বাড়ির পাশে ডাইং কারখানা, গভীর নলকূপে গরম পানি

ছবি- সংগৃহীত।

নিরাপদ ও সুপেয় পানির জন্য বসানো হয়েছিল গভীর নলকূপ। কিন্তু সেটি থেকে উঠছে আগুন-গরম পানি। আট বছর আগে প্রথম দফায় মোটর সরিয়ে পরিত্রাণ মিললেও তিন বছর ধরে ফের গরম পানি উঠছে নলকূপ থেকে।

এমন অভিজ্ঞতা গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী (গিলারচালা) এলাকার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিনের। স্থানীয়রা এই গরম পানির কারণ উদঘাটন ও সমাধানের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সরেজমিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে, গভীর নলকূপ থেকে গরম পানি বের হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ালে আশপাশের এলাকা থেকে অনেকে সাহাব উদ্দিনের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। তাদের ইচ্ছা নলকূপের গরম পানি ছুঁয়ে দেখা।

আরো পড়ুন :
> রাণীশংকৈলে প্রচন্ড তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ: রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা
> বেনাপোলে পাসপোর্ট যাত্রীর পেটে মিললো ১৬ লক্ষ টাকার স্বর্ণের বার

স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুল জানান, ২৬০ ফুট গভীর নলকূপ দিয়ে গরম পানি বের হচ্ছে। তবে কেন এমনটা হচ্ছে, কেউ বলতে পারছে না।

একই এলাকার আরিফ হোসেন জানান, সাহাব উদ্দিনের বাড়ির নলকূপে বেশ গরম পানি ওঠে। বাড়ির বাসিন্দারা ব্যবহারের কয়েক ঘণ্টা আগে সংগ্রহ করে পাত্রে পানি রেখে দেয়। ঠাণ্ডা হলে তারা তা ব্যবহার করে। তার ভাষ্য, এই নলকূপের পানি সাবান-পানির মতো সামান্য পিচ্ছিল। গন্ধও একটু অন্যরকম।

বাড়ির মালিকের ছেলে কাউসার বলেন, “১৫-১৬ বছর আগে বাড়ির সামনে বাবা গভীর নলকূপ বসান। এর দুই বছর পরে নলকূপটি থেকে কালো ও হালকা গরম পানি বের হতে শুরু করে। এরও এক বছর পরে সুপেয় ও নিরাপদ ঠাণ্ডা পানির আশায় মোটর উঠিয়ে পাঁচ হাত দূরে ফের গভীর নলকূপ বসানো হয়। নতুন নলকূপটি থেকে শুরুর কয়েক বছর ঠাণ্ডা পানি বের হলেও গত তিন বছর ধরে সেই অস্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। ওই নলকূপের পানি তাৎক্ষণিক কোনো কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।” পাঁচ বছর ধরে বাড়িটিতে ভাড়া থাকেন নাসিমা আক্তার মিমি।

তিনি বলেন, আগে নলকূপটির পানি ভালো ছিল। গত তিন বছর ধরে গরম পানি বের হওয়ায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ পানি দিয়ে গোসল করা যায় না। শরীর চুলকায়, চুল পড়ে যায়। হাত-মুখ ধুয়ে স্বস্তি পাওয়া যায় না। ফ্রিজে পানি রেখে ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করতে হয়। আবার ফ্রিজের পানি দিয়ে গোসল করলে ঠাণ্ডা লেগে যায়।বাড়িটির ঠিক পেছনেই একটি টেক্সটাইল ডাইং কারখানার অবস্থান।

বাড়ির মালিক সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রথমে ঘরের সামনে ২২০ ফুট গভীর নলকূপ বসাই। দুই বছর পরে সেটি থেকে পাশের কালো পানি বের হতে থাকলে সেখান থেকে পাঁচ হাত দূরত্বে ২৬০ ফুট গভীর আরেকটি নলকূপ বসানো হয়। নতুন নলকূপ থেকে স্বাভাবিক পানি পাচ্ছিলাম প্রথম দিকে। কিন্তু তিন বছর ধরে এটি থেকেও গরম পানি আসা শুরু হয়। তিন বছর ধরে নলকূপের পানি কুসুম গরম। বিকল্প না থাকায় সংরক্ষণ করে ঠাণ্ডা হলে এই পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ কারণে কেউ আমার বাড়ি ভাড়া নিতে চান না।। যারা এখন আছেন, তারাও চলে যেতে চাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ির পাশেই ডাইং প্ল্যান্ট বসিয়েছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডে কর্তৃপক্ষ। তাদের কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে এক প্রকৌশলী এসে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু ‘দেখি দেখি’ বলে তিন বছর পার করে দিলেও তারা কোনো সামাধান দিচ্ছেন না।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, গরম পানি বের হওয়ার খবরে আমি নিজ উদ্যোগে ওই নলকূপের পানি সংগ্রহ করে বেসরকারি কয়েকটি দপ্তরে পাঠিয়েছি। কেন গরম পানি বরে হচ্ছে তা পরীক্ষা ছাড়া বলা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার আহ্বান জানাই।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সহকারী প্রকৌশলী ফয়সাল খান বলেন, গভীর নলকূপ থেকে গরম পানি আসার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। অফিস সময়ে বিষয়টি দেখব। তবে এখানে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। আমরা আর্সেনিক পরীক্ষা করতে পারব। বাড়ি মালিকের ব্যক্তি উদ্যোগে পানি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করাতে হবে।

মে  ০৭, ২০২৩ at ১৬:৪১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর