চাকরি না পেয়ে হতাশায় চৌগাছায় জাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ছবি: সংগৃহীত

চাকরি না পেয়ে এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে হতাশাগ্রস্থ হয়ে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান (২৭)।

হাবিবুর যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের জলকার-মাধবপুর গ্রামের মৃত আয়নাল হকের ছেলে। সম্প্রতি রেজাল্ট হওয়া প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে ভাইভা দিয়েছিলেন। তবে প্রতিবন্ধী কোটা থাকলেও চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হননি তিনি তবে বন্ধুদের চাকরি হয়েছে।

এনিয়ে তার মধ্যে হতাশা ছিলো। শুক্রবার (২০ জানুয়ারী) দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে গ্রামে নিজেদের দোতলা বসতবাড়ির শয়নকক্ষের পাশের রুমে ফ্যানের হুকের সাথে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরে পরিবারের সদস্য এবং গ্রামবাসীর অনুরোধ ও আবেদনের প্রেক্ষিতে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেয়া হয়।

আরো পড়ুন:
> ফুলের রাজ্যে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর পদচারণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ফুল উৎসব
> সরকার দেশকে আওয়ামী লীগের দেশ বানাতে চায়, ঠাকুরগাঁওয়ে- মির্জা ফখরুল

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয়নুল ইসলাম।

নিহতের বড়ভাই আনিছুর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে এসআই জানান, চাকারি না পাওয়ার হতাশা থেকেই হাবিবুর রহমান আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া অন্য কোনো কারন পাওয়া যায়নি। পুলিশের সব রিপোর্টেও সেটাই লেখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর ১টা ১৫ থেকে ২০মিনিটের মধ্যে হাবিবুরদের গ্রামের দোতলা বাড়িতে শয়নকক্ষের পাশের কক্ষে বৈদ্যুতিক পাখার হুকের সাথে গলায় রশি দিয়ে ঝুলতে দেখে প্রথমে তার ভাতিজি চিৎকার-চেচামেচি শুরু করে। পরে পরিবারের সদস্যরা এসে রশি কেটে নামিয়ে দেখেন হাবিবুরের মৃত্যু হয়েছে।

সংবাদ পেয়ে চৌগাছা থানার ওসি (তদন্ত) ইয়াসিন আলম চৌধুরী এবং পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয়নুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যান। সেখানের পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামের লোকজনের অনুরোধে এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশটি দাফনের অনুমতি দেয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

তবে চাকরি না পেয়েই সে আত্মহত্যা করেছে এটা অস্বীকার করে হাবিবুরের বড় (পরিবারের ৪র্থ) ভাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) থেকে মাস্টার্স শেষ করা (এখনো চাকরি পাননি) মাহবুব রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ওর (হাবিবুর) একটা চোখ নষ্ট। ও সব সময় এজন্য মানুষ থেকে দূরে থাকতো। এরপরে পড়ালেখা করতে করতে আরেকটা চোখে মারাত্মক ব্যাথা শুরু হয়। ও বাড়িতে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যেতে বলেছিলো। সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট-ভিসা করার প্রক্রিয়াও চলছিলো।

এরমধ্যে প্রাথমিকের রেজাল্ট দেয়ার পর চাকরি না হওয়ায় প্রচন্ড লেখাপড়া করতে শুরু করলে চোখের ব্যথা আরো বেড়ে যাওয়ায় সে ভয় পেয়ে যায় যে আরেকটা চোখও হয়তো নষ্ঠ হয়ে যাবে। তাছাড়া শহরে থাকা মানুষ করোনার জন্য গ্রামে আছে। সাইক্লোজিক্যাল একটা বিষয় আছে না? সবমিলিয়ে সে এ ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে।

তিনি বলেন, আমরা ৫ ভাই, ২ বোনের মধ্যে হাবিবুর সবার ছোট। সে ২০১২ সালে এসএসসি ২০১৪ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বছরখানেক আগে তার লেখাপড়া শেষ হয়। তিনি আরো বলেন, ওর আরো সুযোগ ছিলো বয়সও ছিলো।

আমি নিজেই এখনো চাকুরি পাইনি। আমি এসআইতে টিকেছি, সিটি কর্পোরেশনের ইন্সপেক্টরে টিকেছি। চাকুরি পাইনি। আমি তো ওর বড় ভাই। আমি বিশ্বাস করি আমি চাকরি পাবো। ও তো প্রথমবার প্রাইমারিতে টিকেছিলো। ও আরো ভালো চাকরি পেতো।

কারণ ওর প্রতিবন্ধী সনদও রয়েছে। কাজেই গ্রামের লোক যে বলছে প্রাইমারীর চাকুরি না পেয়েই সে আত্মহত্যা করেছে এটা সঠিক নয়। চৌগাছা থানার (ওসি) তদন্ত ইয়াসিন আলম চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরিবারের সদস্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

জানুয়ারি ২১, ২০২৩ at ২০:৫১:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস