সিলেটে বোরো ধানে ব্লাস রোগের প্রাদুর্ভাব

সিলেট জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার হাওর গুলোতে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগে প্রদার্ভাব দেখা দিয়েছে । গত কয়েক দিন ধরে হঠাৎ করে এর রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি বেড়ে যাওয়াতে কৃষকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করেছে । এ রোগ শুধু সিলেট নয় হবিগঞ্জ , সুনামগঞ্জ , মৌলভীবাজারে ও দেখা যাচ্ছে বলে কৃষকরা জানান , এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে ব্রি-২৮ জাতের ধান । কাটার মৌসুমে এসে দেখা যাচ্ছে কোনো ধানেই চল নেই । আছে শুধু খোসা । চারাসহ ধান গুলো সাদা হয়ে গেছে । সব হারিয়ে এখন পরিবার পরিজন নিয়ে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে কৃষকদের ।
আরো পড়ুন :
>ডাকাতি করতে গিয়ে কারাগারে ৩ পুলিশ সদস্য
>নাশকতার মামলায় জামায়াতের ৮ নেতা রিমান্ডে

সরেজমিনে বিভিন্ন হাওর ঘুরে জানা যায় , ব্রি-২৮ জাতের ধান অনেকটাই সরু । চালও সরু হয় । খেতেও সুস্বাদু , ফলনও ভালো হয় । এক বিঘা জমিতে অন্তত ২০ মণ ধান ফলে । তাছাড়া অন্যান্য ধানের চেয়ে এটি আগে কাটা যায় । ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগও এটিকে তেমন ক্ষতি করতে পারে না । আবার বিক্রি করতে গেলে বাজারে এর দামও বেশি মেলে । তাই এর প্রতি কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেশি । হবিগঞ্জ সদর , লাখাই , বানিয়াচং , আজমিরীগঞ্জ , নবীগঞ্জ, মাধবপুর , সুনামগঞ্জে তাহেরপুর , মধ্যনগর , দিরাই , সিলেটের বিয়ানীবাজার , জৈন্তাপুর , গোলাপগঞ্জ , ফেঞ্চুগঞ্জ , ছাতক উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা হাওরবেষ্টিত । হাওর এলাকার প্রায় সবাই কৃষির উপর নির্ভরশীল । কেউ নিজের জমিতে আবার কেউ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেন ।

এ বছর জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে । এর মাঝে হাওরের একটি বৃহৎ অংশে কৃষকরা ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেন । কিন্তু চলতি মৌসুমে কাটার সময় ধানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে । ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে গেছে হাওরের পর হাওর ধান। গাছসহ ধান সাদা হয়ে গেছে । ভেতরে কোনো আঁশ নেই , পুরোটাই খোসা। এগুলো এখন জ্বালানি হিসেবে (থেকে ঋণ করে এনে চাষ করেছেন । এখন তিনি পথে বসার উপক্রম ।

মৌলভীবাজহার শ্রীমসঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান , শ্রীমঙ্গলে ১১ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে । এর মধ্যে ব্রি-২৮ আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৬৫১ হেক্টর । যার মধ্যে বেশ কিছু অংশ ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয় । যখন এটি প্রথম ধরা পড়ে , তখন পাতা একটু একটু মরতে শুরু করে । তখনই কৃষকদের দুই রাউন্ড ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । একই সঙ্গে ইউরিয়ার পরিবর্তে পটাশিয়াম সার ব্যবহারের পরামর্শ দেন । অনেক কৃষক এই অল্প পাতা মরায় কিছু হবে না ভেবে ছত্রাকনাশক স্প্রে করেননি । কেউ কেউ এক রাউন্ড স্প্রে করেছেন। কিন্তু যাঁরা ঠিকমতো নিয়ম মেনেছেন , তাঁদের ফসল নষ্ট হয়নি ।
সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বলেন , সিলেট ও মৌলভীবাজারের হাইল হাওর , কাউয়াদিঘি হাওর ও হাকালুকি হাওরের নিচু এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় আট হেক্টর এলাকায় ব্রি-২৮ জাতের ধান ও বি-৪৮ জাতের ধান নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে । তবে এটি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান উৎপাদনে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না । তিনি জানান , ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে । তাঁদের সহায়তার জন্য সরকারের কোনো বরাদ্দ এলে তাঁরা পাবেন ।

এপ্রিল ০৮, ২০২৩ at ১৬:০১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/ আক/আকারু/ ইর