গড় উৎপাদন বাড়লেও অনাবৃষ্টিতে বাড়েনি রাজশাহীর আম

ছবি- সংগৃহীত।

রাজশাহীতে এবার আমের গড় উৎপাদন বেড়েছে। তবে অনাবৃষ্টির কারণে আমের আকার তুলনামূলক ছোট হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র।

জেলায় এবার আমের ব্যাপক মুকুল এসেছিল। গুটিও ধরেছিল প্রচুর। তবে কাঙ্ক্ষিত সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় গুটি ঝরতে শুরু করে। অনেক গুটি পচেও নষ্ট হয়। আম পাড়ার সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, আমের আকার বিগত বছরগুলোর তুলনায় ছোট। বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, অনাবৃষ্টির কারণেই এমনটা হয়েছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, “সাধারণত গাছে আমের সংখ্যা বেশি থাকলে আকার ছোট হয়। এবার প্রতিটি গাছেই সংখ্যার দিক দিয়ে আম খুব ভালো হলেও আকারে ছোট হয়েছে। এটি অনাবৃষ্টির প্রভাব।”

এদিকে, গত পাঁচ বছর ধরে রাজশাহীতে আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। গাছে থেকে পরিপক্ব হওয়ার পরই যেন কেবল নিরাপদ আম ভোক্তাদের কাছে যায় সেটিই এই সময়সীমার লক্ষ্য। সেই হিসেবে গত বছরও (২০২২ সাল) আম পাড়া শুরু হয় ১৩ মে, চলে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। এ বছরও ২০ আগস্ট পর্যন্ত আম পাড়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে ১১ দিন আগেই আম পাড়া শুরুর ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনাও উঠেছে।

সূত্র বলছে, ফল গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শ উপেক্ষা করে জেলার কোথাও কোথাও এ বছর ১১ দিন আগেই আম পাড়া শুরুর সিদ্ধান্ত দেয় জেলা প্রশাসন।

আম চাষিদের ভাষ্য, আগাম কিছু জাতে পরিপক্বতা এলেও বেশিরভাগ আমই এখনও অপরিপক্ব। পরিপক্বতা বলতে আমের ভেতর আঁটি হওয়াকে বোঝায়। কারণ আঁটি হওয়ার আগেই পাড়া হলে সেই আম প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক নিয়মে পাকে না।রাসায়নিক দিয়ে পাকাতে হয়। আর অসদুপায়ের পাকানো ওই আম কাটার পর দেখা যায় আঁটি ধবধবে সাদা এবং কাঁচা!

তাই চাষিরা পরিপক্বতা না আসা পর্যন্ত গাছ থেকে এখন কোনো আমই নামাতে চান না। আর এরই মধ্যে ‘‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার” ঘোষণা করা হয়েছে। তাই গত ৪ মে থেকে গুটি (চোষা) জাতের আম নামানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ কৃষক এখন অপেক্ষা করছেন। কারণ গুটি আমের পরিপক্বতা আসতে কম করে হলেও আরও ১০-১২ দিন সময় লাগবে।

চাষিদের অভিযোগ, এবার আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করতে গিয়ে অনেকটাই তড়িঘড়ি করে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। কারণ এখনও বেশিরভাগ বাগানেই আম পাকেনি। আর এসব বাগান পর্যবেক্ষণ না করে বা চাষিদের সঙ্গে না বসেই আম পাড়ার তারিখ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে।

তাই কাগজে-কলমে মৌসুম শুরু হলেও এখন গাছেই শোভা পাচ্ছে রাজশাহীর আম। আর হাট-বাজারে ঝুড়ি এখনও ফাঁকা। অনেক মানুষ আম কিনতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত খালি হাতেই ফিরছেন। এমন পরিস্থিতিতে আম পাড়ার বেঁধে দেওয়া সময় নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

তবে জেলা প্রশাসনের ভাষ্য, একাধিক বাগানের আম পাকা শুরু করেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ছিল এসব বাগানের চাষিরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। আর সেজন্যই সমন্বয় সভা করে আম পাড়ার শুরুর জন্য বলা হয়েছে।

মে  ০৭, ২০২৩ at ১০:৫৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর