আর্থিক সংকটে ইভিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়

ছবি- সংগৃহীত।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় শতাধিক আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে লক্ষ্যে রক্ষণাবেক্ষণসহ আরও দুই লাখ নতুন ইভিএম কেনার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আর্থিক সংকটের এই সময়ে এখনো অনুমোদন পায়নি প্রকল্পটি। বরং ব্যয় কমিয়ে সংশোধিত প্রস্তাব দিতে বলেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প আর্থিক সংকটে আপাতত বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। সোমবার (২৩ জুনয়ারি) তিনি এ কথা জানান।

তিনি আরও বলেন, সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় ইসি। সে লক্ষ্যে আরও দুই লাখ নতুন ইভিএম কেনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা। ইভিএম সরবরাহ করে সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ। তবে এর বেশ কিছু যন্ত্রাংশ আমদানিনির্ভর। ডলার সংকটেও এটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে জানান এ কমিশনার।

নতুন দুই লাখ ইভিএম কিনতে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা ‘নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি। গত মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশন ওই প্রকল্প প্রস্তাবের ব্যয় যৌক্তিক করার পরামর্শ দেয়।

আরো পড়ুন:
>শৈলকুপা হাসপাতালের এম্বুলেন্স ড্রাইভারের উপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা
>মানবতাবিরোধী অপরাধে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, পরিকল্পনা কমিশন কী পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তা নির্বাচন কমিশন এখনো জানে না। এগুলো দেখার পর কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্প অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। পরিকল্পনা কমিশন বা অর্থ মন্ত্রণালয় কত টাকা দিতে পারবে, তার ওপর এটি নির্ভর করে।

চলতি মাসে অনুমোদন না হলে ভেস্তে যেতে পারে নির্বাচন কমিশনের দেড়শ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার পরিকল্পনা। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান সময় সংবাদকে বলেন, ডিসেম্বরে অর্থছাড় হলে আগামী অক্টোবরে মিলবে দুই লাখ মেশিন। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ শেষে আগামী বছর নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইভিএম প্রস্তুত করা সম্ভব হবে। অন্যথায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অসম্ভব।

ইভিএম নিয়ে এ কমিশনের আগ্রহ শুরু থেকেই চোখে পড়ার মতো। রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ আর সাবেকদের (নির্বাচন কমিশনার) সঙ্গে আলোচনায় ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও ইসির সিদ্ধান্ত: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের।

এদিকে কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে হাতে সময় আছে দেড় বছরের কম। অথচ দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করতে দরকার হবে আরও দুই লাখ মেশিন। যার বাজারদর প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রায় ৩১ হাজার কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ, ইভিএম পরীক্ষা-নিরীক্ষা–সবকিছু মিলিয়ে পুরো প্রকল্প কেবল ব্যয়বহুলই নয়, চ্যালেঞ্জিংও। অথচ অর্থছাড় তো দূরের কথা, প্রকল্প অনুমোদনই থমকে আছে এখনও।

আরো পড়ুন:
>শৈলকুপা হাসপাতালের এম্বুলেন্স ড্রাইভারের উপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা
>মানবতাবিরোধী অপরাধে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান সময় সংবাদকে বলেন, ‘প্রকল্পের অনুমোদনটা আগে লাগবে। প্রস্তাবনাটা আমরা সাবমিট করেছি। এখন এটা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় যত তাড়াতাড়ি আমাদের দিতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি প্রকল্পটা বাস্তবায়ন সহজ হবে। যতটুকু অগ্রগতি আশা করছিলাম, সেটা এখন পর্যন্ত হয়নি।’

তিনি আরও জানান, দেড়শ আসনের লক্ষ্য ছুঁতে এই নভেম্বরেই লাগবে অনুমোদন। তাহলে ডিসেম্বরে মিলবে অর্থ। ফেব্রুয়ারিতে শুরু করা যাবে ক্রয় প্রক্রিয়া। এরই মাঝে চলতে থাকবে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কাজ। অক্টোবরে দুই লাখ মেশিন হাতে পেলে নভেম্বরের মধ্য ভোটের জন্য প্রস্তুত করা যাবে। আর তা না হলে অসম্ভব হয়ে যাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।

জানুয়ারি ২৩.২০২৩ at ১৪:১৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআর