ভয়ংকর খুনির বিশ্বরেকর্ড

ছবি- সংগৃহীত।

সিরিয়াল কিলার রবার্ট মাউডস্লে। এই খুনি এবার বিশ্বরেকর্ড করেছে। মাটির নিচে বা আন্ডারগ্রাউন্ডে কাচে তৈরি একটি বাক্সে নিঃসঙ্গ কারাবাস করে তার এই বিশ্বরেকর্ড। মাটির নিচে ১৮ ফুট বাই ১৪ ফুট বাক্সে দিনে ২৩ ঘন্টার বেশি অবস্থান করছে সে। একদিন দু’দিন নয়। টানা ১৬,৪০০ দিন এভাবে ওই কাচের বাক্সে নিঃসঙ্গ কাটিয়েছে সে। বৃটিশ মিডিয়া এ খবর দিয়ে বলছে হরর ছবি ‘সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্পস’-এ হ্যানিবল লেকটারের কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে।

খুনি রবার্ট মাউডস্লে ধারাবাহিকভাবে মানুষ খুন করেছে। শুধু তা-ই নয়। সে খুন করে সেইসব মানুষের ব্রেন ভক্ষণ করার দায়ে অভিযুক্ত। এ জন্য তার ভয়াবহতাকে নাম দেয়া হয়েছে ‘হ্যানিবল দ্য ক্যানিবল। বৃটেনের লিভারপুলের টোক্সেথের বাসিন্দা রবার্ট মাউডস্লে। ১৯৭৪ সালে প্রথম খুন করে সে। এ সময় তাকে তুলে নিয়ে যায় জন ফ্যারেল নামে একজন অবকাঠামো নির্মাতা। রবার্ট মাউডস্লে’র সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাকে নর্থ লন্ডনে নিজের একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। অন্যদিকে রবার্ট মাউডস্লে ছিল একজন ভাড়াটে।

সেখানে একজন যুবতীর ওপর পাশবিকতা চালিয়েছিল ফ্যারেল। সেইসব যুবতীর ছবি সে দেখায় রবার্ট মাউডস্লে’কে। তখন রবার্ট মাউডস্লের বয়স ছিল ২০ বছর। সে যুবতীদের ছবি দেখে ভীষণ রেগে যায়। এক পর্যায়ে গলাটিপে হত্যা করে ফ্যারেলকে। এতে ফ্যারেলের মুখ নীল হয়ে যায়।

এ ঘটনার পর সে নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দেয়। তাকে পাঠানো হয় ব্রোডমুর হাসপাতালে। সেখানে সে প্রথম ‘ব্লু’ হিসেবে ডাকনাম পায়। ফ্যারেলের মুখ নীল হয়ে যাওয়ায় তার এমন নাম দেয়া হয়। ১৯৭৭ সালের পরপরই তার ডাকনাম দেয়া হয় ‘স্পুন’। জেলখানার ভিতর প্রথম ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের কারণে তাকে হেয় করতে এমন নাম দেয়া হয়। ওই সময় সে এবং তার অন্য একজন মনোবিকারগ্রস্ত ব্যক্তি এক কয়েদি রুমমেটকে তাদের সেলে জিম্মি করে। তাকে ৯ ঘন্টা ধরে নির্যাতন করে হত্যা করে। দেখা যায়, চামচ দিয়ে আঘাত করে সিদ্ধডিম ছোলার সময় যেভাবে ফাটানো হয়, ওই ব্যক্তির মাথাকে সেভাবে ফাটিয়েছে। এ কারণে তাকে ‘স্পুন’ বা চামচ নাম দেয়া হয়।

এরপর এক প্রহরী দাবি করেন যে, নিহত ব্যক্তির ব্রেন ভক্ষণ করেছে রবার্ট মাউডস্লে। তবে এই অভিযোগ পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এ ঘটনায় এই খুনিকে ‘ক্যানিবল’ বা মানুষখেকো নাম দেয়া হয়। মানুষকে গলাকেটে হত্যার জন্য তাকে দায়ী করা হয়। এ জন্য তাকে পাঠানো হয় ওয়েকফিল্ড কারাগারে। এই কারাগারটি পরিচিত মনস্টার ম্যানসন হিসেবে। সেখানে বিপুল পরিমাণ কুখ্যাত বন্দি থাকার কারণে এমন নাম। এখানেও এই কুখ্যাত খুনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বসে। ১৯৭৮ সালের একদিন সে তার অনুসারী দুই বন্দিকে হত্যা করে।

আরো পড়ুন:
>ছেলের মাদক ব্যবসায় ফেঁসে গেলেন মা ও স্ত্রী
>আর্থিক সংকটে ইভিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়

ওই কারাগারে প্রথমে সে হত্যা করে স্যালনি ডারউড’কে (৪৬)। তাকে রবার্ট মাউডস্লে নিজের সেলে নিয়ে যায় প্রলুব্ধ করে। তারপর তাকে শ্বাসরোধ করে। সুপ খাওয়ার চামচ ব্যবহার করে সে আগে থেকেই একটি ছুরি বানিয়ে রেখেছিল। তা দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে। এরপর মৃতদেহ একটি পাটাতনের নিচে লুকিয়ে রাখে। এই হত্যা সম্পন্ন করে সে আরেক বন্দি উইলিয়াম রবার্টসের সেলে প্রবেশ করে। তখন নিজের বিছানায় শুয়ে ছিলেন উইলিয়াম রবার্ট। জেলখানার ভিতরেই নিজের তৈরি অস্ত্র দিয়ে সে উইলিয়ামের মাথাকে একটি দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করে। এতে তার মাথার খুলি বেরিয়ে পড়ে।

নৃশংসতা শেষে এই ঘাতক ঠাণ্ডা মাথায় জেলখানার উইং অফিসে গিয়ে প্রহরীদের বলে, রোলকল করলে দু’জন বন্দি কম হবে। এমন সব ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ফলে ১৯৮৩ সাল থেকে বুলেটপ্রুফ কাচে তেরি একটি সেলের ভিতর দিনে ২৩ ঘন্টা করে অবস্থান করছে সে। তাকে সরকারিভাবে ক্লাসিফায়েড করা হয়েছে বৃটেনের সবচেয়ে বিপজ্জনক বন্দি হিসেবে। ওই সেলে একা একা অবস্থানকালে রবার্ট মাউডস্লে তার ভাতিজা গাভিন’কে লিখেছে একের পর এক চিঠি এবং কবিতা। তার এই ভাতিজা নিয়মিত তাকে দেখতে যান।

মানসিক বিকারগ্রস্ত এই রবার্ট মাউডস্লের আছে মারাত্মক আইকিউ। তার পছন্দ ফাইন আর্ট, কবিতা এবং ক্লাসিক মিউজিক। এ ছাড়া পশুপাখি বিষয়ক ডকুমেন্টারি তার পছন্দ। ‘দ্য কিলার ইন মাই ফ্যামিলি’ ডকুমেন্টারিতে গাভিন বলেছেন, চাচা আমাকে চিঠি লিখতে পছন্দ করেন। টেলিভিশনে কি দেখছেন তা আমাকে বলেন। তিনি আসলে বণ্যপ্রাণি বিষয়ক প্রোগ্রাম খুব পছন্দ করেন।

আরো পড়ুন:
>ছেলের মাদক ব্যবসায় ফেঁসে গেলেন মা ও স্ত্রী
>আর্থিক সংকটে ইভিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়

নিঃসঙ্গ এই কারাবাসের প্রথমদিকে তেলাপোকার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল রবার্ট মাউডস্লে। ১২ বছর চুল কাটায়নি। কারণ, জেলখানার কোনো নরসুন্দর তাকে স্পর্শ করতে পারতো না। এখনও হাতে লেখা চিঠিতে সে স্বাক্ষরের স্থানে লেখে ‘উলফি’। চারটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে রবার্ট মাউডস্লে। নিঃসঙ্গ এই কারাবাসে মাত্র এক ঘন্টা সময় তাকে দেয়া হয় শরীরচর্চার জন্য। এ সময় তাকে ঘিরে রাখে ৬ জন প্রহরী। তার রেকর্ড অনুযায়ী, কোনো বন্দির সঙ্গে তার যোগাযোগ করার অনুমতি নেই।

জানুয়ারি ২৩.২০২৩ at ১৫:২০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআর