সাগর কন্যা কুয়াকাটায় কে কাকে কিভাবে ঠকাচ্ছে

নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর কন্যা কুয়াকাটা। কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার কুয়াকাটা পৌরসভায় অবস্থিত। কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়তে যে কেউ বাধ্য।

একদিকে, সাগরের উত্তাল ঢেউ, অপরদিকে সাগর পাড়ের, গোমতীর লেক, লাল কাকড়ার চর, তিন নদীর মোহনা, ঝাউবন, লেবুর চর, শুটকি পল্লী, রাখাইন পল্লী ইত্যাদি তো আছেই। এতো কিছুর মাঝেই পর্যটকদের আনন্দময় ভ্রমণ বিলীন করে দিচ্ছে কুয়াকাটার অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। কুয়াকাটার সব ব্যবসাই যেন বাক্সবন্দি হয়ে আসে এখানকার অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দখলে।

ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের পরিপূর্ণ ভ্রমণকে বিলীন করে দিচ্ছে এখানকার সিন্ডিকেট। আর সেই সিন্ডিকেটকে অতিক্রম করার কোন রকম সাধ্য নেই এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের। প্রত্যকটা জিনিসের অতি দাম ও মানহীন খাদ্যে জর্জারিত কুয়াকাটার ঘুরতে আসা পর্যটকরা। প্রতিদিনই পর্যটকদের সাথে এখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে বাকবিতন্ডা বাধে মানহীন খাদ্য ও অতি দামের কারণে। কেন এমনটা হচ্ছে? তারই বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরছি। প্রথমে শুরু হবে এভাবে, পরিবহন আপনাকে সাগরের বীচ থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে হোটেল রোজ ভ্যালির সামনে নামিয়ে দিবে। নামিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই ইজিবাইক ও ইঞ্জিন ভ্যানের চালকরা আপনাকে ছেঁকে ধরবে। আসেন মামা যাইবেন বীচে। আমার গাড়িতে আসেন। মূলত এখান থেকেই শুরু হবে আপনার ভোগান্তির। যে পর্যটককের কাছ থেকে যেমনি পারে কৌশলে হাতিয়ে নিবে ভাড়া। তারপর আপনাকে নামিয়ে দিবে বীচের কাছে।

গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই আচানক হাজির হবে আবাসিক হোটেলের দালালরা। আসেন মামা ভালো রুম লাগবে, আমার হোটেলে আসেন। কম দামে ভালো মানের রুম দিবো। আর আপনিও তার সুন্দর কথার ফাঁদে পড়ে তার সাথে চলে যাবেন রুম দেখতে। এরপর আপনাকে সাইজ করে বলবে মামা এখন সিজনের সময়। কোথাও রুপ খালি পাবেন না। এই কয়েকটি রুম আছে। দেরি করলে এটাও পাবেন না। তারপর মুটামুটি বড় অংকের টাকা নিয়ে আপনাকে ধরিয়ে দিবে রুমের চাবি। সব হোটেলে একই সিস্টেম। সবাই সিন্ডিকেটের আওতায়। আপনিও বেচারা ভাগ্যের লিখনে রুম নিয়ে নিতে হবে। রুম নিয়ে, বিশ্রামের পর খাবার হোটেলে খেতে যাবেন। মূলত এখানেই আপনাকে সবচেয়ে বড় ধোঁকা ও বাটপারি শিকার হতে হবে। কুয়াকাটা বীচের ধারের সব হোটেলের একই নিয়ম। মানে সবাই সিন্ডিকেটের আওতাভুক্ত। সকালের নাশতায় পাবেন সব হোটেলে একই খাবার। সকালে পাবেন মানহীন খাবার ভাত, ডিম, ডাল, পরোটা ও খিচুড়ি। মুটামুটি সকালের নাশতায় জনপ্রতি ১০০ টাকা আপনাকে গুনতে হবে।

আরো পড়ুন :
>মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি নড়াইলে শিক্ষকদের মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান
>ঝালকাঠিতে হাত পা বেধে স্বামীকে ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী আটক

এর বাইরে নাশতায় অন্য কোন খাবার এখানে পাবেন না। নাশতা সেরে চলে যাবেন বীচে গোসলের উদ্দেশ্যে। ফটোগ্রাফাররা আপনাকে ছেঁকে ধরবে। আসেন স্যার ছবি তুলে দিয়। যেকোন কায়দায় আপনার ছবি তুলবে। বলবে স্যার পছন্দ করে আপনার ছবি বেচে নিবেন। ফোনের মেমোরি কার্ডে ছবি লোড দিলে ছবি প্রতি ৫ টাকা আর প্রিন্ট আলাদা টাকা। এরপর শুরু হবে আপনার গোসলের ছবি তোলা। মুটামুটি ক্লিকে ক্লিকে আপনার হাজার খানেক ছবি তুলবে। তারপর আপনার ফোন নাম্বার নিয়ে বলবে স্যার রাতে কল দিবো। এরপর বীচে ডাব, পেয়ারা, আম সহ কোন কিছু খাবেন। সব আকাশ ছোঁয়া দাম। একটা ছোট পেয়ারা মাখা ৮০ টাকা, একপিচ ছোট কাঁচা আম মাখা ৬০ টাকা, সব খাবারই দামে চড়া। যথারীতি আপনি গোসল সেরে হোটেল থেকে ফ্রেশ হয়ে, দুপুরে খাবার হোটেলে যাবেন। সেই সিন্ডিকেট। সব হোটেলে মানহীন একই রান্না ও একই রেসিপি।

দুপুরে পাবেন বিভিন্ন মাছ, গরু-মুরগীর মাংস, তেহরী। দাম সব হোটেলে একই। আপনাকে দুপুরের খাবার খেতে কম করে হলেও গুনতে হবে জনপ্রতি ২ শ” টাকা। তবে টাকা দিবেন ঠিকই কিন্তু মুখে খাবার তুলতে আপনার রুচিতে বাধবে। এরপর বিভিন্ন লোকেশনে ঘুরতে বেরুবেন। মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক সিন্ডিকেট আসেন স্যার সূর্য উদয় ও সূর্যাস্থ সহ গোমতীর লেক, লাল কাকড়ার চর, তিন নদীর মোহনা, ঝাউবন, লেবুর চর, শুটকি পল্লী, রাখাইন পল্লী দেখে আসি। স্যার ভালো করে দেখবো। খুশি হয়ে টাকা দিয়েন। দুইজনে যাওয়া আসা ১২৫০ টাকা প্যাকেজ। কম করে নিবানি। তারপর আপনার কাছে ১ হাজার টাকার কথা বলবে। ঘুরে এসে বলবে স্যার খুশি তো।

কিছু বকশিস ধরে দিয়েন। আপনিও গ্যাড়াকলে। সন্ধায় যাবেন মাছের বারবিকিউ কিংবা ফ্রাই খেতে। মুটামুটি দু”কেজি ওজনের একটা মাছ নিবে সর্বনিম্ন ৮ শ” টাকা। অবশ্য ছোট মাছি পাবেন। রাতে ফটোগ্রাফার আপনাকে কল দিবে, স্যার আপনার অপেক্ষায় স্টুডিওতে বসে আছি ছবি নিয়ে যান। আপনাকে যেতে হবে তার স্টুডিওতে। স্যার প্রতি ছবি ৫ টাকা। আপনি বেচে বেচে ছবি নিবেন। আপনি কমের কথা বললে, বলবে স্যার সিন্ডিকেট সিস্টেম কম নিলে জরিমানা করবে। আপনার ফোন দেন আমি দিয়ে দিচ্ছি।

আপনি যেটা চয়েস করবেন সেই ছবি টা আপনার মেমোরি কার্ডে চলে যাবে, আর বাকি টা ডিলিট করে দিবো। বেচ, মুটামুটি কম করে হলেও কৌশলে আপনার কার্ড ২৫০ থেকে ৩০০ ছবি ঢুকিয়ে দিয়ে বলবে স্যার টাকা দেন। আপনি যদি বলেন আমি তো এতো ছবি বাছাই করিনি। আমি এতো ছবি নিবো না। তারা ছবি আপনার কার্ড চলে গেছে কিছুই করার নেই। অগত্যা আপনাকে হাজার ১৫ শ” টাকা মতো দিয়ে এবারের মতো মাফ চেয়ে নিতে হবে। রাতে বাড়ির জন্য কেনাকাটা করবেন, সেই সিন্ডিকেট। সব দোকানে মানহীন পণ্য। সব দোকানে দাম। কমানোর কোন সুযোগ নেই। নিলে নেন, না নিলে যান গ্যা। আবার সেই রাতের খাবার একই সিস্টেমে ১৫০ টাকা ২০০ টাকা বিল। তারপরে হোটেলে গিয়ে টেনশনে রাতের ঘুম।

এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, স্যার কিছুই করার নেই। আমাদের এখানে সব সিন্ডিকেট সিস্টেম। সব দোকানে একই রেসিপি কিংবা দাম পাবেন। কম নিলে জরিমানা গুনতে হবে।

মার্চ ১৩, ২০২৩ at ১৬:০৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এএস্ব/মমেহা