ভুট্টা গাছে মোচা আছে ভিতরে দানা নেই; দিশেহারা কৃষক

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইয়েস এগ্রো সাইন্স কোম্পানীর হিরো হাইব্রিড জাতের ভুট্টা বীজ লাগিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা । ভুট্টা গাছে মোচা আছে কিন্তু ভিতরে দানা নেই ।

উপজেলার ডাউয়াবাড়ী এলাকার হত দরিদ্র কৃষক জোবেদুল ঋনের টাকায় ৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে লাগিয়েছিলেন হাইব্রিড হিরো জাতের ভুট্টা বীজ । তিন মাস পরেই তা চোখের পানিতে পরিণত হয়েছে । গাছে মোচাঁ আছে কিন্তু ভিতরে দানা নেই । এ ফলন দেখে কাউকে কিছু বলতে পারছেন না শুধু নিরবে কাদঁছেন তিনি । শুধু এ কৃষক নয় তার মতো অবস্থা তিস্তা চরাঞ্চলের অনেক চাষীর । এতে কান্নার মিছিল বাড়লেও দেখার যেন কেহ নেই । বীজ ডিলার ও কোম্পানির প্রতিনিধির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতনদের কাছে বিচার চাইলেও পাননি ।

আরো পড়ুন :
> রংপুর রেঞ্জের সর্বশ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইউনিট নির্বাচিত হয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা
> তথ্যমন্ত্রীর পক্ষে রাঙ্গুনিয়ায় যুবলীগ নেতা তৌহিদ চৌধুরীর ঈদ উপহার বিতরণ

হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, দেশের বৃহৎ একটি ভুট্টার চাহিদা হাতীবান্ধা উপজেলা থেকে সরবরাহ করা হয় । বিশেষ করে লালমনিরহাটের তিস্তা পারের বিস্তীর্ণ এলাকায় এ ফসলের চাষাবাদ বেশি হয় । তাই বরাবরের মতো চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর । এসব জমিতে হাইব্রিড মোটা দানা ও হাইব্রিড হিরো মিলে ১৫টি প্রজাতীর চাষাবাদ করা হয় জমির উর্বরতানুযায়ী ।ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন ও পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের কৃষকরা ভুট্টার ফলন দেখে কাদঁছে । তাদের জমিতে ভুট্টার মোচা আছে ভিতরে দানা নেই । দানা না হওয়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষকরা । প্রতি বছরই এ ফসলের চাষ বাড়ায় দিনদিন আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল তাদের । তবে এ ধারাবাহিকতায় ছন্দপতন ঘটে নিম্ন মানের ও ভেজাল বীজের কারনে । বীজ লাগানোর পর হতে শুরু করে গাছ বেড়ে ওঠা পর্যন্ত সব ঠিক ছিল । যখন গাছে মোচা ধরে, তখনই দেখা দেয় বিপত্তি । প্রতিটি গাছেই মোচা আছে তবে ভুট্টায় দানা নেই । এতে ধার-দেনা করে ফসল লাগানো চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে ।

ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের তিস্তার চর এলাকার কৃষক জোবেদুল জানান, ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছি । এর মধ্যে হাইব্রীড হিরো ভুট্টার গাছের মোচাতে দানা নেই । একই কথা বলেন কৃষক তহুবার সহ আরো অনেকেই । তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চামটারহাটের ডিলার রানার কাছ থেকে ইয়েস এগ্রো সাইন্স এর হিরো হাইব্রিড ৪৫২৩ (মাহিকো ইন্টারন্যাশনাল) কিনেছিলাম । তিনি ভারতের বলে সকলের কাছে বিক্রি করেছেন । একই অভিযোগ করেন প্রায় সকল কৃষক । কৃষকরা আরো বলেন, এ বীজ বিক্রেতা ও তার প্রতিনিধি রাশেদুল প্রতিবছর ভুট্টা সংগ্রহ করে নিজেই বীজ প্যাকেজিং করে । তবে ভেজাল বীজ সরবরাহের কথা অস্বীকার করেন ডিলার রানা বলেন, আমি চামটারহাট এলাকার অনেক পুরাতন ব্যবসায়ী চরের ওই কৃষকেরা প্রতিবছর আমার কাছ থেকে সার ও বীজ ক্রয় করে থাকেন । ইয়েস এগ্রো সাইন্স কোম্পানীর প্রতিনিধি রাশেদুলের পিরাপিরিতে তার কিছু বীজ বিক্রি করেছিলাম । এখন দেখি কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হলো । কম্পানীর প্রতিনিধিকে একাধিক বার বলেছি সমস্যা সমাধান করে দিতে কিন্তু তিনি কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেননি ।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইয়েস এগ্রো সাইন্সের স্থানীয় প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি কোম্পানীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি । ভেজাল ও নিম্ন মানের বীজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের বীজ কোম্পানীকে ফাঁসাতে একটি মহল এমন অপপ্রচার করছেন । তবে ভুট্টায় দানা নেই কথাটি সত্য নয়, কিন্তু পরিমানে কম । যা অন্য সমস্যার কারনেও হতে পারে ।

ইয়েস এগ্রো সাইন্স’র এক্সিকিউটিভ অফিসার আল আমিন জানান এ বিষয়ে এখনো কিছু আমাদের জানা নাই । তবে অনাবৃষ্টির কারনে এ বছর একটু সমস্যা হয়েছে । আমাদের বীজ সরাসরি ইন্ডিয়া থেকে আসে ভেজাল বীজ বাজারজাত করনের কোন প্রশ্নই উঠেনা ।

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সুমন মিয়া বলেন, ভুট্টা চাষাবাদ করে যে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে ক্ষতিপুরন আদায় করে কৃষকদের দেয়া হবে পাশাপাশি আগামীতে যেন সে কোম্পানী ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ বাজারে বিক্রি করতে না পারে তার জন্য কোম্পানীকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে ।

তবে সকল ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক দাবি করছেন আর্থিক ক্ষতিপুরন ও ভেজাল বীজ বিক্রেতাকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচারের । যাতে ভবিষ্যতে কৃষি ও হতদরিদ্র কৃষকদের পুঁজি করে এমন অপকর্ম কেউ করতে না পারে ।

এপ্রিল ১৪, ২০২৩ at ২২:০৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/ আক/কাআখো/ ইর