বিট কয়েন সিন্ডিকেট চক্র তৎপর রূপগঞ্জে

অনলাইনে নিষিদ্ধ ভার্চুয়াল মুদ্রা বিট কয়েন কেনা-বেচার মাধ্যমে প্রতারণা করে নিঃস্ব করেছে অনেক পরিবারকে। বিট কয়েন বিক্রি ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচার কয়েকজন মাস্টারমাইন্ড । শুধু তাই নয়, প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া এসব অর্থ বিদেশেও পাচার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । এছাড়াও শুধু অর্থ পাচার নয়, জঙ্গি অর্থায়নও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে । সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে বুঝিয়ে বিট – কয়েনে টাকা বিনিয়োগ করার কথা বলে তাদের টাকা আত্মসাৎ করেছে । তারা বিট কয়েন কেনার নামে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করছেন ।

আরো পড়ুন :
> হঠাৎ করে প্রচন্ড গরম পড়েছে সিলেটে
> নওগাঁর ধামইরহাটে সাড়ে ৬ কেজি গাঁজাসহ ব্যবসায়ী আটক

অনুসন্ধানে জানা গেছে , রূপগঞ্জের পাশবর্তী খিলক্ষেত থানার পাতিরা এলাকার শহিদ মিয়া ও বাবু বিট কয়েন ব্যবসার মাষ্টারমাইন্ড । এছাড়া রূপগঞ্জের গোয়ালপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে রাজন মিয়া, ফটিক মিয়ার ছেলে সাহিন মিয়া, মৃত গিয়াসউদ্দিন ওরফে সাধু মিয়ার ছেলে সবুজ মিয়া, বাগবেড় এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে হামিদুল মিয়া, একই এলাকার মৃত গোলজার মিয়ার ছেলে পারভেজ ও সিটি মার্কেট এলাকার রনি মিয়া বিট কয়েন ব্যবসার মূল হোতা ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , খিলক্ষেত এলাকার শহিদ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিট কয়েন ব্যবসা করে আসছে । এ পর্যন্ত ৪ বার গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয়েছে । একই এলাকার বাবু মিয়া বিট কয়েন ব্যবসার বদৌলতে ইছাপুরা বাজারে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালু করেছে । পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পে প্লট ক্রয় করেছে । গোয়ালপাড়া এলাকার রাজন মিয়া বিট কয়েন ব্যবসার বদৌলতে হাইস গাড়ি, মোটরসাইকেল কিনেছে। তারা অবৈধ ব্যবসা করে গড়ে তুলেছেন আলীশান বাড়ী ও বিলাস বহুল গাড়ী । বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বে-নামে রেখেছেন কোটি কোটি টাকা  । শুধু তাই নয় অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তারা । অথচ এক বছর আগেও এরা বেকার ছিলো । এলাকার সাধারণ মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিট কয়েন কেনা-বেচায় বিনিয়োগ করিয়েছেন ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, আমি রাজন ও সবুজের প্রলোভনে পড়ে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি । কিছুদিন পর সে আমার বিট-কয়েন বিক্রির কথা বলে আমার মোবাইল থেকে সব টাকা তার একাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয় । কিছুদিন পর তার টাকা চুরি হয়ে গেছে বলে জানায় ।  আমি টাকা ফেরত চাইলে আমাকে হুমকি দিতে থাকে । আরেক ভুক্তভোগী বলেন, অবৈধ এই সিন্ডিকেটের প্রধান রাজন ও সবুজ । তাদের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে । কেউ বাড়াবাড়ি করলে অপহরণ করার হুমকি দে য়। বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নাম ভাঙ্গিয়ে এই সিন্ডিকেট চক্র এই অপকর্ম করে আসছে । অভিযুক্ত রাজনের সঙ্গে তার সেলফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিট কয়েন ভার্চুয়াল মুদ্রা । এটি ক্রিপটোকারেন্সি নামেও পরিচিত । বিট কয়েন ছাড়া টিআরওএক্স, এক্সআরপি, এডিএ নামে কিছু ক্রিপটোকারেন্সি এদেশে ব্যবহার হচ্ছে । অসাধু চক্রের সদস্যরা তিনটি অ্যাপসের মাধ্যমে লেনদেন করেন । অ্যাপসে গেলেই তারা ক্রেতা-বিক্রেতা সম্পর্কে জানতে পারেন । অন্যান্য মুদ্রা লেনদেনে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িত থাকে । কিন্তু বিট কয়েনে এমন কোন কর্তৃপক্ষ নেই । বিশ্বের কিছু দেশে বিট কয়েন কেনাবেচা বৈধ থাকলেও ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার এটা নিষিদ্ধ করে । ব্ল্যাক চেইন, বিনান্স, কয়েন বিগো নামের বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি কেনাবেচা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া সহজ হচ্ছে । তবে বিট কয়েনের কেনাবেচা বেড়ে যাওয়ায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাও নজরদারি বাড়িয়েছে ।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এ এফ এম সায়েদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বাংলাদেশে বিট কয়েন নিষিদ্ধ । এটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচা হয় এবং এদেশে নিষিদ্ধ বলে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে ।  রূপগঞ্জে যারা অবৈধ ব্যবসা গ্রেফতার করছে শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে ।
এপ্রিল ১০, ২০২৩ at ১৬:৩৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/ আক/লিরা/ ইর