পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে রূপ হারাচ্ছে- সাঙ্গু নদী

সাঙ্গু নদী স্থানীয়ভাবে শঙ্খ নদী নামে পরিচিত। আরাকান পাহাড় থেকে উৎপত্তি শঙ্খ নদের দৈর্ঘ্য ১৯৩ কিলোমিটা। এ নদীটিকে ঘিরেই যুগের পর যুগ ধরে গড়ে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ। যুগের যুগ পরিবর্তনে পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে রূপ হারাচ্ছে পাহাড়ের খরস্রোতা নদী সাঙ্গু। ইতিমধ্যে কমে গেছে নদীর পানির প্রবাহ। জেগে উঠেছে নদীর মাঝখানে অসংখ্য ছোট-বড় চর। বর্তমানে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলেও এখনও বান্দরবানে থানচিতে রেমাক্রী, ছোট মদক, বড়মদকসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে যেতে হয় ইঞ্জিন চালিত নৌকাতে। তবে সাঙ্গু নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে নৌ চলাচল। স্থানীয় অধিবাসীদের পানির ছাহিদার শতভাগ এই নদী থেকে পূরণ হলেও নানা কারণে নাব্যতা হারিয়ে নদীটি এখন পরিণত হয়েছে সরু খালে। আর এসব কারণে নদীর ওপর নির্ভরশীলদের জীবন ও জীবিকায় নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা ও হুমকির মুখে।

মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবানে থানচিতে দুর্গম বড় মদক এলাকার পাহাড়ে জন্ম একসময়ের খরস্রোতা নদী সাঙ্গুর। পাহাড়ের অসংখ্য ঝিড়ি ঝর্ণার পানি গিয়ে মিশেছে এ নদীতে। নদীর তীরে বসবাসরত সকল গ্রামের মানুষের পানির প্রধান উৎস হচ্ছে সাঙ্গু নদী। কিন্তু পরিবেশ দূষণের ফলে বদলে যাচ্ছে নদীমাতৃক এ নদীর। শুকিয়ে যাচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীণ অন্যতম পাহাড়ি খরস্রোতা সাঙ্গু নদী। নির্বিচারে পাহাড় কাটা, বনাঞ্চল উজাড়, পাথর উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি ধুয়ে পলি জমে ভরাট হতে বসেছে নদীটি। দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকটও। ক্রমশ দূষিত হয়ে পড়ছে সাঙ্গু নদীর পানি। বিলুপ্ত হওয়ার পথে সাঙ্গু নদীর দুর্লভ মৎস্য সম্পদও।

স্থানীয়রা বলেছেন, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের সাথে শীলামাটি ও পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে আরও আগেই। ফলে বর্ষা মৌসুমে মাত্র দুই একদিনের বৃষ্টিতে প্লাবিত হচ্ছে সাঙ্গুর পানি। বনভূমি উজাড় এবং জলধারার পাথর তুলে পাচার করা হচ্ছে। এর ফলে কোথাও কোথাও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ছে। আবার শুস্ক মৌসুমে পরিণত হচ্ছে ধুধু বালুচরে। আর শুস্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় সাঙ্গু নদীকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহীরা পড়ছে বিপাকে। শুকনো মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সাথে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন, ঝিরি ঝর্ণা থেকে মাত্রাতিরিক্ত পাথর আহরণসহ নানা কারণে এখন নদীতে পানির প্রবাহ কমেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এদিকে এই সাঙ্গু নদীতে আয়ের উৎসবের নির্ভরতা সবিতা জলদাশসহ কয়েকজনে জেলেরা জানান, জেলেদের অনেক পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস সাঙ্গু নদী, এই নদীকে ঘিরে শতশত উপর লোকের জীবন চলতো, কিন্তু নদীতে নাব্যতা সংকটে নৌকা চলে না, পানি না থাকায় মাছ নেই আর নদী থেকে আয়ের উৎসব উপার্জনের পথ বন্ধ বলে অনেক জেলে পরিবার অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছে।

এনিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আবুল মনসুর জানান, এ সাঙ্গু নদীতে একসময় প্রচুর পানি থাকলেও দিন দিন পানি কমে যাওয়ায় নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও কঠিন পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে থানচি উপজেলাবাসী।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমা জানান, পানির স্তর নিচে নেমে বিভিন্ন ঝিরি ঝর্ণা শুকিয়ে সাঙ্গু নদীতে পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছে। এ নদীতে মৎস্য সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে সম্প্রতি সময়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভাতে উপস্থিত সকলে সিন্ধান্তে সাঙ্গু নদীতে বিভিন্ন পয়েন্ট নির্ধারণ করে সেখানে মাছের পোনা মাছ ছেড়ে দেয়া হবে। নদীর নির্ধারিত পয়েন্টগুলোতে কোনো অবস্থাতে মাছ ধরা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় জনসাধারণের জীবনধারনের প্রয়োজনীয় পানির উৎস এই সাংগু নদীকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উপজেলায় সচেতন মহলসহ সকলে সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সহযোগীতায় কামনা করেন তিনি।

মে  ০৯, ২০২৩ at ১৬:৪৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/চিঅমা/ইর