ক্ষেতলালে শাশুড়ীর বিরুদ্ধে গৃহবধূর মামলা

ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে গর্ভপাত, হত্যার চেষ্টা, বাড়ির উঠানে জোরপূর্বক প্রবেশ, চুরি, ছিনতাইসহ একাধিক অভিযোগ দেখিয়ে শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করলেন প্রবাসী ফিতা মিয়ার স্ত্রী গৃহবধূ সম্পা বানু। গত ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ ঘটিকায় উপজেলার চৌমুহনী ধনতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারী জয়পুরহাট বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে সম্পা বানু বাদী হয়ে শাশুড়ী, দেবরসহ চারজনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন। মামলায় আসামীরা হলেন, উপজেলার ধনতলা গ্রামের মৃত আকামদ্দিনের ছেলে নজরুল, নজরুলের স্ত্রী তহমিনা, রবিউলের স্ত্রী সুলতানা ও নজরুলের সৎ মা প্রতিবন্ধী রাবেয়া বেওয়া৷ মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদী সম্পা বানুর স্বামী বিদেশ হতে অনেক টাকা পয়সা পাঠায়, আসার সময় সোনাদানা নিয়ে আসে। এতে আসামীগণ ঈর্ষান্বিত হয় এবং তাকে বাড়িতে একা পেয়ে আসামীরা জমিজমা ভাগবাটোয়ারাসহ তার বিভিন্ন কাজে বাঁধা দেয়।

আরো পড়ুন:
> সিরাজগঞ্জে পিতা হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে কন্যার সংবাদ সম্মেলন
> সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিকের রমরমা দখল বাণিজ্য

ঘটনার দিন সম্পা কাজের লোক ভাড়া নিয়ে বাড়ির বেড়া মেরামত করছিলেন। এমন সময় আসামীগণ দলবল নিয়ে এসে তার কাজে বাঁধা প্রদান করে এবং বাড়ির উঠানে জোরপূর্বক প্রবেশ করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে। পরে সে দুঁপচাচিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় এবং কোর্টে মামলা করে। এব্যাপারে বাদী সম্পা বানুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কোর্টে মামলা করেছি, কোর্ট যে রায় দিবে মেনে নিবো।

পুলিশ এসেছিলো তদন্ত করেছে। এব্যাপারে গৃহবধূর শাশুড়ী প্রতিবন্ধী রাবেয়া বেওয়া বলেন, আমি বাড়ি না থাকা অবস্থায় গত দুই বছর পূর্বে সীমানা ঘেঁষে আমার ছেলে ফিতা মিয়া প্রাচীর তোলে। যার টিনের পানি এসে আমার সীমানায় পড়ে। ঘটনার দিন বাড়ি করার জন্য ইট এনে ফিতার জায়গায় রাখি। ছেলের বউ খবর পেয়ে বাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, পরে আমি লোক দ্বারা ইট সরিয়ে নেই।

দিন কয়েক পূর্বে পুলিশ আসে তদন্ত করতে তখন জানতে পারি আমাদের নামে মামলা হয়েছে কোর্টে। অথচ আমরা কেউ ছেলের বউকে মারধর করিনি কিংবা এধরণের কোন ঘটনাও ঘটেনি। আমাদের নামে এসব মিথ্যা মামলা করেছে।

এবিষয়ে স্থানীয়রা গণস্বাক্ষাতকার দিয়ে জানান, আঞ্চলিক ভাষায় তুলে ধরা হলো, এটে কোন মারামারি হয়নি? ফিতার জাগাত ইট থুচে তাই ফিতার বউ বাপের বাইত থেকে এটে আসে কথাকাটাটি হচে কিন্তু কোন মারামারি, চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা লয় এলা মিচা কতা। তারা আরো বলেন, নজরুল সুলতানা রাবেয়া তহমিনা এগে মতো ভালো মানুষ আমাদের এলাকাত খুব কম আছে।

জমি-জমার সিমানা লিয়ে ফিতা ওর আপন ভাই নজরুল আর সৎ মায়ের সাথে অনেকদিন ধরে এই দন্দ্ব করোচে। তাই হয়তে ফিতার বউ সম্পা বুদ্ধি করে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এলা ঘটনা সাজে মামলা করিচে। ঘটনার দিন নজরুল বাইত আচোলই না, আর ওই মেয়া এটে থাকে না, বাপের বাইত থাকে। মামলা করলেই হবে খালি। কোটে ওক কে মারলো অজগবি কতা, মারলে হামরাই দেখনোনাহিনি।

এদিকে মামলার ৩ নং ও ৪ নং স্বাক্ষী জানান, এই মামলায় যে আমাদের স্বাক্ষী বানিয়েছে তাতে আমাদের কোন অনুমতি নেয়নি। মামলার স্বাক্ষী দিতে আমরা কোথাও যাবো না৷
অপরদিকে মামলার ১ ও ২ নং স্বাক্ষী বাদির আপন ভাতিজি ও ভাতিজা। এরা দুইজন ওই এলাকার বাসিন্দাও নয়৷

মামলার ১ নং আসামী নজরুল ইসলাম জানান, আমি ঘটনার দিন দুপচাচিয়া ধাপের হাটে গরু ক্রয় করতে যাই। গরু নিয়ে আসতে সন্ধা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না অথচ আমার নামে আমার ভাইয়ের বউ মামলা করেছে। তিনি আরো বলেন, আমার সৎ মায়ের বিরুদ্ধে আনা ভাবির এমন অভিযোগ সত্য নয়। প্রশাসনের নিকট ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যন মশিউর রহমান শামীম জানান, বর্তমান যে মামলা হয়েছে সেটি আমার জানা নেই। তবে ইতিপূর্বে দুইবার ওই পরিবারের জমাজমি সংক্রান্ত ঝামেলা হয়েছিলো আমি মিটিয়ে দিয়েছিলাম।

ক্ষেতলাল থনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিবুল ইসলাম জানান, আদালত থেকে নজরুল সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত দিয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷

জানুয়ারি ২২, ২০২৩ at ১৭:৫৯:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস