ফেব্রুয়ারিতে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা

ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালী। আসন্ন বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুলের বাজার ধরতে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অঞ্চলের ফুলচাষিরা। অনুকূল আবহাওয়া ও বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন এ মাসে তাদের বেচাকেনা ৬০-৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে চাষিরা ফুলক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রয়োজনমাফিক পানি দেওয়া, স্প্রে করা, আগাছা নিড়ানো, মরা-রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলাসহ ক্ষেত পরিচর্যায় তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই।

পাশাপাশি ক্ষেত থেকে ফুল তুলে নিয়ে ছুটছেন গদখালী ফুলবাজারে। দূর-দূরান্তের ক্রেতারাও হাজির হচ্ছেন সেখানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর গোটা এলাকা। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শত শত ফুলচাষি। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরদামে ব্যস্ত।

ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরাও অন্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন। একইসঙ্গে বেশি দাম পাওয়ায় ফুলচাষিরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন। সবমিলিয়ে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, করোনাভাইরাস ও আম্পান এই অঞ্চলের ফুল সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। গত বছর বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছিল। এর আগের দু’বছর চাষিরা কোনো ফুলই বিক্রি করতে পারেননি। এ বছর আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ফুল চাষের জমি যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদনও হয়েছে ভালো। একইসঙ্গে বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় আশা করা হচ্ছে বেচাকেনা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ৬০-৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

আরো পড়ুন :
>আটক ‘গাঁজা গুরু’ নিজের অসুস্থতার জন্য আমি গাঁজা খাই ডাক্তার আমাকে গাঁজা খাইতে বলছে
>পাইকগাছায় মুকুলে ভরে গেছে আম গাছ

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। তারা অন্তত ৭ শতাধিক হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে ফুলচাষ হয়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্ল্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেন্ডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। ডিসেম্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস থেকে শুরু ফেব্রুয়ারিতে বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মার্চে স্বাধীনতা দিবস ও পরে পহেলা বৈশাখ দিয়ে মৌসুমজুড়ে ফুল বিক্রি হয়।

গদখালী ফুলবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। গোলাপ ফুল প্রতি পিস ৮-১০ টাকা, চায়না গোলাপ লংস্টিক রোজ ২৫-৩০, রজনীগন্ধা স্টিক ৮-১০, গ্লাডিওলাস ফুল রং ভেদে ৮-১৫ ও জারবেরা প্রতিটি ১০-১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাশাপাশি চন্দ্রমল্লিকা ৩-৪ টাকা, গাঁদা প্রতি হাজার সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা, রডস্টিক প্রতি বান্ডিল ১৫০ টাকা, জিপসি ফুল প্রতি আঁটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি হাবিবুর রহমান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের চাষ ও উৎপাদন ভালো হয়েছে। সামনের তিন উৎসব ঘিরে ফুলবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতিতে ফুলচাষিরা খুশি। ফেব্রুয়ারিতে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা

ফুলক্ষেত পরিচর্যা করতে করতে চাষি গোলাম রসুল জানান, এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। শেষ মুহূর্তে ক্ষেত পরিচর্যা করে ফুল ধরে রেখে বাজারে তুলতে হবে। ফুলের মান ভালো থাকলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, ঝিকরগাছার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবং যথাসময়ে শীত পড়ায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণও অনেক কম। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩ at ১৭:৪৭:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দপয/এমএইচ