দুই’শ বছরের ঐতিহ্য কলার পাতায় খাবার খেয়ে ঈদ উদযাপন

ঈদের নামাজ শেষে দল বেঁধে কলার পাতায় করে সবার বাড়িতে খাবার খেয়ে ঈদ উদযাপন করা হয়। সে ধনী বা দরিদ্র হোক না কেন সবাই মিশে যান একই স্রোত ধারায়। আর এভাবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তারা ধরে রেখেছেন বছরের পর বছর। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদের দিন আসলে সকলেই মিলে একসাথে পড়েন ঈদের নামাজ। নামাজ শেষ করে এপরই শুরু হয় বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর আর শিশুদের দল বেঁধে বিভিন্ন বাড়িতে যাওয়া। বাড়িতে গিয়ে শুরু হয় কলা পাতায় করে ঈদের খাবার খাওয়া।

এ যেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রায় দুইশ বছর ধরে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের প্রায় তিনশ পরিবার এ রেওয়াজ চালিয়ে আসছেন। এসব খাবার খাওয়ার সময় প্লেট, গ্লাস বা চেয়ার টেবিলের কোন ব্যবস্থা থাকে না। মাটিতে বসে কিংবা হাতে হাতে কলার পাতায় সেমাই, মিষ্টি, পোলাও-মাংস খাওয়া হয়। এতে একদিকে যেমন গ্রামের সবার মধ্যে বেড়েছে ভ্রাতৃত্ববোধ, সহনশীলতা। থাকে সবার প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসা।

যে কারণে গ্রামটিতে ছোটখাটো কোন ঘটনা ঘটলে নিজেরাই তা মিটিয়ে নেন। যাতে থানায় হয় না কোন মামলা মোকদ্দমা। আগামীতেও এ ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে বলে জানালেন তারা। ভাটিয়াপাড়া গ্রামের নওশাদ মুন্সি (৬০)বলেন, প্রায় দুইশ বছর ধরে আমরা এভাবে ঈদ উদযাপন করে আসছি।

প্রতিটি বাড়ি বাড়ি স্লোগান দিয়ে আমরা বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকি। এতে আমাদের সকলের মধ্যে যেমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে। তেমনি সবার প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসা বাড়ে। ওই গ্রামের রওশন নামে এক যুবক বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই এভাবে দেখে আসছি আমাদের গ্রামে সকলে মিলে এভাবে ঈদ উদযাপন করে আসছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কলা পাতায় খাবার খেয়ে থাকি।

এটা আমাদের ঐতিহ্য। আগামীতেও আমরা এ ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করবো। শিশু রেহানা বলেন, আমি খুলনায় বড় হয়েছি। বাবার সাথে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। এখানে এসে দল বেঁধে খাবার খেতে যাচ্ছি। আমার খুব ভাল লেগেছে। রাইসা নামে এক শিশু বলেন, বাবার সাথে কলা পাতায় খাবার খেতে এসেছি। এবারই প্রথম আসলাম আমি এখানে আসার পর আমার খুবই ভালো লাগছে।

আরো পড়ুন :
> চেহারা ছাড়াও মেয়েদের ৫ জিনিস আকর্ষণীয় মনে করেন ছেলেরা
> রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন

ইকবাল হাসান বেনু বলেন, আমরা প্রতিবছরই এ ধরনের আয়োজন করে খাকি। কর্মব্যস্ততার কারণে গ্রামের অনেক মানুষ বাইরে থাকে। ঈদের সময় সকলে একত্রিত হই আমরা। গোবরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যান চৌধুরী শফিকুল রহমান টুটুল বলেন, গোবরা ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রাম ভাটিয়াপাড়া গ্রাম। এখানকার মানুষেরা তাদের সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ধরে রাখার জন্য প্রায় দুইশ বছর ধরে রাখার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে কলা পাতায় খাবার খেয়ে থাকেন । এটি গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ। আগামীতেও তারা এটি ধরে রাখবে বলে আমি আশাকরি।

এপ্রিল ২৪, ২০২৩ at ১২:০৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দুবি/সুরা