আগামি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন ঝুঁকিতে যারা

পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি প্রার্থীর ব্যাপারে ইতিবাচক হয়ে ওঠেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। দক্ষ ও পরিক্ষীত প্রার্থীর পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি প্রার্থীর ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে ইতোমধ্যে একাধিক টিমকে দায়িত্ব দিয়েছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিচ্ছন্ন ও জনপ্রিয় প্রার্থী দেয়া হলে সুষ্ঠু ভোটেই নৌকার প্রার্থীরা জিতবে- দলের একাধিক বৈঠকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দলীয় প্রধান। ফলে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন ঝুঁকিতে রয়েছেন বিতর্কিত প্রায় শতাধিক সংসদ সদস্য। এদের বদলে নৌকার টিকেট পাবেন পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী কর্মীরা।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, গত সাড়ে তিন বছরের বেশি সময়ে ২০টির মতো উপনির্বাচনে পুরনো প্রার্থীদের পরিবার থেকে মাত্র দুজন নমিনেশন পেয়েছেন। বাকি ১৮ জনই ছিলেন নতুন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এমন ধারা অব্যাহত থাকবে।

এদিকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, অনেকেই নৌকা নিয়ে এমপি হয়ে আর এলাকায় পা রাখেননি। কেউ কেউ বছরে একবার-দুবার গেলেও সরকারি প্রোগ্রাম শেষ করে ওইদিনই ঢাকায় চলে আসেন। দলীয় কার্যালয়ে পা রাখেননি কখনো। তারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলেন।

তাদের ধারণা, নৌকা হলেই পাস করা যায়। দলীয় নেতাকর্মীর প্রয়োজন পড়ে না। সে কারণে এলাকায় কোনো যোগাযোগ রাখেন না। এমন অভিযোগ নিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন বৈঠকে খেদোক্তি করেছেন দলীয় প্রধানও। এজন্য পরিচ্ছন্ন ইমেজ গড়ে তোলাসহ ভোটারদের মন জয় করার জন্য একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সূত্রমতে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকেটবঞ্চিত হচ্ছেন বিতর্কিত সংসদ সদস্যরা। সাংগঠনিক সম্পাদকদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের সাংগঠনিক সফরের লিখিত প্রতিবেদন দলীয় প্রধানের কাছে দিচ্ছেন। ঢাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের বৈঠকেও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেসব সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন, নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন- সেসব সংসদ সদস্যের মনোনয়নও অনিশ্চিত হবে। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিতর্কিতদের সুযোগ দেয়া হবে না। স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্নরাই অগ্রাধিকার পাবেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, যাদের কর্মকাণ্ড ও ভাবমূর্তি ইতিবাচক নয়, তাদের আর মনোনয়ন দেয়া হবে না। যাদের ভূমিকায় দল ও সরকার বিব্রত হয়েছে, তাদের ভবিষ্যতে সংসদে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না।

মনোনয়ন ঝুঁকিতে যারা : পঞ্চগড়-১-এর মাজহারুল হক প্রধান, কুড়িগ্রাম-১-এর আসলাম হোসেন সওদাগর, রাজশাহী-১ ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৫ মনসুর রহমান, নাটোর-১ শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-২ শফিকুল ইসলাম শিমুল, বরিশাল-৪ পংকজ দেবনাথ, জামালপুর-৪ সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, টাঙ্গাইল-৪ হাছান ইমাম খাঁন, পটুয়াখালী-৩ এসএম শাহজাদা, পটুয়াখালী-৪ মুহিবুর রহমান মুহিব, যশোর-১ শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২ মো. নাসির উদ্দিন, রাঙ্গামাটির দীপংকর তালুকদার, সুনামগঞ্জ-১ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, হবিগঞ্জ-৩ আবু জাহির, ফরিদপুর-৩ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ময়মনসিংহ-৩ নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ-৭ হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, নোয়াখালী-৪ একরামুল করিম চৌধুরী, জামালপুর-৫ মোজাফফর হোসেন, নেত্রকোনা-২ আসনের আশরাফ আলী খান খসরু প্রমুখ।

এছাড়া শারীরিক অসুস্থতা ও বয়স জনিত কারণে মনোনয়ন ঝুঁকিতে রয়েছেন ঢাকা-৭ আসনের হাজী মো. সেলিম, ঢাকা-১৩ সাদেক খান ও ঢাকা-৫ কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, ঢাকা-১৭ চিত্র নায়ক ফারুক, সিলেট-৫ হাফিজ আহমেদ মজুমদার, নরসিংদী-৫ রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু প্রমুখ।