দারিদ্র্যতাকে হার মানিয়ে সাফল্যের পথে ফাতিমা

ছোট থেকে পড়া লেখার অনেক আগ্রহ তার। বাবা মা যখন মাঠে ঘাটে কাজ নিয়ে ব্যস্ত তখন লেখাপড়া নিয়ে সে অনেক মনোযোগী। অর্থ না থাকলেও পরিবারের অঢেল ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের এক ধাপ এগিয়ে গেছেন তিনি। নাম তার ফাতিমা। তার বাড়ি দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের দিনমজুর আবুল কালামের ছোট কন্যা।

তিনি সংসারের দ্বিতীয় সন্তান। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে হাজীপুর আহছানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সরকারি খানবাহাদুর আহছানউল্লাহ কলেজ থেকে তিনি জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
সম্প্রতি তিনি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন ৩৬০০ তম অবস্থান নিয়ে।

ফাতিমার মা’র কাছে তার সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, তার দুইটা মেয়ের মধ্যে ফাতিমা ছোট মেয়ে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ছোটবেলা থেকে সে পড়ালেখা করে আসছে। ছোট থেকে তার লেখাপড়ার অনেক আগ্রহ ছিল। তার পিতা যখন লোকের মৎস্য ঘেরে দিনমজুরের কাজ করতে ব্যস্ত আর সে তখন লেখাপড়া নিয়ে সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে ব্যস্ত। আমি তখন বাড়িতে থেকে বিভিন্ন চাষ করে কোন রকম সংসারটা চালায়। বাবার কষ্টে উপার্জিত অর্থের অপচয় করার মতো ইচ্ছে কখনও আমি তার মনে জাগ্রত হতে দেয়নি। সব সময় তাকে মনে করিয়ে দিয়েছি তার বাবার মাথার ঘাম পায়ে ফেলার মৎস্য ঘেরে দিনমজুরি করার গল্প। আর তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছি দারিদ্র্যতাকে হার মানিয়ে সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে।

আরো পড়ুন :
>গ্ৰীন ভয়েস ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি পিয়াস-সম্পাদক ফরিদুল
>ঝিনাইদহে ব্যবসায়ীকে অহরণ করে হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

তার মা আরও বলেন, তার বাবার মাথার ঘাম পায়ে ফেলার কষ্টের মূল্য আজকে আমরা ফাতিমার মধ্যে দিয়ে অর্জন করতে পেরেছি। তার ইচ্ছে ছিল চিকিৎসক হয়ে এদেশের সকল দারিদ্র্য বাবা মার সেবা করবেন। তার এতো দিনের কষ্টের ফল আজকে তার কাছে ধরা দিয়েছে। সবাই আমার ফাতিমার জন্য দোয়া করবেন সে যেন তার ইচ্ছেকে বাস্তবে রূপ দিয়ে সবাইকে ডাক্তার হয়ে সেবা করতে পারেন।

ফাতিমা জান্নাত বলেন, আজকে আমার এই কৃতিত্ব আমার বাবা মায়ের। তাদের কষ্টের ফলে আজকে আমি এই অর্জন পেয়েছি। আমি সবসময় তাদের কষ্টকে মাথায় রেখে আমি অবিরাম লেখাপড়া করে গেছি। আমার সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এবং তাদের কষ্টের মূল্য দেওয়ার জন্য। আমি আজকে সফল তাদের কষ্টের মূল্য দিতে পেরে। আমি খুব দারিদ্র্য পরিবারের একটা মেয়ে। আমি দেখেছি আমার চোখের সামনে বাবা মায়ের অভাব অনাটনের কষ্টকে। সব সময় তাদের কষ্টের কথা ভেবে লেখাপড়া করে গেছি। আমি রেজাল্ট এর দিন কান্না করে দিয়েছিলাম আজকে আমার এতো বড় অর্জন আমার বাবা মায়ের। তাদের কষ্টের ফলে এই অর্জন আমি পেয়েছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন ডাক্তার হয়ে এদেশের গরিব অসহায় দারিদ্র্য মানুষের সেবাদান করতে পারি এবং আমার বাবা মায়ের কষ্টের মূল্য দিয়ে সারাজীবন তাদের সেবা করতে পারি।

মার্চ ১৩, ২০২৩ at ১৭:০০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মৃরাঅ/মমেহা