মণিপুরের মনিপুর জ্বলছে : সহিংসতায় নিহত ১১

ছবি- সংগৃহীত।

গত কয়েকদিনের সহিংসতায় ভারতের মনিপুর রাজ্য লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এই সহিংসতায় অনেক মানুষের প্রাণ গেছে। এই সহিংসতা বন্ধে রাজ্য সরকার কঠোর পদক্ষেণ নিয়েছে। নামিয়েছে সামরিক বাহিনী। এতেও থামছে না সহিংসতা। আইনশৃঙ্খলতা বাহিনীর সদস্যেরকে সন্ত্রাসীদের দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতীগত সহিংতায় ইতোমধ্যে অনেকে এলাকা ছেড়েছে।

জানা যায়, ঘটনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিজেপির এমপিদের গণপিটুনি দিয়েছে। এদিকে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে চলমান সহিংসতায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। আনুষ্ঠানিকভাবে মৃতের সংখ্যা জানানো হয়নি, তবে ইম্ফলের স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সংবাদ পত্রগুলো অন্তত ১১ জন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে।

আরো পড়ুন :
> যশোরে কোটি টাকার স্বর্ণ ফেলে নদীতে ঝাপ!
> যশোরে তিন চোর আটক, মালামাল উদ্ধার

রাজ্যে চলমান সহিংসতায় এই প্রথম প্রাণহানির কথা জানাল রাজ্য সরকার। তবে বিরোধীদের অভিযোগ ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি মনিপুরের সহিংসতা বন্দের চেয়ে অন্য রাজ্য করনাটের ভোট নিয়ে ব্যস্থা।

সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষকে উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের পুলিশ মহানির্দেশক পি ডউঙ্গেল। প্রায় এক হাজার জন মণিপুর থেকে আসামের কাছাড় জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে সেখানকার এসপি জানিয়েছেন।

কারফিউ ও দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ রাজধানী ইম্ফলসহ গোটা রাজ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ জারি রয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকার বৃহস্পতিবার রাতেই সেনাবাহিনী পাঠাতে শুরু করেছিল। শুক্রবার তারা জানিয়েছে সহিংসতা বন্ধ করতে তারা আরো ২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাচ্ছে। বাহিনী মোতায়েন এবং আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব সিনিয়র কেন্দ্রীয় বাহিনীর অফিসারদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করেই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্র সরকার নিয়ে নিয়েছে। কোনো রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে কেন্দ্রীয় সরকার এই ধারা প্রয়োগ করে থাকে, যদিও এটি খুবই বিরল। এই ধারার প্রয়োগ অনেকটা জরুরি অবস্থা জারির মতো।

মণিপুরের সহিংসতার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কর্ণাটকে তার নির্বাচনী প্রচার বাতিল করে মণিপুরের ওপরে নজরদারি চালাচ্ছেন বলে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে। বিরোধী কংগ্রেস বলছে রাজ্যের বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

ভারতীয় রেল জানিয়েছে মণিপুরে সহিংসতার প্রেক্ষিতে তারা ওই রাজ্যে কোনো ট্রেন এখনই পাঠাচ্ছে না। আর প্রতিবেশী রাজ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও অরুণাচল প্রদেশ মণিপুরে পাঠরত তাদের রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

সেনা ও অর্ধসৈনিক বাহিনী ফ্ল্যাগ মার্চ করছে পুরো রাজ্যেই। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার অশান্তি কিছুটা কমেছে, তবে রাজধানী ইম্ফল ও সহিংসতার উৎস যে চূড়াচন্দ্রপুর, সেখানে এখনো প্রবল উত্তেজনা রয়েছে।

তবে সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়ার আগেই দুদিন ধরে বহু বাড়িঘর, দোকান গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। লুঠ হয়েছে দোকান বাজার।

সাত-আটটি পুলিশ থানা থেকে বন্দুক ও গুলি লুঠ হয়েছে। পুলিশ মহানির্দেশক শুক্রবার জানিয়েছেন, যারা ওগুলো লুঠ করেছে, তারা যদি নিজের থেকে ফেরত দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের শাস্তি দেয়া হবে না।

কিন্তু যারা বন্দুক ফেরত দেবে না, তাদেরকে জাতীয় সন্ত্রাস দমন এজেন্সির তদন্তের মুখে পড়তে হবে।

সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বন্ধ থাকলেও অনেক ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে, যার সাথে সাম্প্রতিক সহিংসতার কোনো যোগাযোগ নেই।

মে  ০৬, ২০২৩ at ১২:৫৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর