দূষণে ঢাকার পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে

বায়ুদূষণের দিক থেকে আমাদের রাজধানী ঢাকা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করলেও কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। গত শনিবার থেকে বুধবার টানা পাঁচ দিন বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় ছিল ঢাকার নাম।

এখন ঢাকার বাতাসে দূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়েও পাঁচগুণ বেশি। বিশ্বে বাতাসের দূষণ নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে, সেগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অন্যতম।
এই শীতে অধিকাংশ সময়ই বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকার অবস্থান শীর্ষে বলে আন্তর্জাতিক বায়ুমান সূচকে প্রকাশ পাচ্ছে। এই বিষবাষ্পে আমাদের গন্তব্য কোথায়?

হোসেন জিল্লুর রহমান: এমন দূষণ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সে প্রশ্ন পরে, আমরা এখন কোথায় আছি, তা নিয়েই আলোচনা করা জরুরি। দূষণের এক গারদে অবস্থান করছি, যেখান থেকে সহসাই মুক্তির কোনো উপায় নেই।

প্রথমত, আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে কয়েক গুণ। স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব মানে সবকিছুর ওপর প্রভাব পড়ছে। মানুষের কর্মক্ষমতা কমছে, উৎপাদন কমছে। উপর্যুপরি বায়ুদূষণে শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছ্য।

হোসেন জিল্লুর রহমান: দায়িত্বহীন একটি সমাজব্যবস্থায় আসলে দায় কাকে কে দেবে, তা নিয়েও সংশয় আছে। উন্নয়নের মোহে আমরা বুঁদ হয়ে আছি।

যে কোনো কাজ করতে গেলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এগুলো মাথায় রেখে এগোতে হয়। উন্নয়নের একটি কাজ করতে গেলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমার নিজের বা অন্যের কী কী ক্ষতি হতে পারে, এটি বুঝতে না পারলে তো দায়িত্বশীল আচরণ করলাম না।

আরো পড়ুন:
>ঝালকাঠিতে আলোর জাগরণী একতার উদ্যোগে কুয়াকাটা সৈকতের বর্জ্য অপসারণ
>মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটারের তালিকায় শীর্ষে সাকিব

বাংলাদেশ এখন ব্যক্তি ভোগের উত্তম জায়গা হয়ে গেছে। প্রথমত, ব্যক্তি ভোগের অনিয়ন্ত্রিত আকাঙ্ক্ষা তৈরির মহোৎসব তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রকল্প গ্রহণের অনিয়ন্ত্রিত আকাঙ্ক্ষা।

সরকারের প্রধান নির্বাহী বারবার বলছেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে। অথচ আপনি ঢাকার চারপাশ লক্ষ্য করুন। শত শত ইটভাটা ঢাকাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। ফসলি জমি নষ্ট করে এসব ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার ধোঁয়া গোটা রাজধানীকে আচ্ছাদিত করে রাখছে। বলা হয়, বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে ইটভাটা। এখানে সরকারের কোনো নজরদারি নেই।

তার মানে, আমাদের কথা ও কাজের মধ্যে কোনো মিল থাকছে না। কোনো প্রকার বিবেচনা না করে ব্যক্তি এবং রাষ্ট্র অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নে ব্যস্ত হয়ে উঠছে। যার কোনো শেষ নেই।

জাগো নিউজ: বায়ুদূষণ নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি ব্যবস্থা গ্রহণে রুল ইস্যু করেছেন। এরপরেও দূষণরোধে উদ্যোগ নেই…

হোসেন জিল্লুর রহমান: ইটভাটার ব্যাপারে স্পষ্ট আইন রয়েছে। কিন্তু এটি কাগজ-কলমেই। যারা ব্যবস্থা নেবেন তারাও জানেন। ব্যবস্থা নেন না। কেন নেন না তাও সবার জানা।

দেশের উচ্চ আদালত যে রুল জারি করেছেন, আমলে নেওয়া জরুরি ছিল। তার মানে দায়িত্বশীলতাহীন এবং জবাবদিহিহীন কাঠামো তৈরি হওয়ার কারণেই ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

হোসেন জিল্লুর রহমান: দূষণে রাজধানীর পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে। রাষ্ট্র এই ভয়াবহতার কথা স্বীকার করছে না অথবা অনুমান করতে পারছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলে উপকূলে গিয়ে কয়েকটি গাছ আর কর্মসূচি পালন করলেই দায় এড়ানো যায় না। দেশের প্রধানতম শহরগুলোতে কী হচ্ছে, সেটাও তো জলবায়ু পরিবর্তন রোধের কর্মসূচির মধ্যে পড়ে।

প্রকল্প অবশ্যই আমরা চাই। ব্যক্তিও উন্নয়ন করুক, রাষ্ট্রও উন্নয়ন করুক। কিন্তু জনজীবন ঝুঁকিতে ফেলে সে উন্নয়ন কেন? উন্নয়ন তো গোটা বিশ্বেই হচ্ছে। এমন বেপরোয়াভাবে কোথায় হচ্ছে? এমন অনিয়ন্ত্রিত আকাঙ্ক্ষার প্রসার কেন? জবাবদিহিতা ছাড়া এই প্রসার অন্তত মানুষের কোনো কল্যাণ হতে পারে না, তা বায়ুদূষণে বারবার প্রমাণিত হচ্ছে।

আমরা উন্নয়নের গারদে ঢুকে গেছি। ঢাকার ৯০ শতাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝারি মানের ভূমিকম্প হলে কী পরিণতি হবে, তা কল্পনা করা যায়! যে উন্নয়ন নিয়ে রাষ্ট্র বা ব্যক্তি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে, তাই হয়তো বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে একদিন।

জাগো নিউজ: নগর ব্যবস্থাপনায় রাজধানীতে দুটি সিটি করপোরেশন রয়েছে। তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে হোসেন জিল্লুর রহমান: সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তো বহু আগে থেকেই। কিন্তু দায় শুধু তাদের নয়। ইটভাটা বন্ধ তো তারা করতে পারে না। প্রশাসন কী করছে?

শহরের বাইরেও জীবন তো বিষিয়ে উঠছে। গ্রামের নির্মল বাতাস কে দূষিত করছে, তাও তো দেখতে হবে। চিন্তা বা মানসিক উন্নয়ন না করলে আপনি দৃশমান উন্নয়ন দিয়ে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন না।

ফেব্রুয়ারি ১২.২০২৩ at ১০:০০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মেইস/ এসআর