ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ-নেপাল

ছবি- সংগৃহীত।

দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্যে সহায়তা করতে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ ও নেপাল। এমনকি এই কাজে ভারতকে কীভাবে পাশে রাখা যায় সে বিষয়ে আলোচনাও করতে চলেছে উভয় দেশ।

রবিবার (৭ মে) নেপালের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে নেপালি সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট।

বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্য চালু করার বিষয়ে ভারতকে পাশে পেতে উভয় দেশ আলোচনা করবে বলে জানিয়েছেন নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্য চালু করতে ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করার জন্য ভারতকে কীভাবে যৌথভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সে বিষয়ে নেপাল ও বাংলাদেশ আলোচনা করবে।

দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট বলছে, বাংলাদেশে আগামী ১৫-১৬ মে অনুষ্ঠিতব্য যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পঞ্চম বৈঠক এবং সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভারতকে যুক্ত রেখে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা নিশ্চিতের বিষয়ে দুই পক্ষের আলোচনার কথা রয়েছে।

নেপালের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে মুখপাত্র মধু ভেতুওয়াল বলেন, এই বৈঠকের আলোচ্যসূচির মধ্যে একটি বিষয় হলো- ভারতের বিদ্যমান ট্রান্সমিশন লাইন এবং ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে আলাদা ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে কীভাবে দুই দেশের (বাংলাদেশ ও নেপালের) মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্য চালু করা যায়।

যেহেতু নেপাল ও বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে সংযুক্ত নয়, তাই শুধুমাত্র ভারতীয় ভূখণ্ড দিয়েই বাংলাদেশের কাছে নিজেদের বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারে নেপাল। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে ‘ইতিবাচক’ হয়েছে বলেও দ্য কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ভেতুওয়াল বলেন, ‘ট্রান্সন্যাশনাল ইলেক্ট্রিসিটি গ্রিড চালু করার জন্য ভারত যেহেতু ‘ওয়ান সান ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান গ্রিড’ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে এবং দেশটির প্রতিবেশী প্রথম নীতি রয়েছে, তাই নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হলে সেটি ভারতের নিজস্ব উদ্যোগকেই সহায়তা করবে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক সৌর জোটের সমাবেশের সময় প্রথম এই উদ্যোগের প্রস্তাব করেছিলেন। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে— সাধারণ গ্রিডের মাধ্যমে প্রায় ১৪০টি দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা, যা পরিষ্কার এবং কার্যকর সৌর বিদ্যুতের স্থানান্তর নিশ্চিত করবে।

ভারত ও নেপালের মধ্যে গত বছরের এপ্রিলে জারি করা পাওয়ার সেক্টর কোঅপারেশনের জয়েন্ট ভিশন স্টেটমেন্ট অনুসারে, নেপাল ও ভারত বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতাকে আরও প্রসারিত করতে চায় এবং বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল ফ্রেমওয়ার্কের (বিবিআইএন) অধীনে অংশীদার দেশগুলোকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।

বাংলাদেশের সাথে আলোচনার আরেকটি এজেন্ডা হলো, ভারতের বিদ্যমান সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছে নেপালের ৪০ মেগাওয়াট থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করা। মূলত নেপালে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করার বিষয়ে গত বছরের আগস্টের শুরুতে সমঝোতায় পৌঁছায় ঢাকা ও কাঠমান্ডু।

এই সমঝোতার অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করতে পারবে। আর এ লক্ষ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের ‘এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড’কে (এনভিভিএন) অনুরোধ করতে সম্মত হয় নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড।

গত বছরের ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিত যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতি অনুসারে, বাংলাদেশের ট্রান্সমিশন লাইন সিস্টেম ভেড়ামারা হাই ভোল্টেজ ডাইরেক্ট কারেন্টের মাধ্যমে নেপাল থেকে ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে বলে উভয় পক্ষ একমত হয়।

এছাড়া সেসময় উভয় পক্ষ ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের জন্য নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতেও রাজি হয়।

গত বছরের সমঝোতা অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ভারতের বিদ্যুৎ লাইন ব্যবহার করে ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তির জন্য এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেডকে অনুরোধ করার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশের সাথে সমঝোতা চুক্তি অনুসারে, নেপালের এনইএ দ্বিপাক্ষিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগমের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ইতোমধ্যেই একটি অনুরোধ পাঠিয়েছে।

এদিকে নেপাল ও ভারতের মধ্যে যুগ্ম সচিব-পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং সচিব-পর্যায়ে জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির ১০ম বৈঠক চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। নেপালের জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নেপাল ওই প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরই সেটার অনুমোদন দেওয়া হবে বলে ওই বৈঠকে সম্মত হয় ভারত। আর এরপরই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে নেপাল।

ভেতুওয়াল বলেছেন, ‘নেপাল থেকে ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ নিজেও ভারতের সাথে আলোচনা করেছে।’

দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট বলছে, নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আরেকটি বিষয় হলো ৬৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সানকোশি ৩ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উন্নয়ন। গত বছরের আগস্টে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠক এবং যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের সময় এই অবকাঠামো যৌথ উদ্যোগ বিনিয়োগের মাধ্যমে নির্মাণ করতে সম্মত হয়েছিল উভয় দেশ।

ভেতুওয়াল বলেছেন, আমরা এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন প্রতিবেদন এবং পরিবেশের প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন বাংলাদেশের কাছে পাঠিয়েছি। পরে আমরা বাংলাদেশের কাছ থেকে কিছু প্রতিক্রিয়া পেয়েছি এবং সেসব বিষয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, পরবর্তী উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রকল্পটি নিয়ে আরও আলোচনা করা হবে।

অবশ্য নেপাল এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে এই প্রকল্পের নির্মাণে এগিয়ে গেলেও নেপালি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এই প্রকল্পে ভারতের সম্পৃক্ততা বিদ্যুৎ বাণিজ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই প্রকল্পে ভারতের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়ে আমরা এখনও বাংলাদেশের সঙ্গে পরামর্শ করিনি। তবে এটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন আরও সহজ করবে।

মে  ০৭, ২০২৩ at ১৯:২৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর