বৃষ্টির কারণে পাইকগাছার তরমুজ চাষীরা সর্বশান্ত

সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বিঘা প্রতি ৫ হাজার টাকা হিসেবে ১২ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছিলাম। ভালো ফলনও ধরা শুরু করেছিল। গত বছরের ন্যায় এ বছরও ভালো লাভ হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু প্রকৃতি সব আশা নিরাশায় পরিণত করেছে। পর পর ৩ দফা বৃষ্টিপাতে ১২ বিঘা জমির সব তরমুজ গাছ মরে সাবাড় হয়ে গিয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমি কি করবো, কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো, কিভাবে পরিবার পরিজনকে বাঁচিয়ে রাখবো, আমি সর্বশান্ত হয়ে গিয়েছি, আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে।

এখন কি হবে আমার! এভাবেই সোমবার দুপুরে প্রখর রৌদ্রের মধ্যে ক্ষেতের মধ্যে বসে বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্থ তরমুজ গাছ হাতে নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে দুশ্চিন্তা এবং হতাশা প্রকাশ করছিল খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন গড়ইখালী ইউনিয়নের হুগলারচক গ্রামের তরমুজ চাষী বিষ্ণুপদ মন্ডল (৬০)। বিষ্ণুপদ মন্ডলের ন্যায় গড়ইখালী ইউনিয়নের দুই শতাধিক কৃষক চলতি রবি মৌসুমে তরমুজের আবাদ করেছিল।

কিন্তু শিলা বৃষ্টি সহ কয়েক দফা বৃষ্টিপাতে বেশিরভাগ কৃষকের তরমুজ গাছ মরে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন তরমুজ চাষীরা। সুন্দরবনের কোল ঘেষে অবস্থিত উপজেলার গড়ইখালী ইউনিয়ন। ইতোপূর্বে এ ইউনিয়নের মানুষের বেশিরভাগ জীবন জীবিকা নির্বাহ করত সুন্দরবনের সম্পদের উপর।

সুন্দরবনের উপর সরকার নানা বিধিনিষেধ আরোপ করায় এলাকার মানুষ ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়েছে কৃষি কাজে।বিশেষ করে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ইউনিয়ন মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বদ্ধ ঘোষখালী নদীতে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করে তা কৃষি কাজে ব্যবহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করায় কৃষি ফসল উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছে ইউনিয়নের মানুষ। বিশেষ করে রবি মৌসুমে এলাকার কৃষকরা তরমুজ, ধান ও অন্যান্য সবজি উৎপাদন করে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করে থাকে।

বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও এলাকার দুই শতাধিক কৃষক দক্ষিণ কুমখালী শিবসার ধার, উত্তর কুমখালী, উত্তর বাইনবাড়ী, পশ্চিম বাইনবাড়ী, হুগলারচক, আমিরপুর ও কানাখালী এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩শ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেতে ভালো ফলন ধরা শুরু করছিল। কিন্তু প্রকৃতি সর্বশান্ত করে দিয়েছে এলাকার তরমুজ চাষীদের। ইতোমধ্যে কয়েকদিনের ব্যবধানে শিলা বৃষ্টি সহ দুই দফা ভারী বৃষ্টিপাত হয়।

এতে বেশিরভাগ তরমুজ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। কারো পুরো ক্ষেত, কারো ৭৫ ভাগ, কারো অর্ধেক ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গিয়েছে তরমুজ চাষীরা। হুগলারচক গ্রামের কিংশুক মন্ডল জানান, গত বছর ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে সাড়ে ৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছিলাম। এ বছর ১৪ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। প্রচুর ফলও ধরেছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ তরমুজ গাছ মরে গিয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। খরচের টাকা কিভাবে উঠবে এটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

অতিব মৃধা ও প্রকাশ মৃধা ৭ বিঘা করে জমিতে তরমুজের চাষ করে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কুমখালী গ্রামের রাখাল বর্মণ জানান, আমার ৫ বিঘা জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কানাখালী গ্রামের গৌর মন্ডল জানান আমার ৬ বিঘা জমির তরমুজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে আমার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এতো ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবে এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে এলাকার তরমুজ চাষীরা।

আরো পড়ুন :
> ফুুলবাড়ী বিজিবি সদর দপ্তরের আয়োজনে অসহায়দের মাঝে, ইফতার ও রাতের খাবার বিতারণ
> গাবতলীর ধ্রবতারা সামাজিক সংগঠনের দোয়া ও ইফতার মাহফিল

অনেকেই আবার বীজ বপন করে নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখছে। চাষীদের পাশে সর্বক্ষণ থাকারপরও প্রকৃতির কারণে তাদের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান, ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু। তিনি বলেন এবছর আগে ভাগেই ঘোষখালী নদীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মিষ্টিপানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু প্রকৃতির কাছে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। তারা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে এ জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সবধরণের সহযোগিতা করা হবে বলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তরমুজ মূলত রবি মৌসুমের ফসল। কিন্তু তরমুজ কোন ধরণের পানির চাপ সহ্য করতে পারে না। স্বাভাবিক বৃষ্টির পাশাপাশি শিলা বৃষ্টির কারণে তরমুজ ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ফলে আমন ফসলের প্রণোদনা দিয়ে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষিবিভাগ থেকে সহায়তা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে কৃষিবিভাগের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এপ্রিল ০৭, ২০২৩ at ২১:১০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মেইস/সুরা