ঝিকরগাছায় চিঠি প্রাপ্তির তিন বছরেও মেলেনি ভবন মালিকের ক্ষতিপূরন

ঝিকরগাছায় সরকার কর্তৃক ব্রীজের জন্য ভূমি অধিগ্রহনের পর ঐ সম্পত্তিতে থাকা ভবনের অর্ধভাঙ্গা অংশ এখন মরনফাঁদে পরিনত হয়েছে। ধসে পড়তে শুরু করা ঐ অর্ধভাঙ্গা ভবনের মালিক ২০১৯ সালের ১১ জুলাই সরকার পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরনের চিঠি পেলেও তিন বছরেও মেলেনি ভবন মালিকের ক্ষতিপূরনের টাকা। যে চিঠিতে স্বাক্ষর দেখা যাচ্ছে যশোর জেলা ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা রোসলিনা পারভীন, কানুনগো আসলাম আলী এবং সার্ভেয়ার জাহিদুল ইসলামের এবং যার এল,এ কেস নম্বর ০৭/২০১৭-১৮ ।

সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ভূমি অধিগ্রহন ও হুকুমদখল আইন,২০১৭(২০১৭ সনের ২১ নম্বর আইন) এর ৮-ধারার(৩)(ক) উপধারা মোতাবেক ওই ভবনের মালিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। চিঠিতে ভবন মালিক আব্দুল্যা হীল কাফির নাম উল্লেখ করে তাকে এক কোটি সাত লাখ আটাআশি হাজার ছয়শত চুয়াত্তর টাকা দেয়ার হবে মর্মেও স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:
> পাইকগাছায় পুকুরে বিষ দিয়ে মৎস্য সম্পদের ক্ষতি, থানায় অভিযোগ
> পাইকগাছা উপজেলা গ্রাম ডাক্তার কল্যান সমিতির সভা অনুষ্ঠিত

চিঠি প্রাপ্তির এক বছর পার হলেও ক্ষতিপূরনের টাকা না পেয়ে গত ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চিঠিতে উল্লেখিত এল,এ কেস ০৭/২০১৭-১৮ এর ক্ষতিপূরন পাইবার আবেদন করেন মাননীয় জেল প্রশাসক বরাবর। জেলা প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি তদন্তের পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৯ নভেম্বর ২০২০ সালে তৎকালীন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান কে লিখিতভাবে নির্দেশ দেন,যার স্বারক নং৩৪৭(৭)।

এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৪ সদস্যের একটি টিম বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করেন। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভূমি অধিগ্রন কর্মকর্তা, যশোর জেলা গনপূর্ত উপ-বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীএবং ঝিকরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্রীজ নির্মান প্রকল্পের জন্য ঝিকরগাছা উপজেলার ৬৮ নং কৃষ্ণনগর মৌজার ৩৮ ও ৪৭ নং খতিয়ানের ৯১১ দাগের ০.০৬ একর জমির মধ্যে ০.০০৮ একর অধিগ্রহন করা হয়েছে। উক্ত দাগের উপর অবস্থিত ভবনের দুইজন মালিক যথাক্রমে ইমদাদুল হক ও আব্দুল্যা হীল কাফি ।

এর মধ্যে ইমদাদুল হকের জমি অধিগ্রহন হলেও আব্দুল্যা হীল কাফির অংশ অধিগ্রহন হয়নি। এছাড়া আরো উল্লেখ থাকে যে ভবনটি যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশের হওয়ায় অর্ধেক ভাঙ্গলে অপর ভবন মালিক আব্দুল্যা হীল কাফি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ও অর্ধভাঙ্গা হলে ভনটি ঝুঁকিপূর্ন হয়ে জানমালের ক্ষতিসাধন হবে। এ প্রতিবেদনটি ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সদয় অবগতির জন্য প্রেরন করেন তৎকালীন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এর পরও আবারো জেলা প্রশোসক মহোদয় বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন যশোর জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী এ তিন কর্মকর্তাকে। এ তিন কর্মকর্তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ভবনটি ১৯৪৭ সালের পূর্বে নির্মিত এবং দুজন মালিকের ভবনটি নির্মিত ও অবিচ্ছেদ্য। এখানে ভাঙ্গা হলে, ক্ষতিপূরন চেয়ে আবেদনকারী আব্দুল্যা হীল কাফি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এবং ভবনি বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ন ও জানমালের ক্ষতি সাধিত হবে।

এ প্রতিবেদনটিও তারা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাবর লিখিতভাবে ২০২১ সালের ২ জুন পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৩১ মে যশোর জেলা ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা কে,এম মামুনুর রশীদ বিষয়টি তদন্তপূর্বক জেলা প্রশাসক মহোদয় কে উক্ত ভবন মালিক কাফি’র আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদন সমূহ দেখে তার ক্ষতিপূরনের বিষয়য়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান।

এতগুলো কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন, ভূমি অধিগ্রহন ২০১৭ সালের ২১ নং আইন এর ১৫ নং কলাম বাংলাদেশ গেজেটে স্পষ্ট উল্লেখ থাকার পরও চিঠি প্রাপ্ত ক্ষতিপূরনের টাকা না পাওয়ায় ভবন মালিক আব্দুল্যা হীল কাফি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করছেন সেখানে তিন বছরের বেশী সময় ধরে যশোর এল, এ শাখায় ঘুরে তিনি সুরাহা পাচ্ছেন না। গত বৃহস্পতিবার এ ভবন এর উপর তলা থেকে ৪/৫ টি ইট ধসে সামনে থাকা পিচের রাস্তায় পড়ে। সব সময় জনমানব চলাচল করা রাস্তায় এভাবে ধসে পড়লে অচিরেই এ ভবনের কারনে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে যেকোন মূহুর্তে।

জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ at ১৮:৪২:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/এমএইচ