দুই সিটিতে আ.লীগের অপরিবর্তিত, ৩ সিটিতে নতুন মুখ

আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত হবে আগামীকাল শনিবার। এই পাঁচটিতে আওয়ামী লীগের টিকেট কে পাচ্ছেন তা নিয়ে ভোটার ও মেয়র প্রার্থীরা টানটান উত্তেজনায় পার করছেন প্রতিটি মুহূর্ত।

দলীয় প্রার্থী ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকলেও দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধর্না দিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে পাঁচ সিটিতে ৪১ জন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও খুলনা ও রাজশাহীতে আসছে না কোনো পরিবর্তন। সিলেটে, গাজীপুর ও বরিশালে থাকবে চমক। এই তিন সিটিতে নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে।

স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, সিলেটে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, গাজীপুরে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও বরিশালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে দলের প্রার্থী করার সম্ভাবনা বেশি।

এছাড়া, খুলনার বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং রাজশাহীতে বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নৌকার প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত, এখন কেবল ঘোষণার অপেক্ষা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান  বলেন, আগামীকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত হবে, কে হচ্ছেন এই পাঁচ সিটিতে নৌকার প্রার্থী। এর আগে কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়।

প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের এক সভা কাল (শনিবার) বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে হবে। এ উপলক্ষে গত ৯-১২ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। পাঁচ সিটি করপোরেশন ছাড়াও ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা, চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও গোপালদী, বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার তালোড়া, টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভার মেয়র পদে ও সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীদেরকেও মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হয়।

জানা গেছে, গাজীপুর সিটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ১৭ জন আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন পাওয়ার জন্য অনেকে চেষ্টা করলেও দল গাজীপুর মাহনগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানকেই মনোনয়ন দিতে পারে। ২০১৩ সালের ভোটে আজমত উল্লা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির এমএ মান্নানের কাছে পরাজিত হন। পরেরবার ২০১৮ সালে দলের মনোনয়নে জয়ী হন জাহাঙ্গীর আলম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি বিতর্কিত অডিওর জেরে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হন জাহাঙ্গীর। দল থেকে বহিষ্কারের সাতদিন পর তাকে মেয়র পদ থেকেও বরখাস্ত করে সরকার। গত ১ জানুয়ারি দল তাকে সাধারণ ক্ষমা করলেও মেয়র পদে আর ফেরানো হচ্ছে না। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, জনপ্রিয়তার কারণে জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে তারই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

অপরদিকে, সিলেট সিটিতে দশজন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। ক্লিন ইমেজ, দল ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে তার ভূমিকার জন্য তিনি সিলেটে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। দুঃসময়ে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও ইউরোপ আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত করতে ভূমিকা রাখায় নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাকেই বেছে নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর কয়েক মাস আগে থেকেই তিনি প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

বরিশালে সাতজন প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তার পরিবর্তে চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে বেছে নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিবাদ, ভোট দিতে গিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে গালি দেয়া, স্থানীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বিভেদসহ নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জর্জরিত থাকার অভিযোগে মেয়র পদে মনোনয়ন পাচ্ছেন না তিনি।

এছাড়া, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা মঞ্চে সাদিক আবদুল্লাহর জন্য কোনো নির্দিষ্ট পাস ইস্যু করা হয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচিতে অংশ নিতে টুঙ্গিপাড়া গেলে সেখানে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ সস্ত্রীক দেখা করেন।

আধুনিক রাজশাহী নগরীর রুপকার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প দেখছে না ক্ষমতাসীন দলটি। তিনি গত ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে আবারো মেয়র পদে নির্বাচন করতে বলেন। রাজশাহী আওয়ামী লীগে কোন্দল ও চরম বিরোধ থাকলেও রাজশাহী সিটিতে মেয়র খায়রুজ্জামানের কোনো বিকল্প নেই বলে রব উঠেছে। গত পাঁচ বছরে রাজশাহী সিটিকে আমূল বদলে দিয়েছেন মেয়র লিটন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনা সিটি নির্বাচনে পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন। তিনি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

এদিকে, নির্বাচন কমিশন পাঁচ সিটিতে ভোটের জন্য তপশিল ঘোষণা করেছে। জাতীয় নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত হলেও সিটি করপোরেশনের ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে। ঘোষিত তপশিল থেকে জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৫ মে। খুলনা ও বরিশাল সিটিতে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেটে ভোট হবে ২১ জুন।