যশোরে প্রচন্ড দাবদাহ: নষ্ট হচ্ছে মৌসুমী ফল, সন্ধ্যার পর জমছে ঈদ বাজার

ছবি- সংগৃহীত।

বিদ্যুতের লোডশেডিং এ দুর্ভোগের মাত্রাকে আরো বাড়িয়েছে ।

প্রচন্ড দাবাদাহে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে যশোরাঞ্চলের জনজীবন। প্রতিদিন তাপমাত্রা বাড়ছে। সোমবার এখানকার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। আগামি এক সপ্তাহে কোন বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাকবনা নেই, একই তাপমাত্রাও অপরিবর্তন থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি পরিচালিত আবহাওয়া অফিস। এদিকে, বিদ্যুতের লোডশেডিং মানুষের এ দুর্ভোগের মাত্রাকে আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে।

আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, রবিবার যশোরের তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি, শনিবার ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার ছিল ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বৃহস্পতিবার ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ছিল ৩৯ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস ও মঙ্গলবার ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা অব্যাহত থাকার কারণে দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে । রোজাদার মানুষ একদম হাফিয়ে উঠছেন। কোনো কাজ না করলেও ঘামে শরীর ভিজে যাচ্ছে ।

আরো পড়ুন :
> পাইকগাছা উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
> ক্ষেতলালে মডেল মসজিদ উদ্বোধন

তার মধ্যে ঘনঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং মানুষের এ দুর্ভোগের মাত্রাকে আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে । একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাবার কারণে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
স্থানীয় শ্রমিকরা জানান, সূর্যের তেজে চোখেমুখে লাগছে। মনে হচ্ছে গরম হাঁড়ি থেকে বাষ্প বের হয়ে চোখ-মুখ পুড়ে যাচ্ছে। মাথায় করে মালামাল উঠানামা করতে পারছি না। মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নিয়ে আবারও কাজ করছি। কাজ না করলে সংসার চালাবো কিভাবে।

ভ্যানচালক সেলিম জানান বলেন, প্রখর রোদ ও তাপে ভ্যান চালানো সম্ভব হচ্ছে না । যাত্রীরও আমাদের খোলা ভ্যানে উঠছে না। সকালের দিকে ২-১ টি ভাড়া পেলেও ১১টার পর থেকে কোনো ভাড়া নেই । তাই গাছতলায় শুয়ে আছি।

অন্যদিকে, মুলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত । দিনের দাবাদাহ সন্ধ্যার পর কিছু কমলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটা করতে মার্কেটে ছুটছেন ।

এদিকে, আর মাত্র ২৬ দিন পর শুরু হবে মধু মাস । জ্যৈষ্ঠ মাসে হরেক রকম ফলের সমাহার ঘটে বাজারে । অনেক মানুষ এই মাসে ফলের স্বাদ গ্রহণ করতে উন্মুখ হয়ে থাকেন । মধুমাসে আম-কাঁঠাল-লিচুতে মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি । কিন্তু এবার কী হবে? যশোরের মানুষ পরিপূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেনতো ? এই আশঙ্কা এখন তীব্র্র হচ্ছে । আশঙ্কা বাগান মালিকদের। আর কৃষি বিভাগ বলছে প্রচন্ড তাপদাহে গুটি অবস্থায় ২০-৩০ শতাংশ ফল ঝরে যাচ্ছে। সামনে কাল বৈশাখী হতে পারে । তখনো কিছু ফল ঝরে গিয়ে নষ্ট হবে । সবমিলিয়ে ৫০ শতাংশ ফল পাওয়া যেতে না পারে ।

জেলা কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, যশোরে ৩ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে আম ও ৬৪৯ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এ বছর এই বাগান থেকে ৫৫ হাজার ৪০৭ মেট্রিকটন আম ও ৩ হাজার ৪৫৫ মেট্রিকটন লিচু উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছিল কৃষি বিভাগ। কিন্তু ধারণা বদলে যাচ্ছে।

প্রচন্ড তাপদাহে ইতিমধ্যে আমের গুটি পড়ে যাচ্ছে ব্যাপক হারে। সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা, মন্ডলগাতি, পতেঙ্গালী ও সুজলপুর গ্রামের একাধিক আম বাগান ঘুরে গুটি পড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। পতেঙ্গালী গ্রামের রাজুর বাড়ির সামনের একটি আমবাগানে প্রচুর পরিমাণে আমের গুটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ অবস্থা কেন জানতে চাইলে আশপাশের লোকজন হাতাশার সুরে বলেন,‘এ বছর আর আম পাওয়া যাবে না। অনেক বেশি দামে আম কিনতে হবে।’

একই অবস্থা লিচুতেও। ঝুরে পড়ছে লিচুর গুটিও। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়া এবং তীব্র তাপদাহের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

এদিকে, যশোরে তাপমাত্রা কমছেই না। বরং দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। রবিবার যশোরে তাপমাত্রা ছিল ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্থানীয় মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি পরিচালিত আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানান, বিকেল তিনটের পর তাপমাত্রা আরও বাড়ছে/কমছে। তারা বলেন, আপাতত বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই। তবে, আগামী ২৩ কিংবা ২৪ এপ্রিল বৃষ্টি হতে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এপ্রিল ১৭, ২০২৩ at ২০:৩৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ ইর