট তৈরি করে ওই গরু ওঠানামা করানো হয়।

গরুর খামারী নজরুল ইসলাম বলেন, বসতবাড়ির তৃতীয় তলা ছাদে ২০২২ সালে ১২টি দেশি গরু নিয়ে খামার তৈরি করেন। ভবনের একপাশে নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি করা লিফটের মাধ্যমে গরু ওঠানামা করানো হয়। ছাদে গরু পালনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে এ খামারটি তৈরি করা হয়েছে। ধান, ভুট্টা, ভূষি, খৈল এগুলো একসঙ্গে পালিশ করে এবং বিচালী, কাঁচা ঘাস ও কলার খোসা গরুকে দিনে ৩ বার খাওয়ানো হয়। গরু লালন-পালনের জন্য একজন কর্মচারী রাখা হয়েছে। ৬ মাস লালন পালনের পর প্রথম পর্যায়ে ওই খামারের ১২টি গরু বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা লাভবান হন। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ১১টি দেশি ও ১টি ভারতের শাহীওয়াল জাতের গরু। আগামী কোরবানির ঈদে দ্বিতীয় পর্যায়ে ওই গরু বিক্রি করা হবে।

বসতবাড়ির ছাদে গরুর খামার করার পরিকল্পনা কেন নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সম্প্রতি তার বাড়ির পাশ থেকে ৭টি গরু রাতে চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। যে কারণে নির্বিঘ্নে গরু পালনের জন্য ছাদই নিরাপদ বলে তিনি উল্লেখ করেন। খামার বৃদ্ধি করার বিষয়ে তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বাড়ির পার্শ্ববর্তী চালুয়াহাটি গ্রামে বাবার ৭ বিঘা জমির উপর ভবন করে ছাদে গরুর খামার করার ইচ্ছা রয়েছে। সে কারণে প্রাণি সম্পদ অফিসের সহযোগিতায় ব্যাংক ঋণ পেলে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

উপসহকারী প্রাণি সম্পদ  কর্মকর্তা কার্ত্তিক চন্দ্র রায় বলেন, এ উপজেলায় ৮০৫টি খামারে ৯৪ হাজার পশু লালনপালন করা হয়। এর ভেতরে ব্যতিক্রমভাবে নজরুল ইসলামের বসতবাড়ির ছাদে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাদ্য পরিবেশনের মাধ্যমে গরু পালন করা হয়ে থাকে। বসতবাড়ির ছাদে এ ধরনের খামার করলে ছাদের কোন অসুবিধা হয় না।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. অলোকেশ কুমার সরকার বলেন, যশোর জেলার ভেতর ছাদের উপর গরু পালন এটিই প্রথম। নজরুল ইসলাম এমন খামার যাতে আরও বৃদ্ধি করতে পারেন সে বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া অন্যরা ছাদের উপর গরুর খামার করতে আগ্রহী হলে প্রাণি স¤পদ দপ্তর থেকে তাদেরকেও উৎসাহিত করা হবে।

মে  ১০, ২০২৩ at ২১:২৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর