ডিস ব্যবসায়ীর কাছে জাবি ছাত্রলীগের চাঁদা দাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংলগ্ন পাথালিয়া ইউনিয়নের পানধোয়া বাজারের এক ডিশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।

চাঁদার টাকা না দিলে ডিশের ব্যবসা বন্ধ রাখতে এবং ব্যবসায়ীকে জীবননাশেরও হুমকি দিয়েছে তারা।

এ ঘটনায় সোমবার (৯ মে) রাতে আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ডিশ ব্যবসায়ী মমিনউল্লাহ মমিন (৪৫)।

অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক শান্ত মাহবুব এবং উপ দপ্তর সম্পাদক হাছিবুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

এদের মধ্যে শান্ত মাহবুব নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং হাছিবুর রহমান ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও নিয়ম বর্হিভূতভাবে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে অবস্থান করেন।

অভিযোগপত্র অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী পানধোয়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ‘আমবাগান ক্যাবল নেটওয়ার্ক’ নামে ব্যবসা পরিচালনা করেন মমিনউল্লাহ মমিন।

তবে গত ১৫ এপ্রিল অভিযুক্ত শান্ত মাহবুব ও হাছিবুর রহমান আমবাগান এলাকায় গিয়ে ডিশ ব্যবসায়ী মমিনউল্লাহ মমিনের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এছাড়া চাঁদার টাকা না দিতে পারলে ডিশের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।

টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ‘আমবাগান ক্যাবল নেটওয়ার্কের’ দেওয়া ডিশের সংযোগ কেটে দেন অভিযুক্তরা। এছাড়া এলাকাবাসীকে জোরপূর্বক নতুন ডিশের সংযোগ দিতে চান।

এরপর গত ০১ মে আমবাগান এলাকায় ‘আমবাগান ক্যাবল নেটওয়ার্কের’ লাইনম্যান খাইরুল ইসলাম ডিশ লাইনের বিল উত্তোলনে গেলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে আসেন হাছিবুর রহমান। পরে তাকে মারধর করে সাড়ে ৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। এছাড়া পরবর্তীতে বিল তুলতে গেলে হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দেন।

ভুক্তভোগী মমিনউল্লাহ মমিন বলেন, “গত এক দেড় মাস ধরে আমাদের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ঝামেলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা এসে আমাদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তারা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের লোক বলে পরিচয় দেয়। এই মাসের ১ তারিখ থেকে আমাদের ডিশ ব্যবসা একেবারেই বন্ধ আছে।

কে কে চাঁদা দাবি করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা শান্ত মাহবুব ও হাছিবুর রহমান। তাদের সঙ্গে পাঁচটা মোটরসাইকেলে আরও ৭-৮ জন এসেছিল তাদের নাম জানি না। তারা আমার দোকানের কর্মচারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে। আমরা ভয়ে আছি তারা একসঙ্গে ৩০-৩৫ জন করে এসে হুমকি দিয়ে যায়।”

ভুক্তভোগী মমিন আরও বলেন, অভিযুক্তরা এখন পর্যন্ত আমাদের ১৩টি হাইব্রিড ক্যাবল এমপ্লিফায়ার নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ৯ জায়গায় তার কেটে ফেলেছে, তার নিয়ে গেছে ২৬ কোরের প্রায় ৫০০ মিটার। আমাদের প্রায় পাঁচ শতাধিক বাসায় ডিশ দেওয়া আছে, তারা কেউ এখন ডিশের সুবিধা পাচ্ছে না। পুরোপুরিই বন্ধ আছে আমাদের সার্ভিস। তারা (ছাত্রলীগ) বলেছে সার্ভিস বন্ধ রাখতে, এমনকি সার্ভিস চললে আমাদের প্রাণনাশেরও হুমকি প্রদান করে। আমার লাইনম্যান খাইরুল ইসলামকে কয়েক দিন আগে উঠিয়ে নিয়ে যান তারা।

বিভিন্ন জায়গা থেকে তার কেটে নেওয়া এবং এমপ্লিফায়ার নিয়ে যাওয়াতে ভুক্তভোগীর এখন পর্যন্ত দুই লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান।

লাইনম্যান খাইরুল ইসলাম বলেন, ১ মে হাছিব ভাই আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় আল-বেরুনী হলের সামনে। সেখানে গিয়ে আমাকে মারধর করে এবং আমার পকেটে ৭-৮ হাজার টাকা ছিল তা নিয়ে নেয়। আমি যদি ডিশের কাজে আমবাগান এলাকা কিংবা ক্যাম্পাসে যাই তাহলে তারা আমাকে জবাই করে ফেলবে বলে হুমকি দেন।

অভিযুক্ত শান্ত মাহবুব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এটা একটি পুরোপুরি মিথা বানোয়াট কাহিনি। তারা আমাদের নামে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করব।”

আরেক অভিযুক্ত হাছিবুর রহমানের ভাষ্যমতে, “এটা একটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে আমার নামে এমন অভিযোগ তাহলে আমার বিচার হোক। তবে প্রমাণ না করতে পারলে আমি মানহানি মামলা দায়ের করব।”

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, “গতকাল রাতে পানধোয়ার এক ডিশ ব্যবসায়ীর অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেখানে দুই জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের নাম আছে। তবে তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কি না আমি জানি না। অভিযোগের ভিত্তিতে আজ আমরা পানধোয়া বাজারে গিয়েছিলাম তদন্ত করার জন্য। পরবর্তীতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা আমরা দেখব।”

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান বলেন, আমার এলাকায় ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষার্থী ভাড়া থাকে। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী এলাকায় এসে মাঝেমধ্যে ঝামেলা করে। আমার এলাকাবাসীকে আমি বুঝিয়ে শান্ত রাখতে পারি কিন্তু ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তো সংঘবদ্ধ। তাদেরকে কিছু বলা যায় না। এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে তখন অবশ্যই আমরা শঙ্কাবোধ করি এবং আতঙ্কিত থাকি। যেহেতু তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুতরাং এসব বিষয়ে তাদের সাথে ঝামেলা হলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এর আগে করোনাকালে তো স্থানীয়দের সঙ্গে বড় ধরনের ঝামেলা হয়েছিল। এমন যাতে না ঘটে সেদিকে সবাইকে নজর দেওয়া উচিত।

মে  ০৯, ২০২৩ at ২০:০২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/নাউ/ইর