প্রাথমিক শিক্ষায় ছুটি’র বিড়ম্বনা

প্রাথমিক শিক্ষা হলো সামগ্রিক শিক্ষাস্তর তথা একটি রাষ্ট্রের শিক্ষার গুরুত্বপূর্ন ভিত্তি! একটি স্থাপনা যেমন তাঁর ভিত্তির উপর স্থায়িত্ব নির্ভর করে, তেমনি শিক্ষার সামগ্রিক সাফল্য নির্ভর করে প্রাথমিক স্তরের উপর। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশ তথা আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চলে ভিন্নপথে। এখানে একদেশ, একশিক্ষা নিয়ম শুধু ভিন্ন। এক প্রাথমিক শিক্ষা যেমন বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত, তেমনি রয়েছে এর ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম নীতি।

যেমন : ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো মাধ্যমিক স্তরে আংশিক যুক্ত এবং মাধ্যমিকে ১ম-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম বিদ্যালয়গুলো আংশিক প্রাথমিকে যুক্ত। এখানে অভিন্ন শিক্ষা স্থান ভেদে ছুটি ভিন্ন ভিন্ন।কাজেই বলতে হয়, প্রাথমিক শিক্ষা যেনো বরের ঘরের মাসি আর কনের ঘরের পিসি! উন্নত বাংলাদেশে বিনির্মানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন স্বপ্ন দেখছেন, ২০৪১ তথা আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, তখন প্রাথমিক শিক্ষা কেন তাঁর সাথে তাল মেলাতে পারছে না সেটা ভাববার সময় এসেছে বলে মনে করি। প্রাথমিক শিক্ষায় নেওয়া সিদ্ধান্ত সমূহ কেন যেন শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক হয়ে ওঠছে না।

পবিত্র রমজান ও ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি তাঁর অন্যতম দৃষ্টান্ত! যেদেশে ৯১.০৪ শতাংশ মুসলিম এবং এখানে ছোট-বড় প্রায় সকলেই রোজা রাখে। রোজায় শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেক কষ্টসাধ্য, কেননা এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সারাক্ষণই সক্রিয় থাকতে হয় ভাষা বিনিময় বা কথোপকথন এর মাধ্যমে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় একই দেশে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন ছুটি ঘোষনা করে তখন কোমলমতি শিশুদেরকে পাঠদানে ব্যস্ত রাখা কতটা যৌক্তিক সেটা প্রশ্ন থাকতেই পারে।

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হিসেবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে শিক্ষক -কর্মচারিরা অবশ্যই তাঁদের কর্মস্থলে যাবে, কিন্তু মাঠ পর্যায়ের বাস্তব চিত্র হয়ে থাকে ভিন্ন! প্রতিষ্ঠান চলবে, শিক্ষক-কর্মচারিও উপস্থিত থাকবে, রুটিন ওয়ার্ক চলবে, শুধুমাত্র মূল উপকরণ শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতির সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে দিন দিন (অতীত অভিজ্ঞতা থেকে অনুমেয়)। তাহলে ফলাফল কি আসবে সেটা অনুধাবন করা যায়।

আরো পড়ুন :
> বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
> স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন

বর্ষপঞ্জির তালিকায় ১০ কর্মদিবস খুব বেশিদিন নয়! কিন্তু একই দেশে অন্যান্য স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে প্রাথমিক স্তর খোলা রাখায় যে বিতর্ক তৈরি হলো সেটা খুবই দুঃখজনক! স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসেও প্রাথমিক শিক্ষা কেন রাষ্ট্রের অন্য স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে তাল মিলিয়ে অভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সেটাই ভাববার বিষয়! প্রাথমিক শিক্ষা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে চলমান শিক্ষা, এখানে যেকোনো সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রহণ করা হলে তা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কল্যাণকর হবে বলে মনে করি। প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক সিদ্ধান্ত হোক শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক, তবেই প্রাথমিক শিক্ষা হবে গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসু। তাই আগামীতে দেশের সকল স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় ছুটি সহ যেকোনো জাতীয় সিদ্ধান্ত হোক এক ও অভিন্ন এই প্রত্যাশা সকলের।

লেখক: উজ্জ্বল রায়, সহকারী শিক্ষক, নড়াইল।

মার্চ ২৬, ২০২৩ at ২০:৫৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/শুস/সুরা