৪০০ ফ্রিজ ভাড়া দিয়েছেন খাইরুল

ছবি- সংগৃহীত।

খাদ্যপণ্য হিমায়িত করে মান অক্ষুণ্ন রাখতে রেফ্রিজারেটর (ফ্রিজ) ব্যবহারের প্রচলন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। বিত্তবানরা সচরাচর এক বা একাধিক রেফ্রিজারেটর ঘরে রাখেন। রেফ্রিজারেটরের মূল্য নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় অনেকেই কিনতে পারেন না। এছাড়া শহরে যারা লেখাপড়া করতে আসেন তাদের মেস বা ঘরে প্রয়োজন থাকলেও বিলাসজাত এই পণ্যটি ক্রয় করা অসম্ভব।

গরিব আর ভাসমান এসব বাসিন্দাদের কথা চিন্তা করে রেফ্রিজারেটর ভাড়া দেন বরিশালের খাইরুল ইসলাম। একটি বা দুটি নয় ৪০০ রেফ্রিজারেটর ভাড়ায় রয়েছে তার। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ব্যবসার বিকল্প এই মাধ্যমের উদ্যোগ নিয়ে দারুণভাবে সফল হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, ফ্যান, গ্যাসের চুলা, রাইস কুকার ও মোটর সার্ভিসিং করে থাকেন খাইরুল।

আরো পড়ুন :
> পায়রায় আড়াই কেজি ওজনের ইলিশ, ৫ হাজারে বিক্রি
> ৭ বছরে সর্বনিম্ন রিজার্ভ, নামল ২৯ বিলিয়ন ডলারে

সদর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকার বাসিন্দা খাইরুল ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কলেজ এভিনিউতে। এলাকায় বেশ জনপ্রিয় খাইরুল। বিকল্প ব্যবসার উদ্যোগটি নিয়েছিলেন মুদি দোকানের ব্যবসায় সহায়-সম্বল হারিয়ে।

তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ঘটনা। এখন যে দোকানটিতে রেফ্রিজারেটর ভাড়া দেওয়ার ব্যবসার প্রসার হয়েছে একই দোকানে আমার মুদি ব্যবসা ছিল। তখন পুঁজি খুব বেশি ছিল না। পাইকারদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য এনে বিক্রি করে টাকা শোধ করতাম। এভাবে ব্যবসা চালাতে গিয়ে আমিও অনেক লোকের কাছে বাকিতে মালামাল দেই। আমার কাস্টমার বকেয়া পরিশোধ না করায় আমি পথে এসে যাই। কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার দেনা হয়ে যায়।

ওই বছর আমার দোকানে একটি তাক আর একটি ফ্রিজ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। একদিন নিজে নিজে চিন্তা করলাম, ফ্রিজটি যদি কাউকে ভাড়া দেই তখনতো মাস শেষে কিছু টাকা আসবে।

খাইরুল ইসলাম বলেন, চিন্তা অনুসারে এক ব্যক্তির কাছে ২০০ টাকায় মাসিক চুক্তিতে ফ্রিজটি ভাড়া দেই। দুর্ভাগ্য হলো তিনি ফ্রিজটি নিয়ে পালিয়ে যান।

ওই ঘটনায় দুটি শিক্ষা অর্জন করি। প্রথমত সকল পরিবারে ফ্রিজের চাহিদা আছে কিন্তু কিনতে পারে না। আর কেউ ভাড়া নিলে তার সকল তথ্য আগে সংগ্রহে রাখতে হবে।

খাইরুল বলেন, মুদি ব্যবসা করতে গিয়ে বরিশাল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এক শিক্ষকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ব্যবসার হাল জানিয়ে তার পরামর্শ নিতে গেলে তিনি এসি, ফ্রিজ, প্রেসার কুকার, গ্যাসের চুলা মেরামরে কোর্স করতে বলেন। তার পরামর্শে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাসায় বাসায় কাজ শুরু করি।

ওই সময় দেখতাম বিভিন্ন পরিবার থেকে পুরাতন ফ্রিজ বিক্রি করে দিচ্ছে। আমি সেগুলো কিনে দোকানে এনে মেরামত করে পরিচিতজনদের কাছে ভাড়ায় দেওয়া শুরু করি।

শুরুর বছর ২০০-৩০০ টাকা মাসিক ভাড়া রাখতাম। আর অগ্রিম জামানত ৫০০ টাকা। এখন মাসিক ভাড়া ৫০০ টাকা, জামানত এক হাজার টাকা রাখি।

তিনি বলেন, যখন ফ্রিজটি ফেরত দিয়ে যাবেন তখন জামানতের টাকা ফেরত পাবেন। তবে ফ্রিজ নিতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, দুই কপি রঙিন ছবি জমা দিতে হয়।

প্রথম বছর সম্ভবত ৩০ টি ফ্রিজ ভাড়া দেই। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে ব্যবসার প্রসার বৃদ্ধি করি। এখন ভাড়ায় রয়েছে প্রায় ৪ শ ফ্রিজ।

খাইরুল বলেন, কেউ নতুন ফ্রিজ নিতে চাইলেও আমি তা সরবারহ করি। শো-রুম থেকে নামিয়ে এনে দিব। তবে তাতে ভাড়া ঠিক থাকলেও জামানত দিতে হবে ২ হাজার টাকা। এছাড়া ভাড়াটিয়ার কাছে ফ্রিজ থাকাকালীন কোন সমস্যা হলে তা সম্পূর্ণরুপে বিনা খরচে আমি মেরামত করে দেই।

তিনি বলেন, অনেক মানুষ রয়েছেন ৩০/৪০ হাজার টাকায় একটি ফ্রিজ কিনতে পারেন না। এছাড়া বরিশালে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী মেস করে থাকেন। তাদের ফ্রিজ দরকার হয়। কিন্তু এতো টাকা দিয়ে ক্রয় সম্ভব নয়। এই ক্ষেত্রটি ধরে এগিয়ে আজকে সকলের সহায়তায় আমার ব্যবসা সফল। নতুন ফ্রিজের চেয়ে পুরাতন ফ্রিজের চাহিদা আমার কাছে বেশি। যত মানুষ দিনে ফ্রিজ ভাড়া নিতে আসেন তত আসলে আমি সরবরাহ করতে পারছি না। ফ্রিজ ভাড়ার এমন ব্যবসায়িক ধারণা আমি মনে করি বাংলাদেশে আমিই প্রথম। এছাড়া আর কেউ এমন ব্যবসা করছে বলে জানা নেই-বলেন খাইরুল ইসলাম।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তার এসব বিলাসজাত দ্রব্য সহজে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। খাইরুল ইসলাম বলেন, পর্যায়ক্রমে এসি, ফ্যান এগুলোও ভাড়া দেওয়ার ইচ্ছে আছে। সেই প্রচেষ্টা চলছে। আমার কথা হচ্ছে, যাদের টাকা আছে তারাই কেন শুধু বিলাসিতা করবেন। গরিব মানুষ সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। বিকল্প উপায়ে তাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে যেতে চাই এসব পণ্য।

খাইরুল ইসলাম এখন একা নন তার নতুন উদ্ভাবনী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আরও দুজন কাজ করেন। তেমনই একজন মোহাম্মদ সাহাব বলেন, হাতের কাজ শিখছি খাইরুল মামার কাছে। পাশাপাশি ফ্রিজ-এসি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসার তদারকি করি। প্রতিদিন ২০/৩০ জন লোক ফ্রিজ ভাড়া নিতে আসেন।

চায়ের দোকানি ইমরান খান বলেন, আমার ছোট পুঁজি ৩০/৪০ হাজার টাকা দিয়ে ফ্রিজ ক্রয়ের সামর্থ নেই। এজন্য দুই বছর আগে তার কাছ থেকে ফ্রিজ ভাড়া নিয়েছিলাম মাসে ৪০০ টাকায়। যারা নিম্নআয়ের এবং ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসা করেন তাদের জন্য ফ্রিজ ভাড়া পাওয়াটা সত্যিকার অর্থেই ভালো কিছু।

মে  ০৮, ২০২৩ at ২১:২৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর