মাদকবাহী জাবি অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় রিকশাচালক নিহতের ঘটনা ফাঁস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি মাদকবাহী এম্বুলেন্সের ধাক্কায় একজন অটো রিকশাচালক নিহত হয়েছে। একইসাথে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা আহত হয়ে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। গুরুতর আঘাতে ঐ মহিলার গর্ভের সন্তান মারা গেছে বলে জানিয়েছে সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশ। নিহতের নাম আব্দুল কুদ্দুস (৩০)। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আজিজুল হক।

নিহত অটোরিকশাচালক পটুয়াখালীর কাউখালী উপজেলার কোনাহোড়া এলাকার আব্দুল মজিদ শিকদারের ছেলে। তিনি সাভারের কলমা এলাকায় ভাড়া থেকে অটোরিকশা চালাতেন। গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। গত শনিবার পৃথক আরেকটি এম্বুলেন্সে করে র‍্যাগ উৎসবের মদ পরিবহনের সময় বংশাল থানায় ৪ জন আটক হলে এই ঘটনাটি প্রকাশ হয়।

ওসি আজিজুল হক বলেন, ‘সাভার মডেল থানায় একটি দুর্ঘটনা মামলা হয়েছে। যার বাদী সাভার হাইওয়ে থানা। ঘটনাটি ২৬ তারিখ রাতের। সেদিন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিপিএটিসি এলাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্স অটোরিকশাটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশা থেকে ছিটকে পড়ে চালক কুদ্দুস ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে হাইওয়ে থানায় আনে পুলিশ। পাশাপাশি একটি গর্ভবতী মহিলা আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার আসামি হচ্ছে একটি অজ্ঞাতনামা গাড়ির চালক। আমরা সেটি শনাক্ত করেছি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে আমরা সেটি প্রকাশ করবো না। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাহায্য নিচ্ছি। গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয় গত ২৭ জানুয়ারি। অনুষ্ঠান উপলক্ষে মাদকদ্রব্য পরিবহনে ব্যবহার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স। জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সটিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক রিফাত চৌধুরী ও উপ অর্থ সম্পাদক আহসান হাবিব ইমন। দুজনই দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় জাবির ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্সটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসে রাখা হয়েছে। যার লাইসেন্স নম্বর ঢাকা মেট্রো ছ ৭১-৪৫৪৫। দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চালক রিপন হাওলাদার।

এদিকে ঘটনাটি যাতে জনসম্মুখে না আসে এ জন্য শুরু থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঘটনা তদন্তে ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যায় সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের এস আই বাবুল (তদন্তকারী কর্মকর্তা)। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে ‘অসহযোগিতা’ করা হয়। তদন্তকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান এবং প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলো বলে জানান তিনি।

প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবরটি পুলিশ প্রশাসন আমাদেরকে জানিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে আমাদের এম্বুলেন্স নাকি চিহ্নিত হয়েছে। এখন আইন অনুসারে যা হওয়া দরকার সেটা হবে।’ মওলানা ভাসানী হলের পুনর্মিলনীর জন্য মাদক পরিবহনে এম্বুলেন্স ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মাদক পরিবহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয়েছিল এই তথ্য নিশ্চিত করে জাবির পরিবহন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় মওলানা ভাসানী হলের প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীরা গাড়িটি ব্যবহার করছিলেন।

দুর্ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা জাবি ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও মওলানা ভাসানী হলের ছাত্র রিফাত চৌধুরী বলেন, ‘সেদিন দুর্ঘটনার সময় আমিও গুরুতর আহত হই। আমার সাথে ৪৬ ব্যাচের ইমন ছিলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাক্তার শামসুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার রাতেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। আইন সঙ্গত উপায়ে এম্বুলেন্স কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করতে পারবে সে বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে। এজন্য গাড়িটি পুলিশ জব্দ করেনি। কারণ আমাদের এম্বুলেন্স সংকট রয়েছে।

আরো পড়ুন:
>থানা হেফাজতে নির্যাতনে নয়, আসামির মৃত্যু সড়ক দূর্ঘটনায়!
>রাণীশংকৈলে সামাজিক সম্প্রীতি কমিটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

তিনি আরও বলেন, ‘এম্বুলেন্স এর ড্রাইভার রিপন হাওলাদার আমাকে জানায় গাড়িতে মাদক আছে জানতে পেরে সে ঘাবড়ে যায়। ফলে এক্সিডেন্ট হয়। ঘটনার পরেই মাদক আনতে যাওয়া ছাত্ররা পালিয়ে যায়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত চলমান থাকায় রিপনকে আপাতত ছুটিতে রাখা হয়েছে।

সাভার হাইওয়ে থানার উপ পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বলেন, ‘সাভার থানার মামলা নম্বর ৭৭। আমরা অজ্ঞাতনামা সেই গাড়িটি শনাক্তের জন্য সিসিটিভি ফুটেজের সাহায্য নিয়েছি। সে অনুসারে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।

ফেব্রুয়ারি ০৬.২০২৩ at ২০:৫৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মেইস/এসআর