যশোরে দ্য গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস নাটকের ১০৬তম মঞ্চায়ন

ছবি: সংগৃহীত

‘দ্য গ্রেট বেঙ্গল’ নামের সার্কাস দলটি একসময় ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। নানা জায়গায় শো করে দলটি। একসময় দলের ভেতর শুরু হয় অন্তর্কলহ। একদিন দলটি এক গ্রামে শো করতে যায়। সেখানে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কালো থাবা এসে পড়ে দলটির ওপর। সার্কাস বন্ধ করার হুমকি আসে। সার্কাস দলে আগুন দেওয়া হয়।

হতাহতের ঘটনা ঘটে। বন্ধ হয়ে যায় সার্কাস। একটি সার্কাস দলের পটভূমিতে এমনই গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক। চিত্তাকর্ষক ও সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে যশোর আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে নাটকটির ১০৬তম মঞ্চায়ন হয়েছে। নাট্য উৎসবের ১০ম দিন শনিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে নাটকটির মঞ্চায়ন হয়। প্রাচ্যনাট প্রযোজিত নাটকটির নাট্যকার ও পরিচালক আজাদ আবুল কালাম।

এর আগে সার্কাস সার্কাস নাটকটি ১০৫ বার মঞ্চায়ন হয়। মূলত একটি সার্কাস দলকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে এই নাটক। এরমধ্যে দলের ভেতরে-বাইরে নানা সমস্যা দেখা যায়। অদক্ষ খেলোয়াড়, সদস্যদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দলটি। সমস্যা আরও ঘনীভূত হয় যখন স্থানীয় ধর্মীয় প্রভাবশালী নেতারা সার্কাস শো বন্ধ করার জন্য হুমকি দেন। শুধু দলের বাইরে থেকে নয়, ভেতরেও কলহের সূত্রপাত হয়। ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ‘দ্য গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’-এ আগুন দেয়। তিন খেলোয়াড়ের প্রাণহানি ঘটে। পুড়ে যায় সার্কাসের সব পশু।

ছবি: সংগৃহীত

নাটকটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি সার্কাস দলের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার নানা দৃশ্যের পাশাপাশি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও আঙুল তোলা হয়। এ নাটকে অভিনয় করেন আজাদ আবুল কালাম, শতাব্দী ওয়াদুদ, শাহেদ আলী ও সানজিদা প্রীতি প্রমুখ।

আরো পড়ুন:
> রাতের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়ার আভাস
> বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, একই পরিবারের ৩ জন নিহত

নাট্যকার ও পরিচালক আজাদ আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, সার্কাস সার্কাস নাটকটি শততম পর্ব মঞ্চায়ন হয়েছে অনেক আগেই। নাটকটি আমাদের দলের একটি জনপ্রিয় নাটক। নাটকটি করে দর্শকের কাছে অনেক সাড়া পেয়েছি। মাঝে করোনার কারণে কিছুদিন মঞ্চায়ন হয়নি। দীর্ঘদিন পর সাংস্কৃতিক সংগঠনের জেলা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন জেলা যশোরে নাটকটি মঞ্চায়ন করতে পেরে অবশ্যই ভালো লাগছে। মুরাদ হোসেন নামের একজন দর্শক জানান, আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব যশোরবাসীর জন্য অনেক বড় পাওয়া।

যশোরে বসে এত সুন্দর মঞ্চনাটক দেখতে পারা সৌভাগ্যের। এসব নাটকে গণমানুষের না বলা কথাই উঠে আসে। আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব কমিটির সদস্য সচিব কামরুল হাসান রিপন বলেন, শিল্প-সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে যশোরকে তুলে ধরার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ উৎসবে ঢাকার ৯টি এবং যশোর, মৌলভীবাজার ও ভারতের একটি করে মোট ১২টি নাট্যদল নাটক মঞ্চস্থ করছে। এরই মধ্যে ১০টি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। নাটক বিষয়ে সেমিনারও চলছে। এ উৎসবে দেশের খ্যাতিমান ২৫ জন নাট্যাভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকারকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।

গত ১২ জানুয়ারি যশোর আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী দিন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একটি করে নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। এরমধ্যে প্রাঙ্গণে মোর ‘হাছন জানের রাজা’, পালাকার ‘উজানে মৃত্যু’, নাট্যম রেপার্টরী ‘কোথায় জলে মরাল চলে’, নাট্যকেন্দ্র ‘পুণ্যাহ’, স্টেইজ ওয়ান ‘শোধ’, মৌলভীবাজারের মনিপুরী থিয়েটার ‘কহে বীরাঙ্গনা’ ও যশোরের থিয়েটার ক্যানভাস ‘লালসালু’ নাটকের মঞ্চায়ন করেছে।

রোববার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ভারতের একমাত্র নাট্যদল হিসেবে উৎসবে অংশ নেওয়া শান্তিপুর সাংস্কৃতিক ‘অংশুপট উপাখ্যান’ এবং পরদিন সোমবার ‘জয়তুন বিবির পালা’ নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে ১২ দিনব্যাপী এ নাট্যোৎসবের পর্দা নামবে।

জানুয়ারি ২২, ২০২৩ at ২১:১৪:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস