সরস্বতী পূজা আজ

ছবি- সংগৃহীত।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা আজ বৃহস্পতিবার। আজকের পঞ্চমী তিথিতে অগণিত ভক্ত বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর পাদপদ্মে প্রণতি জানাবেন তারা। এ উপলক্ষে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও সরস্বতী পূজার বর্তমান রূপটি আধুনিককালে প্রচলিত হয়েছে। তবে প্রাচীনকালে তান্ত্রিক সাধকেরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন বলে জানা যায়। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আজ বাণী অর্চনাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মন্দির ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পূজা ছাড়াও অন্য অনুষ্ঠানমালায় আছে- পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জা প্রভৃতি।

সরস্বতী দেবী শ্বেতশুভ্র বসনা। দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এজন্য তাকে বীণাপানিও বলা হয়। সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্ঞান ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী তার আশীর্বাদের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রতি বছর আবির্ভূত হন ভক্তদের মাঝে।

শিক্ষার্থীরাই এ পূজায় মনোযোগী হয়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঘরে ঘরে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূজার আয়োজন হলেও সরস্বতী পূজার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মাঠ। বিস্তীর্ণ এ মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে চমৎকার এক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

ইতিমধ্যে পূজা উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ হলকে ঘিরে রয়েছে নানা আয়োজন। কেন্দ্রীয় উপাসনালয় ও চারুকলার মণ্ডপসহ এ বছর হলের মাঠে প্রায় ৬৩টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। অংশ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ হলে পূজা মণ্ডপগুলোর মূল আকর্ষণ চারুকলার শিক্ষার্থীদের নির্মিত প্রতিমা। এ বছর হলের পুকুরের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন প্রতিমা।

সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে আজ দেবীর আরাধনা হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী গুরুসেবানন্দ বলেন, জ্যোতিষ শাস্ত্রে পাঁচ ধরনের সিদ্ধান্ত আছে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ওই সিদ্ধান্তগুলোর একটি। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে আজ সকাল ৮টায় শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথি শুরু হবে এবং থাকবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসরণ করেই পূজানুষ্ঠান করে থাকে।

আরো পড়ুন:
>রমজান আসন্ন: চ্যালেঞ্জের মুখে ভোগ্যপণ্যের বাজার
>যবিপ্রবিতে নানা আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত

ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে আজ সকাল সাড়ে ৭টায় পূজা আরম্ভ হবে। ৯টায় হাতেখড়ি, সাড়ে ১২টায় পুষ্পাঞ্জলি, ১২টা ১৫ মিনিটে হোম, ১টায় ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। সন্ধ্যায় আরতিক ও ভজনসঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পীরা। মঙ্গলবারও রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

৯টায় পূজা ও পুষ্পাঞ্জলি, ৯টা ৪০ মিনিটে দর্পণ বিসর্জন এবং সন্ধ্যায় আরতিকের পর প্রতিমা বিসর্জন। জগন্নাথ হলের পূজা শুরু হবে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে। ১০টায় অঞ্জলি প্রদান, সন্ধ্যায় আরতি অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেও রয়েছে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যায় আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হাটখোলা রোডের প্রভু জগদ্বন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায় বাণী অর্চনা, প্রসাদ বিতরণ এবং বিকাল ৪টা আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

জানুয়ারি ২৬.২০২৩ at ০৯:৪৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএইচ