শ্বশুড় বাড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে গৃহবধুর আত্মহত্যা

ফাইল ছবি।

ঢাকার সাভারে শ্বশুড় বাড়ির চরম নির্যাতন সইতে না পেরে মারজাহান আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে। মারজাহান স্থানীয় মোমেনা চাকলাদার মহিলা কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার দিনেই তার উপর অমানষিক নির্যাতন নেমে আসে। অবশেষে সেই দিন আত্মহত্যা করে জীবনাবসান ঘটান মারজাহান।

এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ এনে স্বামী, শ্বশুড়সহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন নিহতের মা পারভীন আক্তার। জানা গেছে, লক্ষীপুর জেলার গান্ধারবাপুর গ্রামের প্রবাসী রেজুয়ানুর রহমানের মেয়ে মারজাহান আক্তার সাভারে তাঁর মামা হুমায়ুন কবীরের বাসায় বেড়াতে আসেন। সেখানে মেয়েটিকে দেখে পছন্দ হওয়ায় গত ২০২২ সালের ২৫ মার্চ পারিবারিক ভাবে বিয়ে দেন সাভারের দরিয়ারপুরের নূরুল আমীনের ছেলে এবং সাভার রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবীশ রাসেদুল ইসলাম (২৫) এর সাথে। বিয়ের পর থেকে শ্বশুড় বাড়ির চরম নির্যাতন সইতে হয়েছে মারজাহানকে।

১৯ জানুয়ারী মারজাহান লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাভারের মোমেনা চাকলাদার মহিলা কলেজের ডিগ্রী প্রথমবর্ষে ভর্তি হন। কলেজে ভর্তি হওয়ার অপরাধে মারজাহানের স্বামী রাসেদুল কলেজে গিয়েই প্রকাশ্যে তাঁকে বিভিন্নভাবে অপমান অপদস্থ করে এবং হুমকী প্রদান করে। এরপর সে বাসায় গেলে কলেজে ভর্তি হওয়ার অপরাধে শ্বশুড় নূরুল আমীন, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা ও দেবর রাকিব (১৮), ননদ অন্তু (২৩) মারজাহানকে শারীরিক ও মানষিকভাবে চরম নির্যাতন চালায়। মারজাহান ফোনে তাঁর মা’কে বিষয়টি জানান।

আরো পড়ুন:
>সমাবর্তন ও মূল সনদপত্র উত্তোলন ফি কমানোর দাবিতে, যবিপ্রবিতে বিশাল মানববন্ধন
>উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

এরপরও নির্যাতন অব্যাহত থাকায় ঐ রাত প্রায় সাড়ে ১০ টার দিকে নিজ ঘরে মারজাহান ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পুলিশ ঝুলন্ত মারজাহানের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। মোমেনা চাকলাদার মহিলা কলেজের অনেকেই জানান, মারজাহান কলেজে ভর্তি হতে এলে সে সময় তাঁর স্বামী ও অন্যান্য লোকজন মারজাহানকে নানা ভাবে অপমান অপদস্থ করে বাসায় নিয়ে যায়। সে সময় বিষয়টি আমাদের কাছে খারাপ লেগেছে। তাঁর মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।

মারজাহান আক্তারের মামা হুমায়ুন কবীর বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমার ভাগ্নিকে হত্যা করেছে নূরুল আমীন ও তাঁর পরিবার। অনেক সম্পদের মালিক হওয়ায় বিয়ের পর থেকে তারা মারজাহানকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতো। আমি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। নিহত মারজাহানের মা পারভীন আক্তার জানান, বিয়ের পর থেকে গরীব বলে নানাভাবে আমার মেয়ে ও আমাকে তিরষ্কার করতো নূরুল আমীনের পরিবার।

মারজাহানের স্বামী রাশেদুল ইসলাম, দেবর রাকিব ও ননদ অন্তুর যন্ত্রণায় আমার মেয়ে অতিষ্ট ছিল। এক সময় তাদের পরিবার থেকে আমার মেয়ে লক্ষীপুরে চলে আসে। তখন আমার মেয়েকে আর সে সংসারে ফেরৎ পাঠাবো না বলে সিন্ধান্ত নেই। কিন্তু নূরুল আমীনের পরিবার আবারও আমার মেয়েকে অত্যাচার করবে না মর্মে নিয়ে যায়। আজ তাদের কারণে আমি মেয়ে হারা হলাম।

আরো পড়ুন:
>সমাবর্তন ও মূল সনদপত্র উত্তোলন ফি কমানোর দাবিতে, যবিপ্রবিতে বিশাল মানববন্ধন
>উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

বড়লোকের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়া অনেক বড় ভুল হয়েছে। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, গত ২০ তারিখে এ ব্যাপারে ৩০৬/৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মারজাহানের স্বামী রাসেদুল ইসলামকে ঐ দিনই গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। মারজাহান আত্মহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে।

পলাতক থাকায় এ ব্যাপারে নূরুল আমীন ও তাঁর পরিবারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মোমেনা চাকলাদার মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী, সাভারের সচেতন মহল ও মানবাধিকার কর্মীরা মারজাহান হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।

জানুয়ারি ২৩.২০২৩ at ১৭:০১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআর