মে দিবস বড় লোকগো দিবস, উনারা আজ বৌ-বাচ্চা নিয়া ঘুরতে বেরাইব

ছবি- সংগৃহীত।

ঢাকা শহরে এক গ্লাস পানি খাইলে দুই টাকা লাগে। ঘর ভাড়া, ভাতের খরচসহ এই শহরে থাকতেও লাগে মেলা টাকা। একদিনও বসে থাকার সময় নাই, তাই আমাগো লাগি মে দিবস না। আমাদের জন্য প্রতিদিন পেট দিবস। কামে বের হইলে ভাত জুটে নইলে না। তাই আমরা মে দিবস কী বুঝি না।

এভাবেই মে দিবস অথবা বিশ্ব শ্রমিক দিবস উপলক্ষে নিজের জীবনের গল্প বলছিলেন নেত্রকোনা থেকে আসা শ্রমিক জয়নাল মিয়া।

আরো পড়ুন :
> বোরকা পরে যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা
> আজ মহান মে দিবস

সোমবার বিশ্ব শ্রমিক দিবসের সকালেও জয়নাল মিয়াদের মতো কমপক্ষে ৪০০-৫০০ ভাসমান শ্রমিক জীবিকার তাগিদে রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় হাজির হন।

এই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,এখানে আসা অধিকাংশ শ্রমিক নির্মাণ কাজের রাজ মিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করে থাকেন। এছাড়া মাটির কাজও করেন তারা। তবে প্রতিদিন এখানে ৫০০ জন ভাসমান শ্রমিক এলেও সবাই কাজ পান না। তাদের মধ্যে শ্রমিক মাত্র ১০০-২০০ জন কাজ পেয়ে হাসিমুখে ফিরলেও বাকি সবাইকে জীবিকা না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ফিরতে হয়ে। তাই তাদের কাছে বিশ্ব শ্রমিক দিবসের আলাদা কোনো অর্থ নেই। তাদের কাছে প্রতিদিনি কাজ পাওয়াই একটি বড় যুদ্ধ।

সকাল ৭ টা থেকে কাজের জন্য বসে থাকা শ্রমিক নরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাগো জন্য প্রতিদিন মে দিবস। আর আমাগো মে দিবস হইলো টাকা লইয়া ঘরে ফিরা যাতে বৌ পোলাপাইন ভাত খাইতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন কাজ পায় না, আজ লক্ষ্মণ দেখে মনে হচ্ছে আজও পাব না। আর কাজ পেলে প্রতিদিন ৬০০-৮০০ টাকা পাওয়া যায়। মাসে ২০ দিনের বেশি কাজ পাই না। যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না।

এ সময় পাশে বসে থাকা হবিগঞ্জ থেকে আসা শ্রমিক জামাল মিয়া বলেন, মে দিবস বড় লোকগো দিবস। উনারা আজ ছুটিতে থাকব, বৌ-বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে বেরাইব। মে দিবস তো আমাগো লাইগা না। কারণ আমাদের পেটে খিদা। তাই প্রতিদিন পেট দিবস পালন করতে হয়। যে দিন কাজ পাই সে দিন ভালো যায়, আর যেদিন পায় না সে দিন খারাপ। এই হলো আমাদের জীবন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব শ্রমিক মো. সিরাজ বলেন, আমারে এখন কেউ নিতে চায় না বয়স হইছে বলে। আমি নাকি বেশি কামলা দিতে পারমু না, তাই জোয়ান মানুষ চাই সবাই। কিন্তু আমাদের কাজে না নিলে আমরা খামু কী। আমাদের তো বসাই খাওয়ানের কেউ নেই। যদি থাকতো তাহলে কি এই বয়সে কাজ করতে আসি।
এখানে আসা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এদের অধিকাংশের বাড়ি ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এরা এভাবে প্রতিদিন জোগালি কিংবা মাটির কাজ করতে নতুন বাজার এলাকায় বসেন। কিছু কাজ করে টাকা জমলে সেই টাকা এলাকায় তাদের পরিবারের কাছে পাঠান। সে টাকা দিয়ে তাদের পরিবার চল।

মে  ০১, ২০২৩ at ১২:১১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর