কোহিনূর হীরা নিয়ে যত বিতর্ক

শনিবার (৬ মে) ব্রিটেনের ৪০তম রাজা হিসেবে তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক হলো। আগেই বাকিংহাম প্রাসাদ জানিয়ে দেয়- এ অনুষ্ঠানে কোহিনূর হীরা ব্যবহার করা হবে না। কোহিনূর হীরার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন রাজবংশের উত্তরাধিকারের সম্পর্ক; জড়িয়ে আছে মৃত্যু ও ধ্বংসের ইতিহাস এবং সৌন্দর্য। এই রত্ন বহুবার চুরি হয়েছে। এটি নিয়ে হয়েছে লড়াই। ১০৫ ক্যারেটের ডিম্বাকৃতির কোহিনুর পৃথিবীর সবচেয়ে বিতর্কিত ও আলোচিত হীরা।

মূল্যবান হীরাটি অনেকবার হাতবদল হয়েছে। উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে এটি চলে যায় ব্রিটিশদের দখলে। এটি মুঘল শাহজাদা, ইরানি যোদ্ধা, আফগান শাসক ও পাঞ্জাবি মহারাজাদের হাত ঘুরে বর্তমানে ঠাঁই পেয়েছে টাওয়ার অব লন্ডনে। হীরাটি ছিল রানী ভিক্টোরিয়ার বিশেষ সম্পত্তি। তিনি মূলত ব্রোচ হিসেবে পরতেন এটি। কিন্তু পরে ক্রাউন জুয়েলসের অংশ হয়ে ওঠে রত্নটি। খবর বিবিসির।

আরো পড়ুন :
> বীরগঞ্জের বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে মাঁচায় মাঁচায় দুলছে চাল কুমড়া
> নিখোঁজের ৩ দিন পর ডোবা থেকে কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার

২০২২ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর নতুন করে আলোচনায় আসে কোহিনুর। অনেক ভারতীয় তখন হীরাটি ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

১৮৪৯ সালে কোহিনুর যখন তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেলের হাতে আসে, তখন তিনি তা রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি নেন। হীরাটি কত মূল্যবান, তাও রানীর সামনে তুলে ধরার চিন্তা করেন।

অনেকে কোহিনূরকে ভারতের অন্যতম মূল্যবান হীরা মনে করলেও ইতিহাস ঘেঁটে গবেষকরা দেখেছেন, ১৯০ দশমিক ৩ ক্যারেটের কোহিনুর যখন ব্রিটেনে নেওয়া হয়, এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ আরও দুটি হীরার খোঁজ পাওয়া যায়। একটি হলো দরিয়া-ই-নূর, যার অর্থ আলোর সাগর (১৭৫-১৯৫ ক্যারেট) ও অপরটি হলো গ্রেট মোগল ডায়মন্ড হিসেবে পরিচিত অরলভ হীরা (১৮৯.৯ ক্যারেট)। উনিশ শতকে হাতবদল হয়ে যখন কোহিনুর পাঞ্জাবে ফেরে, তখন থেকেই এটি সর্বশ্রেষ্ঠ হীরার তকমা পেতে শুরু করে।

অনেকেই মনে করেন, প্রকৃত কোহিনুর হয়তো একদম নিখুঁত ছিল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোহিনুর বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা তো নয়ই, এর অবস্থান বিশ্বের বৃহত্তম হীরার ধারেকাছেও না। এর অবস্থান ৯০তম। অনেকেই দাবি করেন, কোহিনুর ত্রয়োদশ শতকে ভারতের কোল্লুর খনিতে পাওয়া যায়। কিন্তু এ কথা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।

ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান এই হীরা নিজেদের বলে দাবি জানিয়ে আসছে। বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, হীরাটি ‘বিজয়ী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধিপত্যের প্রতীক’। তবে এ হীরাকে ঘিরে যে ইতিহাস ও বিতর্ক রয়েছে, তা চলতে থাকবে। বিতর্কের কথা ভেবেই রাজা চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানেও ব্যবহার হয়নি কোহিনুর হীরা।
মে  ০৭, ২০২৩ at ১০:৩৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর