অভয়নগরে মাদকের ছোবলে ধ্বংশের মুখে যুবসমাজ, বেড়েছে চুরি ছিনতাই

ছবি- সংগৃহীত।

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় মাদকের ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ, বাড়ছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা রকম অপরাধ। উপজেলারপ্রায় প্রতিটি গ্রামে গড়ে উঠা মাদক সিন্ডিকেটের ৩ থেকে ৪জন মাদক বিক্রেতার কবলে পুরো উপজেলা মাদক সেবনে সয়লাব ।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতরা কৌশলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যুবক যুবতীদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের মরণ নেশা মাদক পৌঁছে দেই । যে কারণে ওই সব মাদক ব্যবসায়ীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে প্রকাশ্য করছে মাদক ব্যবসাও সেবন । ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় হাতের নাগালে থাকলেও পর্যাপ্ত তথ্য প্রমানের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে নিতে পারেনা কঠোর ব্যবস্থা । যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যেরা কিছু মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করলেও বিভিন্ন কারণে তাদের থেমে যেতে হয় । ফলে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা রয়েছে বহালতবিয়তে । যে কারণে উপজেলা ব্যাপি উঠতি বয়সী যুবক যুবতীরা ধ্বংস হচ্ছে,দেদারছে সেবন করছে মাদক । ভুক্তভোগী অভিভাবক মহল রয়েছে চরম বিপাকে, মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেকে চুরি ছিনতাই করছে । আবার অনেক মাদক সেবনকারী মা বাবার সাথে করছে অমানবিক আচরণ এবং মাদকাসক্ত সন্তান মাদকের টাকার জন্য বাড়ির মালামাল ভাংচুর বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে দিন দিন । কিছুতেই মাদকাসক্ত সন্তানদের মরণ নেশা মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে পারছেনা অভিভাবক মহল ।

আরো পড়ুন :
> যশোরে প্রচন্ড দাবদাহ: নষ্ট হচ্ছে মৌসুমী ফল, সন্ধ্যার পর জমছে ঈদ বাজার
> পাইকগাছা উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

এবিষয়ে কথা হয়, উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের আবু হোসেন বলেন, আমার একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান, মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে, তাকে নিয়ে আমি ও আমার স্ত্রী খুবই বিপদে আছি, ঘরের একটা মাল জিনিসপত্র নেই ওই ছেলে সব বিক্রি করে ফেলেছে কিছু বলতে গেলেই তেড়ে আসে মারপিট করতে । অনুসন্ধানে জানা গেছে উপজেলার বর্ণি গ্রামে আকবার হোসেন প্রকাশ্য গাঁজা ব্যবসা করে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা এলাকাবাসীর চোখে পড়েনি ।

সূত্রে জানা গেছে, ওই মাদক বিক্রেতা আকবার হোসেন বর্ণিসহ হরিশপুর ও আসপাশের সব স্থানে যুবকদের কাছে প্রকাশ্য গাঁজা বিক্রি করে । অন্য দিকে ঈদকে সামনে রেখে পুলিশের তালিকাভূক্ত উপজেলার একাধিক মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্য মাদক বিক্রি করছে যা একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে । ফলে যুবকদের বুক ফুলিয়ে নওয়াপাড়ার অলিগলিতে মাদক সেবন করতে দেখা যায় ।
তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে মাদক সেবনের এক অভিনব কৌশল। নওয়াপাড়া বউবাজার এলাকায় জনৈক চা দোকানের সামনে সন্ধ্যার পর দেখা যায় সুন্দরী মহিলাদের আড্ডা যেখানে বসে কৌশলের মাধ্যমে মাদক সেবন করে ওই নারীরা । তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীরা মাদক সেবনের জন্য ছোট বাচ্চাদের ব্যবহার করে, সেই সব ছোট বাচ্চারা নওয়াপাড়া ড্রাইভারপাড়ার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গোপনে মাদক এনে ওই নারীদের কাছে এনে দেই । ফলে পুলিশের নাগের ডগায় এমন পন্থায় মাদক ব্যবসা সেবন করলেও থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে উপজেলার প্রায় সকল গ্রাম ও নওয়াপাড়া শহরে এখন মাদক ব্যবসা সেবন ভয়াবহতা রুপ নিয়েছে । এসব এলাকার মধ্যে সব থেকে মাদক বেচা বিক্রি পয়েন্ট গুলো হলো, ভৈরব সেতুর আশপাশের এলাকা, চেংগুটিয়া ঘাট এলাকা, দেয়াপাড়া, শংকরপাশা, লেবুগাতী ব্রিজ এলাকা,ধোপাদী, ভাঙ্গাগেট, লক্ষিপুর, আলীপুর, চলশিয়া, বারান্দি, রানাগাতি, সিদ্দিপাশা, রাঙ্গার হাট, গোপিনাথপুর, মথুরাপুর, হরিশপুর, বর্ণি, কামকুল, প্রেমবাগ রেইল লাইনও বাওড়কুল চায়না মার্কেট এলাকা শালবন নদীরকুল জিয়াডাঙ্গ,আমডাঙ্গা,পায়রাসহ নওয়াপাড়া পৌরসভার ড্রাইভারপাড়া,কলোনি এলাকা, হাজি সাহেবের বাফার ঘাট, হাজির গোডাউনের পেছনে রেললাইনের উপর, রেলওয়ে কোয়ার্টার এলাকা, প্রফেসরপাড়া, শংকরপাশা স্কুলের পাশে বুইকরা হাসপাতাল এলাকা, রাজঘাট, তালতলাসহ অভয়নগর উপজেলায় মাদক ব্যবসা সেবন সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ।
সচেতন মহল মনে করে, পুলিশের তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরুরি কঠোর ব্যবস্থা না নিলে কোমলমতি যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে পড়বে । এবিষয়ে অভয়নগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) একেএম শামীম হাসান জানান, মাদক নির্মুলে আমার থানার প্রতিটি অফিসার কাজ করে যাচ্ছে কিছুতেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবেনা, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত আছে থাকবে ।

এপ্রিল ১৭, ২০২৩ at ২০:৪৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জাহোহৃ/ ইর