কিস্তির চাপে নয়, পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যার চেষ্টা

কিস্তির টাকার চাপে নয়, পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন রোজী খাতুন। বুধবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এমন তথ্য দেন এ পাবনা প্রতিশ্রুতি এনজিও কর্তৃপক্ষ। এ সময় একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পাবনা প্রতিশ্রুতির সভাপতি আব্দুল মতীন খান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, রোজী খাতুন এই সংস্থাটিতে সদস্য হিসেবে ভর্তি হয়ে গত ৩ দফায় ঋণ নিয়ে পরিশোধ করার পর ৪র্থ দফায় গত ৩০.০৩.২০২২ তারিখে ৪৯:০০০/- (উনপঞ্চাশ হাজার) টাকা ঋণ নিয়ে ২৩ কিস্তি নিয়মিতভাবে পরিশোধ করার পর সে আর কিপ্তি পরিশোধ করতে পারে না। অক্টোবর ২০২২ মাসের প্রথম সপ্তাহে রোজী খাতুন বিভিন্ন ধরনের ঋণের চাপে বাড়ী/ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

বর্তমানে গত ১১.০১.২০২৩ তারিখ পর্যন্ত উক্ত ঋণের ঋণস্থিতি ( সার্ভিস চার্জসহ) ২৭,০৮৬/- টাকা এবং উক্ত টাকার মধ্যে বকেয়ার পরিমান ১৭,১৫০/- টাকা, তার জমাকৃত সঞ্চয়ের পরিমান ৭,৪৯৬/- টাকা। তিনি আরো জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণে রোজী-আমজাদ দম্পতির পরিবারে দ্বন্দ্ব-কলহ, ঝগড়া-বিবাদ ও অশান্তি পূর্ব থেকেই চলে আসছিল। এসব এর মূল কারণ ছিল স্বামীকে না জানিয়ে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া এবং গ্রাম্য মহাজনদের নিকট থেকেও অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ছেলেদেরকে দেয়া।

আরো পড়ুন:
>কুবির তাফসীর হোসেন জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় ১১তম
>স্বাবলম্বীর উদ্যোগে বর্ষ পরিবর্তন ওরিয়েন্টেশন অনুষ্টিত

বিশেষ করে তার ছোট ছেলে মো. হৃদয় হোসেনকে ৪/৫ লক্ষ টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো এবং ছেলে বিদেশে থাকতে না পেরে দেশে ফেরত চলে আসা এবং তাদের বড় ছেলে আসাদ খা আইপিএল এ জুয়া খেলে প্রচুর টাকা নষ্ট করায় ঋণগ্রস্থ হলে পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। প্রথম অবস্থায় দেনাদারদের ঋণের টাকা নিয়মিতভাবে পরিশোধ করলেও গত তিন মাস (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২২) যাবৎ কোন টাকা-পয়সা দিচ্ছে না। বিভিন্ন এনজিও এর কিস্তি ও স্থানীয় মহাজনদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে মাঝখানে প্রায় ৩ মাস রোজী খাতুন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে ছিলেন।

বাড়িতে এসে কোন উপায় না পেয়ে সুদি মহাজনদের টাকার চাপে রোজী খাতুন এর স্বামী গত ০৯:০১,২০২৩ তারিখে তার বসত বাড়ি বিক্রি করলে ঐ দিনই কোন এক সুদি মহাজন তার ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে রোজী খাতুন এর স্বামী আমজাদকে রেজিষ্ট্রি অফিস হতে তুলে নিয়ে আটকিয়ে রেখে তার পাওনা টাকা জোর পূর্বক আদায় করে নেন। রোজী খাতুন কর্তৃক স্থানীয় ভাবে সুদে নেওয়া ঐ টাকার বিষয়ে তার স্বামী আমজাদ জানতো না বিধায় বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে এবং তার স্বামী এই সকল বিষয় নিয়ে প্রায়ই রোজী খাতুনকে গালমন্দসহ তাকে তালাক দেবার হুমকি প্রদান করত, এর প্রেক্ষিতে রোজী খাতুনও প্রয়োজনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে বলে স্বামীকে হুমকী প্রদান করত। এমনি ভাবে অশান্তির মধ্য দিয়েই চলছিল তাদের সংসার জীবন।

গত ১১.০১.২০২৩ তারিখে শাখার ম্যানেজার মো. এহিয়া খাঁন লোক মাধ্যমে জানতে পারে যে, রোজী খাতুন ঢাকা থেকে ফিরে এসে বসত বাড়ি বিক্রি করে স্থানীয় মহাজন ও অন্যান্য পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। তখন তিনি। সংশ্লিষ্ট ফিল্ড অফিসার সাহিদা খাতুনকে বলেন যে, রোজী খাতুন ঢাকা থেকে ফিরে এসে জায়গা-জমি বিক্রি করে অন্যান্য পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন আপনি কী তা জানেন? আপনি রোজী খাতুনের সাথে আজই যোগাযোগ করে পাওনা টাকার বিষয়ে কথা বলেন।

তখন সংশ্লিষ্ট ফিল্ড অফিসার সাহিদা খাতুন বলেন যে, স্যার আমি বিকালে রোজী খাতুনের বাড়িতে যাবো। বিকাল প্রায় ০৪:০০ টার দিকে সংশ্লিষ্ট ফিল্ড অফিসার সাহিদা খাতুন আরো ৩ জন সহকর্মীকে (মো. কামাল হোসেন, মো. মাসুদ রানা ও খাদিজা খাতুন) সাথে নিয়ে রোজী খাতুনের বাড়িতে যায়। বাড়িতে গিয়ে রোজি খাতুন ও তার স্বামী আমজাদ হোসেনের সাথে পাওনা টাকার বিষয়ে কথা বললে রোজী খাতুন ইশারায় ফিল্ড অফিসার সাহিদা খাতুন ও অন্যান্য ফিল্ড অফিসার কে পাওনা টাকা চাইতে নিষেধ করেন, আর এটা বুঝায় যে, ঋণ গ্রহণের বিষয়ে তার স্বামী কিছুই জানেন না, তিনি ছেলে আসাদকে জামিনদার করে ঋণ গ্রহন করেছেন।

আরো পড়ুন:
>কুবির তাফসীর হোসেন জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় ১১তম
>স্বাবলম্বীর উদ্যোগে বর্ষ পরিবর্তন ওরিয়েন্টেশন অনুষ্টিত

পরে সংশ্লিষ্ট ফিল্ড অফিসারের সাথে রোজী খাতুনের কিস্তি আদায়ের বিষয়ে কথা হয় এবং তাদের মতামতের প্রেক্ষিতে ঋণ ছোট করার জন্য রোজী খাতুন ও তার মাকে (জোসনা) বিকাল ০৫.০০ টার দিকে পাবনা প্রতিশ্রুতি দোগাছী শাখা অফিসে আসতে বলেন। অফিসে ম্যানেজার মো. এহিয়া খান টাকা দেওয়ার জন্য রোজী খাতুনকে বলেন। অফিসে তাদের সাথে কোন প্রকার অসৌজন্যমূলক আচরন করা হয় নাই, তাদেরকে সম্মানের সাথে অফিসে চা, পান খাওয়ানো হয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সংস্থার অবশিষ্ট পাওনা টাকা পূনরায় ছোট করে ঋণ করে নিবেন এবং পরের দিন সকাল ১০/১১ টায় এ সংক্রান্ত বিষয়ে অফিসে আসবেন এমন সিদ্ধান্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মী সাহিদা খাতুনের বাড়ী রোজী খাতুনের বাড়ীর পাশাপাশি হওয়ায় তাকে সাথে দিয়ে রোজী খাতুন ও তার মাকে প্রায় ৭:০০ টার দিকে বাড়ীতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

রোজী খাতুনের বাড়ি থেকে ফিল্ড অফিসার সাহিদা খাতুন চলে আসার মুহুর্তে ওদের পরিবারে স্বামী-স্ত্রী ও ছেলেদের মধ্যে প্রচন্ড ঝগড়া-কলহ শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তার স্বামী আমজাদ হোসেন তাকে তালাক দেবার হুমকি দেয়। ঐ দিন (১১.০১.২০২৩) রাত আনুমানিক ০৯:৩০ টার দিকে রোজী খাতুন তার নিজ বাসায় বাথরুম পরিস্কার করার তরল পদার্থ পান করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন।

প্রাথমিক অবস্থায় ঐ রাত্রেই তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। বিষয়টি ১২.০১,২০২৩ তারিখে সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে প্রধান কার্যালয় অবহিত হলে সংশ্লিষ্ট এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মনোয়ার হোসেন ও আরেকজন এরিয়া ম্যানেজার মো. ইকবাল হোসেনকে সার্বক্ষনিক রাজশাহীতে অবস্থান করে রোজী খাতুনের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হয়।

রোগীর শারীরিক অবস্থা অনেকটা ভালো হলে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে সার্বক্ষনিক অবস্থানরত এরিয়া ম্যানেজারগণ রোজী খাতুনকে গত ১৮.০১.২০২৩ তারিখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সেখানে রোজী খাতুনের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য গত ১৮.০১.২০২৩ তারিখেই সংস্থার পরিচালক মো. মনির হোসেনকে ঢাকাতে পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:
>কুবির তাফসীর হোসেন জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় ১১তম
>স্বাবলম্বীর উদ্যোগে বর্ষ পরিবর্তন ওরিয়েন্টেশন অনুষ্টিত

চিকিৎসা শেষে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রিলিজ করলে সংস্থার পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট এরিয়া ম্যানেজারগণ গত ২২.০১.২০২৩ তারিখ দিবাগত রাতে অত্র সংস্থার গাড়িতে করে তাকে ঢাকা থেকে তার ভাইয়ের বাসা পাবনাস্থ আরিফপুরে পৌঁছিয়ে দেয়। বর্তমানে রোজী খাতুন তার ভাইয়ের বাসা আরিফপুরে অবস্থান করছেন, এখনও তার চিকিৎসাসহ আনুসঙ্গিক খরচাদী সংস্থার পক্ষ হতে বহন করা হচ্ছে।

জানুয়ারি ২৫.২০২৩ at ১৭:৩৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএইচ